হাইব্রিড টি লাল গোলাপ শীতের কুয়াশার চাদরের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে শিশিরভেজা গোলাপ ফুল, পাপড়ির ওপর জমে আছে বিন্দু বিন্দু শিশিরের হীরককুচি—সূর্যের আলোয় চিক চিক করছে। তাতে যেন আরও রূপ খুলেছে গোলাপের। কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই ভেসে আসছে মিষ্টি সৌরভ। শুধু অন্যের বাগানের গোলাপ দেখে মন ভরানো নয়, চাইলে নিজেও ফোটাতে পারেন এমন সুন্দর গোলাপ।
রোম সম্রাট নিরো আর মিসরের সুন্দরী ক্লিওপেট্রারও প্রিয় ছিল গোলাপ। নিরো তাঁর প্রাসাদের এমন কোনো জায়গা ছিল না যেখানে গোলাপগাছকে ঠাঁই দেননি। ঘরের মেঝেতে গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে রাখতেন সারাক্ষণ, গোলাপের সুরভি নেওয়ার জন্য। অতিথি মার্ক অ্যান্টনির আগমনে মিসরের রানি ক্লিওপেট্রা তাঁকে তাঁর হাঁটু পর্যন্ত গোলাপ বিছিয়ে দিয়ে অভিবাদন জানিয়েছিলেন। সেসব আজ অলীক কল্পনার মতোই। তবে গোলাপের প্রতি ভালোবাসা তো কারও কম নয়। গাছে গাছে সজীব গোলাপ ফুটিয়ে সেখান থেকে দু-চারটা গোলাপ তুলে আমরা অন্তত ফুলদানিতে রেখে বা ফুলেভরা টবশুদ্ধ গাছটাই দুই-চার দিন ড্রইংরুমে রেখে আনন্দ পেতে পারি। তবে সেজন্য কোন গোলাপ লাগাবেন, কেমন করে লাগাবেন, তা তো জানা চাই। গোলাপ ফোটাতে চাইলে শুধু কায়দাগুলো একটু জেনে নেওয়া দরকার। আর দরকার ভালো গোলাপের কলম সংগ্রহ।
নানা জাতের গোলাপ
গোলাপের আছে অসংখ্য জাত। কোনোটা বুনো, ছোট ছোট প্রচুর ফুল ফোটে। কোনোটার ফুল অনেক বড়। এগুলো হাইব্রিড ‘টি’ শ্রেণীর। কোনোটার গাছ লতানো, কোনোটার ঝোপালো। শীতে ফোটার জন্য আশপাশের নার্সারিতে গোলাপি, গাঢ় গোলাপি, লাল, মেরুন, খয়েরি, ঘিয়া, হলুদ, সাদা, দুইরঙা, মিশ্রবর্ণা অনেক রকমের গোলাপ পাবেন। পছন্দটা আপনার। ওখান থেকে বাছাই করে কিছু কলম সংগ্রহ করে নিন। টবের জন্য ছোট গাছবিশিষ্ট মিনিয়েচার শ্রেণীর গোলাপই ভালো। এতে চাষ ও যত্ন করতে সুবিধা হয়, প্রদর্শনীতেও নেওয়া যায় সহজে। এসব শ্রেণীর গোলাপ কলম লাগানোর জন্য বড় টবের দরকার নেই, আট থেকে ১০ ইঞ্চি মুখের টব হলেই চলবে। কিন্তু হাইব্রিড টি এবং ফ্লোরিবানদা শ্রেণীর গোলাপের জন্য চাই বড় মুখের টব, যার মুখের ব্যাস ১২ ইঞ্চি বা তার বেশি। মাটির টবই ভালো।
গাছ লাগাবেন যেভাবে
