আমি ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মান প্রথম বর্ষের ছাত্র। ছাত্রজীবন মোটামুটি কৃতিত্বপূর্ণ। কিন্তু বুঝতে শেখার পর থেকেই অর্থ উপার্জন করে সংসার চালাতে হচ্ছে। বাবা মারা গেছেন ১৯৯৮ সালে। সম্পত্তি বলতে কয়েক শতাংশের ভিটাবাড়ি। ছোট ভাই একাদশ শ্রেণীতে পড়ে এবং বোন এসএসসি পরীক্ষার্থী। খুব অল্প বয়সে ভালোবেসে বিয়ে করি। স্ত্রী সম্মান ২য় বর্ষের ছাত্রী। আমার স্ত্রী খুব ভালো মনের মানুষ। আমার একটা দুই বছরের ছেলেও আছে। স্ত্রী-সন্তান গ্রামে থাকে। অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে আমার এক বছর পড়া বন্ধ ছিল। পরিবারের সবার কথা ভেবে গ্রামে আমি কাজ করি। এতে আমার স্ত্রী খুব দুঃখ পায়। তার সাহায্যেই আমি ঢাকা আসি। এখানে একটা টিউশনি করি। আমার পড়ালেখা ভালোই চলছিল। কিন্তু এখন একটি টিউশনিও নেই। আমার খুব দুশ্চিন্তা হয়। মা, ভাইবোন, নিজের পড়ালেখা নিয়ে। রাতে ঘুম হয় না, খেতে পারি না। এমনকি ক্লাসে অনিয়মিত। মনে হয়, স্ত্রী-সন্তানের প্রতি অন্যায় করছি। আমার স্ত্রী কিছুই চায় না, শুধু চায় আমি যেন পড়ালেখা বন্ধ না করি। ইদানীং চাপ সইতে না পেরে মা, ভাইবোন, স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করি। স্ত্রীকে অকারণে আজেবাজে কথা বলে ফেলি। সে খুব দুঃখ পায়। আমারও ভীষণ খারাপ লাগে। পরে লজ্জা পাই। অনুতপ্ত হই। কিন্তু ঠিক বুঝে উঠতে পারি না মা, ভাইবোনের অন্ন-বস্ত্র, লেখাপড়ার খরচ জোগানো উচিত, নাকি স্বার্থপরের মতো নিজের জীবন গড়াটাই উচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
ঢাকা।
একটা সময় ছিল যখন পরিবারের দায়িত্ব নিতে, বাড়ির বড় ছেলে বা মেয়ে পড়াশোনা বন্ধ করে দিত। কিন্তু দেখা যায়, যারা এই আত্মত্যাগ করে, তাদের জীবনটা কষ্টে কাটে। আপনার স্ত্রী ঠিকই বলেছে, আপনি লেখাপড়া বন্ধ করবেন না, তাহলে কোথাও গিয়ে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকবে না। নিজে না দাঁড়াতে পারলে, অন্যদেরও তেমন লাভ হবে না। আপনি আপনার স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার একটা পথ বের করুন।
আমি প্রথম শ্রেণী থেকে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত ভালো ছাত্র ছিলাম না। পঞ্চম শ্রেণী থেকে আমি প্রথম স্থান অধিকার করা শুরু করলাম। আমার বন্ধুর সংখ্যাও বেড়ে গেল। ক্লাসে আমার সহপাঠী ছিল সুমি (ছদ্মনাম) নামের একটি মেয়ে। সে সময় থেকেই বন্ধুরা প্রেম, ভালোবাসার কথা বলত। কিন্তু আমি তাতে কান দিতাম না। একপর্যায়ে আমার ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু রটিয়ে দিল সুমির সঙ্গে নাকি আমার প্রেম। কিন্তু এসব ছিল সম্পূর্ণ বানোয়াট কথা। একসময় শিক্ষকদের অনেকেই জেনে যান এ কথা। স্যারদের কাছে বিনা কারণে অনেক মার খেয়েছি। ষষ্ঠ শ্রেণীতে একটি প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান হয় স্কুলে। তাতে প্রার্থী ছিল সুমি আর অন্য স্কুলের আর একটি ছেলে। নির্বাচনপর্ব ছিল ভোটের মাধ্যমে। আমি সুমিকে ভোট দিলাম। যেহেতু আমরা একই স্কুলে পড়ি। আমাদের ক্লাসের ছেলেরা সবাই অন্য স্কুলের ছেলেটিকে ভোট দেয়। এখন সবাই বলতে শুরু করে ও তো সুমির সঙ্গে প্রেম করে। তাই ওকে ভোট দিয়েছে। কিন্তু আমি ওকে ভোট দিয়েছি, একই স্কুলে আমরা পড়ে এসেছি তাই। সপ্তম শ্রেণীতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলো। বন্ধুদের ফাজলামিতে বিরক্ত হয়ে সুমি শিক্ষকদের কাছে অভিযোগ করল। এ কথা রটে গেল। আমার বাবাকেও স্কুল থেকে জানানো হলো। আমার আব্বা সেদিন এসে খুব বকল। কিন্তু আমি বলতে পারলাম না, এসব মিথ্যা কথা। কারণ মুখের কথা বিশ্বাস করানো ভার। আমাকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে। সবার চোখে আমি খারাপ হয়ে গেছি। আমি এখন কী করব?
সাইফুল
ঝিনাইদহ।
তুমি একটা ছোট মানুষ। মিছেমিছি একটা যন্ত্রণায়দক অবস্থার মধ্যে জড়িয়ে পড়েছ। আমি তোমার বাবা-মার অবস্থানে থাকলে তোমার ব্যাপারটা, তোমার কষ্টটা বোঝার চেষ্টা করতাম। ক্লাস সেভেনে পড়া একটা ছেলের একটা মেয়েকে ভালো লাগতেই পারে, আবার নাও লাগতে পারে। তুমি চিন্তা করো না, তুমি ছাত্র ভালো। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
এমন অনেক সমস্যা আছে যা কাউকে বলা যায় না।
এ রকম প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন সারা যাকের। ১৫ দিন অন্তর
সুবন্ধু সমীপেষু কলামে চিঠি লিখুন সাদা কাগজের এক পিঠে সংক্ষেপে, ঠিকানাসহ। চিঠি পাঠানোর ঠিকানা :
সুবন্ধু সমীপেষু, নকশা, প্রথম আলো
সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ১৬, ২০১০
Leave a Reply