দেশের বিজ্ঞাপনশিল্প কতটা অগ্রসর হয়েছে বলে আপনি মনে করেন?
আমাদের দেশের বিজ্ঞাপনশিল্প বর্তমানে অনেক পরিণত। গত দশ বছরে এই শিল্প যতখানি এগিয়েছে, তার আগে দীর্ঘ সময়েও এতখানি এগোয়নি। এদেশেই এখন বিশ্ব মানের বিজ্ঞাপন তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে ভোক্তার চাহিদা এবং পছন্দের দিকে লক্ষ্য রেখে বিজ্ঞাপন নির্মাণ করা হচ্ছে। একটা সময় আমাদের ক্লায়েন্টদের কাছে যেতে হতো। তাদেরকে বোঝাতে হতো বিজ্ঞাপনটা কেন জরুরি। এখন বিজ্ঞাপন সম্পর্কে সবারই ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। এদেশে এখন দেশী প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বেশ কিছু বহুজাতিক বিজ্ঞাপনী সংস্থা সাফল্যের সাথে কাজ করায় এক্ষেত্রে গুণগত এবং পেশাগত মানের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ব্যক্তি বা পরিবার কেন্দ্রিক ব্যবসার ধারণা ভেঙে বিজ্ঞাপন শিল্প এদেশে এখন অনেক বেশি পেশাগত অবস্থানে এসেছে।
নতুনদের কাছে অ্যাড ফার্মে কাজ করা সখ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের অ্যাড ফার্মগুলো জবের ক্ষেত্রে কতটা সুবিধাজনক?
আমি এটাকে ঠিক সখ বলব না। তরুণরা এখন অ্যাডফার্মে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য বেশ আগ্রহী। যেকোনো উদ্যমী, ক্রিয়েটিভ ব্যক্তি যার মধ্যে চ্যালেঞ্জ নেবার মানসিকতা আছে, তার কাছে এ পেশায় কাজ করাটা আকর্ষণীয় মনে হবে। কেননা এখানে বহুমুখী কাজ করতে হয়। এটা বিজ্ঞাপনের যুগ। সবাই এ কথা মানেন। আর অ্যাডফার্ম সেই ধরনের প্রতিষ্ঠান যাদের কাজ হচ্ছে পণ্যকে গ্রাহকের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা। এ কাজটি করে বলেই অ্যাডফার্মগুলো উঠে আসছে। এছাড়াও জবের ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় সুবিধা দিতে প্রস্তুত বলেই তরুণরা অ্যাডফার্মে কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছে। আর একটি কথা বলতে চাই তা হলো, শিক্ষিত ও ক্রিয়েটিভদের এখানে উন্নতি করার যথেষ্ট সুযোগ আছে। আর বহুজাতিক অ্যাডফার্ম হওয়ায় আমরা অন্যান্যদের তুলনায় একজন এম্প্লয়ীর জব সিকিউরিটি থেকে শুরু করে প্রোফাইল আপডেট প্রতিটি বিষয়েই একটি আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার চেষ্টা করি, যা তাকে একটি হাই-প্রোফাইল প্রতিষ্ঠানে কাজ করার মানসিক সন্তুষ্টি দেয়।
বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে, এই সেক্টরে ইয়াং ফেসগুলো লীড করছে। এর পেছনের মুখ্য কারণ সম্পর্কে আপনার মতামত জানতে চাই
বিজ্ঞাপন-এ ক্যরিয়ার গড়ার আগ্রহ থেকেই স্বেচ্ছায় তরুণরা এই পেশায় আসছে। যেমন আমি আগে ইউনিলিভারে ছিলাম। ওই রকম স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ছেড়ে এখানে এসেছি আরো ভাল কিছু করতে। বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশই বয়সে তরুণ। প্রতিটি পেশায় এখন তরুণদের জয়জয়কার। সময়ের সাথে সাথে পেশাগত দক্ষতা অর্জনের কারণেই এখন তরুণ মুখগুলো চলে আসছে সবার আগে। এটা সময়ের পালাবদল ছাড়া অন্য কিছু নয়।
ফ্রেশ হ্যান্ড নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে করপোরেট লেভেলে কী সমস্যা হয় বা এর নেতিবাচক দিক কী?
ফ্রেশ হ্যান্ড নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রেও যে ঝামেলা হয় না তাতো নয়। তাদেরকে অনেক বেশি শিখিয়ে-পড়িয়ে নিতে হয়। আমাদের দেশে অ্যাডভারটাইজিং-এর জন্য প্রফেশনাল ডিগ্রির কোনো সুযোগ নেই। বিদেশে এর ওপর উচ্চতর ডিগ্রি নেয়া যায়। এই শিল্পে ফ্রেশ আইডিয়ার দরকার হয়। আমি বিশ্বাস করি যে, ফ্রেশাররা কাজ করার সুযোগ পেলে নিজস্ব মেধা এবং আত্মবিশ্বাসে সামনে এগিয়ে যেতে পারে। কারণ এখনকার জেনারেশন অনেক আধুনিক, স্মার্ট এবং সমসাময়িক বিষয় সম্পর্কে অনেক সচেতন।
আগের চেয়ে এখন অফিসের পরিবেশ অনেক বদলে গেছে। এ ধারার সঙ্গে আপনি কতটা একমত?
আগের চেয়ে এই শিল্পের পরিবেশ অনেক বদলে গেছে। এখানকার কাজের ক্ষেত্রটি একদিকে যেমন খুবই প্রফেশনাল এবং পাশাপাশি বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের কারণে এ পেশায় কাজ করাটা সবাই বেশ এনজয় করে।
একজন চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে আপনাকে প্রতিদিন কী কী কাজ করতে হয়?
একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য রয়েছে। আমার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো এ বিষয়টি সবাইকে অনুধাবন করানো। এটি একটি টিমওয়ার্ক। আর সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হলে আমাদের সবাইকেই যার যার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। আর এই বিষয়টি লক্ষ্য রাখাই আমার প্রতিদিনকার চ্যালেঞ্জ।
আপনি কীভাবে এ পেশায় এলেন? এ পেশায় ভাল করার জন্য তরুণদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন
সৃজনশীল পেশায় কাজ করতে আগ্রহী ছিলাম বলেই আমি পুরোপুরি বিজ্ঞাপনশিল্পের সাথে জড়িয়ে গেছি। আমি মনে করি এই পেশা তরুণদের জন্যই। আমি তাদেরকে অবশ্যই এই পেশায় আসার জন্য বলবো। যারা কাজ পাগল, নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী এই পেশা তাদের জন্য।
আপনার করপোরেট দর্শন কী? কাজের ক্ষেত্রে আপনি কী কী সূত্র মেনে চলেন?
প্রথমেই আমি জোর দিতে চাই সততার উপর। তারপর প্রফেশনালিজম। আমি ভোক্তাকে যে পণ্যটার বিজ্ঞাপন করছি সেই পণ্যটা কতখানি ভালো সে সম্পর্কে আমার নিজেরও সম্যক ধারণা থাকতে হবে এবং আমাকে বিশ্বাস রাখতে হবে যে সেরা পণ্যটিই আমি ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিচ্ছি। পেশাগত এই সততাটুকু থাকতে হবে।
পার্থ সালাহ্উদ্দিন
চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার
ওগিলভি অ্যান্ড ম্যাথার কমিউনিকেশনস্ প্রাইভেট লিমিটেড
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খালেদ আহমেদ
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ফেব্রুয়ারী ২৪, ২০১০
Leave a Reply