‘বসন্ত বাতাসে সই গো বসন্ত বাতাসে, বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে…’ চলছে ঋতুরাজ বসন্তের পালা। তবে বসন্তের স্নিগ্ধ সময়ে বাড়ে ধুলোবালির ঝামেলাও। ঘরের কোনায় জমতে শুরু করে ধুলোবালির স্তর।
এখন স্থপতিরা ঘর দক্ষিণমুখী করে গড়ে তোলেন। কিন্তু ঘর দক্ষিণমুখী হলে এতে ধুলো আসার সম্ভাবনা বেড়ে যায়—বলছিলেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ফিরোজা সুলতানা। তাই বলে কি ঘর অপরিষ্কার ধুলোময় হয়ে থাকবে! ঘর ধুলোবালিমুক্ত করে রাখতে হলে কী করণীয় সে সম্পর্কে বলছিলেন তিনি।
জেনে নিন
জানালা ও দরজায় ভারী পর্দা ব্যবহার করতে হবে, যাতে ঘরে ধুলোবালি সহজে ঢুকতে না পারে।
মেঝেতে প্রতিদিন পানির ছিটা দিয়ে পরিষ্কার কাপড় ঘরের প্রতিটি কোনা মুছে ফেলতে হবে। যাতে ধুলো জমে পুরু না হয়ে থাকে। রোগজীবাণুমুক্ত রাখতে হলে সপ্তাহে অন্তত দু-তিন দিন ডেটল, স্যাভলন-জাতীয় জীবাণুনাশক পানির সঙ্গে মিশিয়ে ঘর মুছতে হবে।
প্রতিদিন ঝাড়ু দিয়ে মেঝে পরিষ্কার করতে হবে। কার্পেট ব্যবহার করলে ব্রাশ দিয়ে তা ঝাড়তে হবে। কার্পেটের ধুলা থেকে অ্যালার্জিসহ নানা সমস্যা হতে পারে।
ঘরের আসবাবপত্র প্রতিদিন শুকনো ও পাতলা ঝাড়ন দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। বাজারে পরিষ্কার মুরগির পালকের ঝাড়ন রয়েছে সেগুলোও ব্যবহার করা যাবে।
কাচের আসবাব ও শোপিস মোছার জন্য বিশেষ তরল পাওয়া যায়। সেগুলো দিয়ে কিছুদিন পরপর তা পরিষ্কার করতে হবে। ক্রিস্টালের শোপিসও একই তরল দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। মাটির সামগ্রী পরিষ্কারের জন্য নরম ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে মাটির তৈরি যেসব সামগ্রীতে আল্পনা করা থাকে সেগুলো পরিষ্কার করে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে ফেলতে হবে। পিতলের তৈরি ঘর সাজানোর জিনিসও শুকনো ঝাড়ন দিয়ে মুছে ফেলতে হবে।
কাচের ব্যবহূত সামগ্রী যেমন বাসনকোসন, ডিশ প্রভৃতি অবশ্যই নরম ডিটারজেন্ট কিংবা ভিমবার দিয়ে ধুয়ে বাতাসে শুকিয়ে কাপড় দিয়ে মুছে র্যাকে কিংবা শোকেসে রেখে দিতে হবে।
কাঠের তৈরি জিনিসপত্র কখনোই পানি দিয়ে পরিষ্কার করা যাবে না। অবশ্যই শুকনো ঝাড়ন দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। তবে অটবির তৈরি কাঠের আসবাবপত্র তরল পরিষ্কারক দিয়ে পরিষ্কার করা যায়।
ঘর সাজানোর কৃত্রিম ফুলেও জমে থাকতে পারে ধুলো। তাই সপ্তাহে অন্তত এক দিন তা শ্যাম্পু কিংবা ডিটারজেন্টের পানিতে ভিজিয়ে তারপর পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রাখতে হবে।
গদিওয়ালা আসবাব পরিষ্কার রাখার জন্য ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করা যেতে পারে।
টেলিভিশনের স্ক্রিন, বইয়ের আলমারি—এসব শুকনো কাপড় দিয়ে মুছতে হবে। রেফ্রিজারেটর পরিষ্কারের জন্য ডিটারজেন্ট পাউডার ব্যবহার করে পরিষ্কার ঝাড়ন দিয়ে মুছতে হবে।
তরল পরিষ্কারক দিয়ে থাই গ্লাস মোছা যেতে পারে।
লক্ষ রাখবেন
লোহার জিনিস বিশেষ করে রড আয়রনের জিনিসপত্রে পানি দিয়ে পরিষ্কার করা যাবে না। কেননা তাতে মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
ঘরের জানালায় বড় পর্দা ব্যবহার করতে হবে, যাতে ঘরে ধুলো না জমে।
দৈনিক কমপক্ষে একবার ঘরের প্রতিটি জিনিস পরিষ্কার করতে হবে। আর যাদের বাসা রাস্তার পাশে তাদের দিনে অন্তত দুবার ঘরের সব সামগ্রী পরিষ্কার করতে হবে।
কাচের তৈরি জিনিস চকচকে করে রাখতে হলে লিকুইড ক্লিনার ব্যবহারের পর অবশ্যই শুকনো কাপড় দিয়ে মুছতে হবে।
বিছানার চাদর, সোফার কভার, কুশন কভার, টেবিলের কভার ১৫ দিনে অন্তত একবার ধুয়ে পরিষ্কার রাখতে হয়। আর শিশুদের ঘরের জিনিসপত্র সপ্তাহে অন্তত দুবার ধোয়া ভালো।
ঘরকে ধুলোবালিমুক্ত করতে বিভিন্ন মার্কেটে পাওয়া যায় ঝাড়ন। হতে পারে কাপড়ের ঝাড়ন, ব্রাশের ঝাড়ন, বেতের তৈরি মুরগির পালকের ঝাড়ন। ঢাকার গাউছিয়া, নিউমার্কেট, আগোরা সুপার শপ, মৌচাক মার্কেট প্রভৃতিতে পাওয়া যায় ঝাড়ন।
নাঈমা আমিন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ০৯, ২০১০
Leave a Reply