১০ বছর প্রেম করার পর ২০০৪ সালে আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের শর্ত ছিল, ছয় মাসের মধ্যে তাকে আমার ঘরে আনতে হবে। পারিবারিক সমস্যার কারণে স্ত্রী ঘরে তুলতে পারিনি। কিন্তু তার সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো ছিল। তার যাবতীয় ভরণপোষণ আমি বহন করেছি। বিয়ের আট মাসের মধ্যে হঠাত্ করে পালিয়ে সে অন্য একটি ছেলেকে বিয়ে করে এবং ওই বিয়ের দিনই আমাকে তালাক দেয়। সাত দিন পর আমি তালাকের চিঠি পাই। আমার প্রশ্ন, ইদ্দতকাল শেষ না হতেই অন্য ছেলেকে সে বিয়ে করল কীভাবে? তার বিবাহ বৈধ হয়েছে কি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
শ্যামপুর, ঢাকা
মুসলিম আইনে কিছু বিয়ে অবৈধ ও কিছু বিয়ে অনিয়মিত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ইদ্দতকালে বিয়ে অনিয়মিত বিয়ের আওতায় পড়ে। অনিয়মিত বিয়ের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে স্বামী ও স্ত্রীর সম্পত্তিতে পারস্পরিক অধিকারের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা ছিল। এখন সে রকম কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। শুধু পরবর্তী সময়ে বিয়ের ক্ষেত্রে ইদ্দত পালনের বিশেষ বিধান আছে।
আমি বেসরকারি একটা চাকরি করি। পুরো পরিবার আমার ওপর নির্ভরশীল। ২০০৫ সালে পরিবারের মতে, অশিক্ষিত এক মেয়েকে বিয়ে করি। সে দেখতেও ভালো নয়। শর্ত ছিল একটা সরকারি চাকরি, না হলে ৫০ হাজার টাকা দেবে আমাকে। আমি যৌতুককে খুবই ঘৃণা করি। তারপরও এই শর্তে রাজি ছিলাম। কারণ, আমি নিতান্তই গরিব ঘরের ছেলে। আমার বাবা ও ছোট ভাই দিনমজুর। আমিও ছাত্রজীবনে অন্যের বাড়িতে কাজ করে, লজিং থেকে পড়াশোনা করেছি। বিয়ে করার পর শ্বশুরবাড়ি থেকে কিছুই পাইনি। আমাদের একটি মেয়ে আছে। চাকরির কারণে আমি দূরে থাকায় আমার স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এখন স্ত্রী চাপ দিচ্ছে, তার দেনমোহর পরিশোধ না করলে মামলা করবে। এখন দেনমোহর পরিশোধ করার ক্ষমতা আমার নেই। কী করতে পারি?
মো. ফারুক হোসেন
ঝিকরগাছা, যশোর।
যৌতুক নিরোধ আইন ১৯৮০ অনুযায়ী, যৌতুক নেওয়ার অপরাধে আপনার এক বছর থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা জরিমানা অথবা কারাদণ্ড ও জরিমানা উভয়ই হতে পারে। এই আইনের ৩ ও ৪ ধারায় এ ধরনের শাস্তির বিধান আছে। ১৯৬১ সালের পারিবারিক আইনের ১০ ধারা মোতাবেক দেনমোহর পরিশোধের পদ্ধতি সম্পর্কে কাবিননামায় বিস্তারিত উল্লেখ না থাকলে স্ত্রীর চাহিবামাত্র দেনমোহর পরিশোধযোগ্য। ব্যর্থতায় আপনার স্ত্রী মুসলিম পারিবারিক আদালতে ৫ ধারা অনুযায়ী মোহরানা আদায়ের মামলা করতে পারেন এবং ব্যর্থতায় আপনার জেল বা জরিমানা অথবা উভয়ই হতে পারে।
কয়েক মাস আগে আমি ভোটার পরিচয়পত্র হারিয়ে ফেলি। এ নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। কয়েকদিন পর জানতে পারলাম, এক বন্ধু সেটি খুঁজে পেয়েছে। শুনে নিশ্চিন্ত হলাম। কিন্তু তার কাছে পরিচয়পত্রটি চাইলে তা দিতে সে অস্বীকার করে। জানায় টাকা না দিলে সে কার্ডটি ফেরত দেবে না। ভেবেছিলাম সে বোধহয় মজা করছে। তিন হাজার ৫০০ টাকা ছাড়া পরিচয়পত্রটি দেবে না বলে জানায়। এমনকি নানা ভয়ও দেখায়। এ ঘটনায় আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে গেল। এখন আমি তার বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে চাই। এ জন্য পুলিশ আমার কাছ থেকে কী কী তথ্য চাইবে। আর জিডি করার পর আমার বন্ধুটি যদি জানতে পারে বা জানার পর সে যদি আমার বিরুদ্ধে উল্টো আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে চায়, তাহলে সেটা কীভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব? আমার পরিচয়পত্রটি আমি কীভাবে উদ্ধার করতে পারি—জানাবেন।
সুবাস
দিনাজপুর সরকারি কলেজ, দিনাজপুর।
