ছোট্ট আবির। চকলেট, মায়ের বকুনি আর ফিডার খাওয়ার চেয়ে তার অনেক বেশি পছন্দ আঙুল চোষা। ঘুম, খেলা, কার্টুন দেখাসহ সব কাজের সময়ই মুখের ভেতর বুড়ো আঙুলটা পুরে দেওয়া চাই। মা বহু চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারছেন না নিধির এ অভ্যাস।
নিধির মতো অনেক বাচ্চারই দেখা যায় আঙুল চোষার এ বদভ্যাস। শুধু আঙুল চোষাই নয়, নাক খোঁটা, চুল টানা, কলম কামড়ানো, দাঁত দিয়ে নখ কাটা, মাটি খাওয়া এগুলোও অনেক শিশুর ক্ষেত্রে দেখা যায়।
শিশুর বদভ্যাসের কারণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান শামীম এফ করিম বলেন, ‘বাচ্চাদের চাহিদাগুলো ঠিকমতো পূরণ না হলে অর্থাত্ কিছুটা অপ্রাপ্তি থেকে শিশুর এই খারাপ অভ্যাসগুলো হতে পারে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে শিশুদের মনোযোগ আকর্ষণ করার বিষয়টি। শিশু আসলে মা-বাবার মনোযোগ চায়। যখন সে দেখে তার বদভ্যাসগুলো ছাড়ানোর জন্য মা-বাবা তার প্রতি বাড়তি মনোযোগ দিচ্ছে, তখন সে ইচ্ছা করেই বিষয়টি বারবার করে।’
আবার অনেক পরিবারেই দেখা যায়, মা-বাবা শিশুকে ঠিকমতো সময় দিতে পারছেন না তখন শিশু যাদের কাছে থাকে তাদের নখ কামড়ানো বা নাক খোঁটা—এ ধরনের কোনো আচরণ দেখে সেটি অনুকরণ করে এবং যা তার অভ্যাসে পরিণত হয়।
তা ছাড়া পরিবারে মা-বাবার মধ্যে কলহ চললে শিশু নিরাপত্তাহীনতায় আঙুল চোষে ও মাথার চুল টানে। তা একসময় তার অভ্যাসে পরিণত হয়।
অভ্যাসগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
শিশুদের এ বদভ্যাসগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। বিশেষ করে দাঁতে নখ কাটা, মাটি খাওয়া, আঙুল চোষা খুবই বিপজ্জনক। শিশুদের এর ফলে প্রায়ই শরীর খারাপ হয়। নখের ময়লা পেটে ঢুকে কৃমি হতে পারে, পেটে গন্ডগোলও হয় বললেন গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের প্রধান মেসবাহ উদ্দীন আহমেদ।
বদভ্যাস ছাড়াতে
শিশুরা এ বদভ্যাসগুলোর মধ্যে একধরনের আরাম ও শান্তি পায়। তাই বারণ করা সত্ত্বেও শিশুরা সযত্নে এ বদভ্যাস জিইয়ে রাখতে পছন্দ করে। শিশুদের এ বদভ্যাসগুলো আপনার যতই খারাপ লাগুক কখনোই এ জন্য তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার, ধমক বা মারধর করা যাবে না। এতে এটি আরও বেড়ে যেতে পারে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মা-বাবার সঙ্গে শিশুর যোগাযোগ। শিশু যেন কখনোই নিরাপত্তাহীনতায় না ভোগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুর প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। শিশুর সব ভালো কাজে উত্সাহ দেওয়া জরুরি। কোনো ভালো কাজ করলে পুরস্কার দেওয়া যেতে পারে। পুরস্কারটা যে সবসময় চকলেট বা কোনো জিনিস হতে হবে তা নয়, বরং ‘বাহ, খুব ভালো’, ‘দারুণ হয়েছে’—এ ধরনের প্রশংসা করলেও সে খুশি হয়ে ওঠে। যখন সে এভাবে মনোযোগ পাবে তখন খারাপ কোনো অভ্যাসের মাধ্যমে মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করবে না।
শিশুদের আঙুল চোষা, নখ খাওয়াটা অনেক সময় একদম বদভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। তখন চিকিত্সকেরা অনেক সময় চুষনি দিতে বলেন। শিশু যখন দেখে চুষনিটা আর মজা লাগছে না তখন সেটা নিজে নিজেই ফেলে দেয় এবং আঙুল চোষার অভ্যাসটাও ভুলে যায়।
শিশুরা যেহেতু অনুকরণপ্রিয়, তাই তাদের সামনে নখ কাটা, চুল টানা, নাক খোঁটা এগুলো থেকে বিরত থাকুন।
শিশুরা অনেক সময় কোনো কাজ নেই বলে এ বদভ্যাসগুলো আয়ত্ত করে। তাই শিশুকে ছবি আঁকা, খেলাধুলা এগুলোর মধ্যে ব্যস্ত রাখুন। মাঝেমধ্যে ছুটির দিনে বেড়িয়ে আসুন ঐতিহাসিক কোনো স্থান থেকে। শিশুর বদভ্যাসগুলো দূর করতে না পারলে এটি একসময় রোগ হয়ে যেতে পারে। তাই নিজের চেষ্টায় কাজ না হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। ১০-১২ বছরের মধ্যেও যদি এ বদভ্যাসগুলো না ছাড়ানো যায় সে ক্ষেত্রে মনোরোগবিজ্ঞানীর পরামর্শ নিয়ে শিশুদের প্রথমে কাউন্সেলিং ও পরে কগনিটিভ বিহেভিরিয়াল থেরাপি দিতে পারেন।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ২৩, ২০১০
Leave a Reply