তারুণ্যের বসন্ত ঝড়া দিনগুলো আমাকে এখনো পিছু টানে। বোধকরি হৃদয় নিংড়ানো এই স্মৃতির কথা সকলকেই কম-বেশি পিছু টানে, অজান্তেই নিয়ে যায় সুদূর অতীতে। আমি অন্যদের কথা জানি না, তবে আমার তারুণ্য বেলা আমাকে দিয়েছে নানামুখী অভিজ্ঞতা এবং সেই অভিজ্ঞতাই আমাকে শিখিয়েছে-ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত নিতে। সময়ের এই সঠিক সিদ্ধান্ত আমাকে দিয়েছে একজন আদর্শ জীবন সঙ্গী নির্বাচন করতে এবং চিকিৎসা শিক্ষার মতো একটি আদর্শ বিষয়ে পড়াশুনা ও চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে নিষ্ঠা ও শ্রম দিয়ে টিকে থাকার ধৈর্য ও চূড়ান্ত সাফল্যের আনন্দে অবগাহনের সুযোগ। একজন সফল মানুষের আর কী প্রয়োজন?
তবে তারুণ্য যেমন টক-ঝাল হয়, তেমনি হতে পারে তেতোও! তানা হলে শেখার সুযোগ কোথায়? বাধ না মানা তারুণ্যের রাশ টানতে যে ব্যর্থ হবে তার জন্য তারুণ্য হবে সর্বনাশের। আর যে কিনা স্বীয় বিবেচনা ও দায়িত্বে তারুণ্য নামক দুরন্ত অশ্বের রাশ সময়মতো টেনে ধরতে সক্ষম, তার জন্য তারুণ্যকে কিছু সময় ধরে তেতো মনে হলেও সুন্দর এবং বিমোহীত ভবিষ্যতের জন্য ঐ তেতো তারুণ্যই সমগ্র জীবনকে করবে-কখনো টক, কখনো ঝাল এবং সর্বোপরি সুখময়। যদি আর একটু ভেঙ্গে বলি তাহলে বলতে হয় তারুণ্যের উজ্জ্বল সময়টা কেবল উচ্ছলতায় অর্থাৎ আড্ডায় আড্ডায় পার করে দিলে পড়াশুনা হবে না, আর পড়াশুনা না হলে একটানা স্বাধীন তারুণ্য একসময় অন্ধকার ভবিষ্যৎ ভাবনায় তেতো মনে হবে। অনেকের ধারণা সব কিছু আর্থিক সচ্ছলতার উপর নির্ভরশীল। না বিষয়টি তেমন নয়। বিষয়টি নিজ অবস্থান বুঝে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার উপর অধিকাংশ নির্ভরশীল। যে ছেলেটির পরিবার সচ্ছল সে অর্থ পেয়ে গড্ডলিকা প্রবাহে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই প্রায় শতভাগ, যদি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ তথা বিবেচনা না থাকে, তবে আর্থিক অসচ্ছলতা অনেক সময়ই মনোবল ভেঙ্গে দিতে এবং অনেক প্রতিবন্ধকতার কারণ হলেও এটি স্বীয় চেষ্টায় সফল হওয়ার জন্য একটি চ্যলেঞ্জ বলা যেতে পারে, যা জীবনে সফল হতে অনেক সময় বড় ভূমিকা রাখে। যে উপসর্গ বা সুযোগটি আর্থিক সচ্ছলদের নেই। তবে সবার জীবন ও বাস্তবতা একরকম নয়। ফলে যার যার অবস্থান থেকে নিজেকে গড়ে তুলতে চেষ্টা করতে হবে তরুণ বয়সেই। কারণ এ বয়সেই সাফল্যের সড়কে প্রয়োজনীয় গতিতে নিজেকে ধরে রেখে এগিয়ে নেয়ার মোক্ষম সময়।
আমার জন্ম কোনো সচ্ছল পরিবারের হয়নি এবং অনেক সফল মানুষ আছেন যাদের জন্ম অত্যন্ত অসচ্ছল পরিবারে। যাহোক আমি আমার কথাই বলি, আমি আজ একজন সুপরিচিত চিকিৎসক এবং পাশাপাশি আমি একটি অতি পরিচিত হসিপিটাল ও মেডিক্যাল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চেয়াম্যান। যদিও আমি অগাধ অর্থ সম্পদের মালিক নই এবং এ ব্যাপারে আমি ব্যতিব্যস্তও নই। তবে আমার আগ্রহ; দেশের মানুষের উন্নত চিকিৎসার জন্য উন্নত হসপিটাল নির্মাণ তথা সীমিত ব্যয়ে স্বাভাবিক স্বাস্থ্য সেবার উন্নত ব্যবস্থা করা। যে পথে আমি ধাবমান। ফলে এই অর্থে আমি সাফল্যের পথে হাঁটছি। এই উদাহরণের মধ্য দিয়ে আজকের তরুণদের আমি বলতে চাই, তোমরা সময় এর মূল্যায়ন করে তারুণ্যে উচ্ছলতার পাশাপাপশি মূল দায়-দায়িত্বগুলোকে মনেপ্রাণে লালন-পালন করলে তারুণ্যের মুহূর্তগুলো টক-ঝাল এবং তেতো যাই হোক, সারা জীবন তা উপভোগ্য মনে হবে এবং জীবনে সফল হবে। একটি কথা স্মরণ রাখবে; একজন মানুষ এর নিজের যা কিছু আছে, তা হলো তার মেধা আর চার হাত-পা। আর অর্থ সম্পদ, পিতা-মাতা সহযোগী মাত্র! যা তুচ্ছ, নিষ্ফল, যদি নিজ ইচ্ছা শক্তি, ধৈর্য ও নিষ্ঠা না থাকে।
ডা. মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন
শিশু বিশেষজ্ঞ ও সার্জন- আইচি হসপিটাল,
চেয়ারম্যান-ইস্ট-ওয়েস্ট
মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতাল
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ফেব্রুয়ারী ২৪, ২০১০
Leave a Reply