উদ্বোধনের দিন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর সঙ্গে অন্যান্য অতিথি চারদিকেই এখন উৎসবের আমেজ। একদিকে ফাগুনের ডাকে বসন্তের হাতছানি, অন্যদিকে ভালোবাসা দিবস আর অমর একুশের বইমেলা যেন যোগ করেছে উৎসবের এক বাড়তি মাত্রা। উৎসবের সেই নৌকার পালে আরও খানিকটা হাওয়া লাগিয়ে দেয় আজিজ সুপার মার্কেটের টি-শার্ট উত্সব। শত শত টি-শার্টে ফুটে ওঠে দেশ, মাটি ও মানুষের ছবি; রবীন্দ্রনাথ, নজরুল কিংবা বিপ্লবী চে গুয়েভারার মুখাবয়ব। কবিতার লাইন, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার নিপাত যাক, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই, নদী ও সবুজ বাঁচান প্রভৃতি স্লোগানে সাজানো হয় টি-শার্টের জমিন। ১১ থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার শাহবাগের আজিজ কো-অপারেটিভ মার্কেটে হয়ে গেল বাংলাদেশ টি-শার্ট উৎসব ২০১০। দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজিত এ টি-শার্ট উৎসবের স্লোগান ছিল ‘টি-শার্ট জীবনের চলমান ক্যানভাস’। প্রায় ৮০টি ফ্যাশন হাউস অংশ নেয় এই উত্সবে। মেলার উদ্বোধন করেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। তিনি বলেন, উৎসবের এ টি-শার্টগুলো আমাদের দেশের সংস্কৃতি ও ক্যালিগ্রাফির সমন্বয়ে অনেক বেশি দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে এবং এখানে ক্যানভাসের মতো করে সারা দেশকে দেখা যাচ্ছে।
উৎসব শুরুর প্রথম দিন থেকেই বিভিন্ন বয়সের মানুষের পদচারণে মুখরিত হয়ে ওঠে উৎসব প্রাঙ্গণ। বিশেষ করে তরুণদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে উৎসবকেন্দ্রিক টি-শার্টের প্রতি তাদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি বলে জানালেন ফ্যাশন হাউস পঙিক্তর স্বত্বাধিকারী আবদুল্লাহ আল আমিন। সামনের বছরগুলোতে এ উৎসব আরও ভালো হবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। উৎসবে এসে অনেক টি-শার্ট কিনছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রায়হান হোসেন। তিনি জানান, উৎসবে একসঙ্গে অনেক টি-শার্ট পাওয়া যাচ্ছে, তাই দেখে-শুনে নিজের পছন্দমতো কিনতে পারছি আর ২০ শতাংশ ছাড় থাকায় আরও বেশি সুবিধা হচ্ছে। উৎসবের দ্বিতীয় দিনে এসেছিলেন ডিজাইনার বিবি রাসেল। তিনি বলেন, আজিজ সুপার মার্কেটের এই টি-শার্টগুলো সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। এই টি-শার্ট উৎসব আরও বড় পরিসরে হওয়া উচিত। এবারের টি-শার্ট উৎসবের আহ্বায়ক বাহার রহমান জানালেন, মানুষ নিজেকে প্রকাশ করতে ভালোবাসে, নিজের স্বকীয়তা বজায় রাখতে চায় আর তার এক সহজ মাধ্যম হলো টি-শার্ট। টি-শার্টকে মানুষের আরও কাছাকাছি পৌঁছে দিতে এ উৎসব এক দারুণ ভূমিকা রাখবে। তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে এ উৎসব বড় পরিসরে করা হবে, তবে এটা কারও একার পক্ষে করা সম্ভব নয় তাই সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রতিদিনই উৎসব চলাকালীন টি-শার্ট নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক, গান ও ফ্যাশন শো অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঙ্গনের শিল্পী।
টি-শার্ট উৎসবে সহযোগিতা করেছে প্রথম আলো। টিভি ও রেডিও অংশীদার ছিল যথাক্রমে রেডিও এবিসি ও চ্যানেল আই।
উৎসবের তৃতীয় দিনে ‘বিষয়ভিত্তিক টি-শার্ট’ বিষয়ে বক্তব্য দেন ফ্যাশন ডিজাইন রুবী গজনবী, শেষ দিনে ‘আদি থেকে আজকের তারুণ্যের প্রতীক টি-শার্ট’ বিষয়ে বলেন চিত্রশিল্পী শিশির ভট্টাচার্য্য।
মোছাব্বের হোসেন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ১৬, ২০১০
Leave a Reply