এমন অনেক সমস্যা আছে, যা কাউকে বলা যায় না। এ রকম প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন সারা যাকের। ১৫ দিন অন্তর সুবন্ধু সমীপেষু কলামে চিঠি লিখুন সাদা কাগজের এক পিঠে সংক্ষেপে, ঠিকানাসহ। চিঠি পাঠানোর ঠিকানা :
সুবন্ধু সমীপেষু, নকশা, প্রথম আলো
সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
আমি এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। প্রি-টেস্ট পরীক্ষার আগে মা-বাবা পছন্দ করে আমার বিয়ে দেন। কিন্তু নতুন পরিবেশে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারি না। শ্বশুরবাড়ি থাকলে বাবার বাড়ি যেতে ইচ্ছে করে আবার বাবার বাড়ি থাকলে শ্বশুড়বাড়ি যেতে মন চায়। স্বামী আমার থেকে উচ্চতায় খাটো। কিন্তু বিয়ের পরও তাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছি। ভালোই কাটছিল। হঠাৎ করে গত ঈদের আগে অসুস্থ হই। মানসিক অবস্থাও খারাপ হয়। সেই অবস্থায় আমি শ্বশুরবাড়ি যাই। সেখান থেকে শ্বশুরের ১০ হাজার টাকা আমি চুরি করি। বিয়ের আগে আমার চুরির অভ্যাস ছিল না। পরে আমি তাকে সব খুলে বলি। সে অবিশ্বাস করে আমাকে। যখন চুরি করি, তখন আমার মাথা ঠিক ছিল না। এখন টাকা দিয়ে দেব। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির লোকেরা যেভাবে ফোনে কথা বলে, তাতে মনে হয়, তারা আমাকে রাখবে না। স্বামী খুব জেদি। এ অবস্থায় আমি কী করতে পারি?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
বরিশাল সদর রোড।
এ ধরনের মর্মান্তিক অবস্থা বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবার মেনে নিতে পারে না। যদি তোমার পরিবার বোঝে যে তোমার চিকিৎসা দরকার এবং তারা সেই পথে যাচ্ছে, সেটা তোমার ভাগ্যের ব্যাপার। তোমার শ্বশুরবাড়ি থেকে একই রকম ব্যবহার প্রত্যাশা করো না। ধরে নাও, তোমার এ ব্যাধির জন্য কিছু ভুগতে হবে।
আমি এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী। ১০ বছর ধরে বাংলাদেশে থাকছি। আমার বাবা-মা যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। বাবা আমাকে বাংলার সংস্কৃতি শেখানোর জন্য দুই বছর বয়সে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। আমার মা জানতেন না যে আমি চিরদিনের জন্য তাঁর কোল থেকে বিদায় নিচ্ছি। মা ভেবেছিলেন কিছুদিন ঘুরে ঠিকই আমার কাছে চলে আসবে। কিন্তু তা আর হলো না। বাবা আমাকে তাঁর বোনের কাছে রেখে দেন। আমার বাবার বোনের কোনো সন্তান নেই। তিনি আমাকে অনেক আদর করেন, কিন্তু আমি তাতে কোনো তৃপ্তি পাই না। দুই বছর অন্তর আমার বাবা-মা আমাকে দেখতে আসেন। যেদিন আমার বাবা-মা আমাকে দেখতে আসেন সেদিন আমার কাছে ঈদের দিন মনে হয়। কিন্তু তার পর তাঁরা চলে যান। এখন আমার কথা হলো, আমি যেখানে থাকি তাঁরা আমাকে অনেক ভালোবাসেন। আর আমার বাবা-মা আমাকে অনেক ভালোবাসেন। এখন আমি আমার দেশে ফিরে যেতে চাই। কিন্তু তাঁদের রেখে কীভাবে যাই?
সুমি, উত্তর গোড়ান, ঢাকা
তোমার ফুপুও তোমাকে ভালোবাসেন। তোমার বাবা-মা তো বটেই। অনেকে মেয়ে বিদেশে বড় করতে চান না। পাশ্চাত্য দেশ তো অনেক পারমিসিভ, হয়তো বা সে জন্যই।
তুমি কি তোমার মনের কথা তোমার মা-বাবা ও ফুপু কাউকে বলেছ? কথার মাধ্যমে অনেক কিছু সমাধান হয়। তুমি কথা বলে দেখ।
আমি উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্রী। আমি যখন অনেক ছোট তখন আমার ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া হলে আমার মা সব সময় ভাইয়েরই পক্ষে থাকতেন। সে সময় থেকেই মায়ের প্রতি আমার এক ধরনের ক্ষোভ জন্মে। আমি তাঁকে নানাভাবে কষ্ট দেওয়ার চেষ্টা করতাম। এসবের জের ধরেই আমি যখন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী তখন ইচ্ছা করেই আমার চেয়ে তিন বছরের বড় একটি ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলি। আমি যখন নবম শ্রেণীতে উঠলাম তখন বুুঝতে পারলাম আমি এখন সত্যিই তাকে ভালোবাসি। এর কিছুদিন পরই ও আমাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। আমি প্রথমে রাজি না হলেও হঠাৎ একদিন বাসায় মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে ওকে বিয়ে করে ফেলি। তবে নিবন্ধন হয়নি। তারপর আমি একসময় অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ি। আমরা দুজনে মিলে ঠিক করি সন্তানটা নেব। কিন্তু সে সময়ই আমি আরেকটা ছেলের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ি এবং উপলব্ধি করি আগেরজনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা আর সম্ভব না। তাই আমি তাকে অনেক বুঝিয়ে অ্যাবরশন করিয়ে ফেলি। এতে সে অনেক কান্নাকাটি করে। আর এর কয়েক দিন পরই আমি তাকে জানিয়ে দিই যে তার সঙ্গে আমার আর সম্পর্ক রাখা সম্ভব নয়। এতে সে খুব রেগে যায় এবং এখন আমাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। এবং বলছে পরের জনকে সব বলে দেবে। কিন্তু পরের জনকে আমি খুব ভালোবাসি, ওকে ছাড়া আমি বাঁচব না। এখন আমি কী করতে পারি? পরের জনের সঙ্গে আমার তিন মাসের সম্পর্ক। তবে কখনো শারীরিক সম্পর্ক হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
রংপুর।
এত অল্প বয়সে বোঝা মুশকিল যে তুমি সত্যি সত্যি কাকে ভালোবাসো। তা ছাড়া প্রথমেই তোমার মা তোমার ভাইকে ভালোবাসেন, এ রকম দোহাই দিয়ে একখানা বিয়ে করে বসেছ।
তুমি একটু স্থির হও।
এই দ্বিতীয় সম্পর্ক তৈরি করার আগে একটু ভেবে দেখো।
মাঝেমধ্যে ব্রেক কষা প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২৩, ২০১০
Leave a Reply