আপনি ভোটার পরিচয়পত্র হারিয়ে যাওয়ায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে পারেন। এতে পরিচয়পত্র হারানোর সময়, তারিখ, স্থান ও পরিচয়পত্রের নম্বর উল্লেখ করা প্রয়োজন। সাধারণ ডায়েরি করার পরে এই ডায়েরির কপিসহ আপনাকে নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক কার্যালয়ে ভোটার পরিচয়পত্র চেয়ে দরখাস্ত করতে হবে। এ ছাড়া ফৌজদারি বিধানমতে, ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে তল্লাশি পরোয়ানার মাধ্যমে বন্ধুর কাছ থেকে আপনার পরিচয়পত্র উদ্ধার করা সম্ভব।
আমার বয়স ২৫ বছর। তিন বছর ধরে আমি বড় ভাইয়ের স্ত্রীকে ভালোবাসি। ভাইয়ের ঘরে তার এক বছর তিন মাস বয়সের একটি ছেলেসন্তান আছে। স্বামীর সঙ্গে তার আন্তরিকতা না থাকায় সম্প্রতি উভয়পক্ষের সম্মতিতে কাজির মাধ্যমে তালাক সম্পন্ন করে। দেনমোহর, খোরপোশ ও সন্তানের খরচ বাবদ যাবতীয় পাওনা স্বামীর কাছ থেকে আদায়ও করে নেয়। এখন আমরা বিয়ে করতে চাই। তার ছেলেকে আমি খুব স্নেহ করি। ছেলেটিকে কাছে রেখে আমার আদর্শে বড় করতে চাই। আর্থিকভাবে আমি সামর্থ্যবান নই। এ জন্য আমার ইচ্ছা থাকলেও বেশি পরিমাণ টাকা দেনমোহর ধার্য করতে পারি না। উভয়ের বাবা-মা আমাদের এই সম্পর্ক ও ইচ্ছাকে সমর্থন করছেন না।
এ অবস্থায় তাকে বিয়ে করার আইনগত কোনো বাধা আছে কি না। ছেলেকে আমার কাছে রেখে বড় করতে চাইলে আইনগত কোনো বাধা আছে কি না।
আইনমতে, ন্যূনতম কত টাকা দেনমোহর ধার্য করা যায়?
অংকন
গুলশান, ঢাকা
আপনার প্রথম প্রশ্নের জবাবে জানাচ্ছি, তালাক কার্যকর হওয়ার পর পুনরায় বিবাহে আইনগত কোনো বাধা নেই। তবে তালাক কার্যকর হওয়ার ব্যাপারটি চিঠিতে স্পষ্ট নয়। আইন অনুযায়ী তালাকের নোটিশ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অথবা সিটি করপোরেশনের মেয়রকে পাঠাতে হয়। ওই নোটিশ পাঠানোর ৯০ দিনের মধ্যে তালাক কার্যকর হয়। সুতরাং তালাক কার্যকর হওয়ার বিষয়টি পরিষ্কার হলে আপনার বিয়েতে কোনো বাধা থাকবে না।
আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর— কাস্টডিতে বাবার স্বাভাবিক ও মায়ের সীমিত অধিকার। একজন মা তার সন্তানকে সাত বছর বয়স পর্যন্ত হেফাজতে রাখতে পারেন। সাত বছরের বেশি বয়সের সন্তানের জিম্মার অধিকারী তার বাবা। তবে জিম্মার ব্যাপারে প্রধান বিবেচ্য বিষয়, নাবালকের স্বার্থ ও কল্যাণ।
আপনার তৃতীয় প্রশ্নের জবাবে জানাচ্ছি, দেনমোহরের নির্দিষ্ট কোনো পরিমাণ নেই। সাধারণ দেনমোহর নির্ধারিত হয় সামাজিক অবস্থানের ওপর। সুতরাং আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী দেনমোহর ধার্য করতে পারেন।
একটি বাড়িতে চার ভাই আলাদাভাবে বসবাস করতেন। তাঁদের নাম যথাক্রমে ক, খ, গ ও ঘ। একসময় ‘খ’ তাঁর স্ত্রী ও এক মেয়ে রেখে মারা যান। পরবর্তী সময়ে তাঁর বিধবা স্ত্রী অবিবাহিত দেবর ‘গ’-এর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
প্রশ্ন হলো, প্রয়াত ‘খ’-এর অন্য ওয়ারিশ তথা ভাই-ভাতিজারা তাঁর রেখে যাওয়া সম্পদের কোনো অংশ ইসলামি শরিয়া মোতাবেক পাবেন কি না, পেলে কী হারে পাবেন? এ সংক্রান্ত বিধিবিধান কী?
মো. কামরুল ইসলাম
দক্ষিণ শাহজাহানপুর, ঢাকা।
আপনার চিঠির প্রথম প্রশ্নের জবাবে জানাচ্ছি, মরহুম খ-এর ভাইয়েরা তাঁর সম্পত্তির অংশ পাবেন। তবে মরহুম খ-এর কন্যা এ ক্ষেত্রে পুরো সম্পত্তির অর্ধেক অংশের অধিকারী হবেন। সুতরাং মরহুম খ-এর সম্পত্তির আট ভাগের চার ভাগ পাবেন তাঁর কন্যা, এক ভাগ পাবেন তাঁর স্ত্রী এবং বাকি তিনভাগ পাবেন তাঁর তিন ভাই।
জীবনে চলতে-ফিরতে যেসব আইনি জটিলতায় পড়তে হয়, পাঠকের উকিল বিভাগে ১৫ দিন পরপর তারই সমাধান পাওয়া যাবে।পাঠকের উকিল বিভাগে আইনি সমস্যার সমাধান দেবেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট নাহিদ মাহতাব। স্পষ্ট করে নিজের সমস্যাটি লিখে পাঠান। প্রয়োজনীয় কাগজের অনুলিপি দিন।
খামের ওপর লিখুন :
পাঠকের উকিল, নকশা, দৈনিক প্রথম আলো
সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুলইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ২৬, ২০১০
Leave a Reply