গোলাপের জন্য সার-মাটি অন্য ফুলের মতো নয়, একটু আলাদা। মাটি তৈরির আগে সার জোগাড় করতে হবে। পচা গোবর বা প্যাকেটজাত জৈব সার, কাঠের ছাই, পাতা পচা সার বা পচা আবর্জনা সার অথবা ফেলে দেওয়া চায়ের পাতি টবের মাটিতে মেশানো যেতে পারে। খৈল দেওয়া যায়, তবে খৈল দিলে পিপড়ার উপদ্রব হতে পারে, ওরা শিকড় নষ্ট করে দেয়। তিনভাগ দো-আঁশ মাটির সঙ্গে একভাগ জৈব সার ও একভাগ কাঠের ছাই মিশিয়ে টবের জন্য সার-মাটি তৈরি করতে পারেন। টবে কোনো রাসায়নিক সার দেওয়ার দরকার নেই। জমির গর্তে লাগানোর অন্তত ১০ দিন আগে জৈব সারের সঙ্গে দুই-তিন চাচামচ করে টিএসপি ও এমপি সার মিশিয়ে দিতে পারেন।
টবের ঠিক মাঝখানে গোলাপের কলম লাগিয়ে হালকা সেচ দেবেন। লাগানোর পর টবসমেত গাছটিকে দিনকয়েক ছায়ায় রাখতে হবে। এ সময় কিছু পাতা ঝরিয়ে দিতে পারেন। এতে কলম দ্রুত বেঁচে উঠবে। নতুন পাতা ছেড়ে গাছ বাড়তে শুরু করলে রোদে বের করে দিতে পারেন। শীত শেষে যখন গাছে নতুন ডালপালা গজানো শুরু করবে, সে সময় অল্প করে ইউরিয়া সার (এক চিমটি সার প্রতি লিটার পানিতে গুলে) গাছের গোড়ায় দিতে পারেন। এতে গাছ দেখতে ভালো হবে, বাড়বে ভালো। তবে সার বেশি হলে ক্ষতি হবে। আজকাল বাজারে বিভিন্ন রকমের ট্যাবলেট সার পাওয়া যাচ্ছে। দুটি সার বড়ি কিনে গাছের গোড়ার মাটিতে দুই ইঞ্চি গভীরে পুঁতে দিতে পারেন। এটা দিলে এক বছরের মধ্যে আর কোনো সার দিতে হবে না। মাঝেমধ্যে অল্প করে চায়ের পচা পাতি টবের ওপরের মাটি হালকা করে নিড়িয়ে তার সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পারেন। টবের মাটি যাতে একবারে শুকিয়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। নিয়মিত সেচ দেবেন। বেয়াড়া ডালপালা অবশ্যই ছেঁটে দেবেন। জুন আর সেপ্টেম্বরে গোলাপগাছ ছাঁটতে পারেন। না হলে ভালো ফুল ফুটবে না। দুই-তিন বছর পর টবের মাটি পুরো বদলে দেবেন। পুরোনো মাটি রাখলে তাতে ফুল ভালো হবে না। তবে আমার পরামর্শ হলো—একঘেয়েমি কাটাতে শুধু মাটি বদল নয়, নতুন জাতের অন্য গোলাপের কলম এনে লাগাতে পারেন। ঠান্ডা কমে এলে ফেব্রুয়ারি থেকেই গোলাপ বাগানের কাজ শুরু করতে পারেন। তবে বর্ষাকালের আগে লাগানো ভালো। ওই সব গাছে আগামী শীতজুড়ে প্রচুর ফুল ফুটবে।
গোলাপের খোঁজ
কৃষিবিদ উপকরণ নার্সারি, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট চত্ব্বর, ফার্মগেট, ঢাকা। ফোন: ০১৮৯১৯৪৩০৩।
ভোসড নার্সারি, গ্রিনফিঙ্গার নার্সারি, এগ্রিটেক, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট চত্বর, ফার্মগেট, ঢাকা।
ডালিয়া নার্সারি, কেডিএ আউটার বাইপাস রোড, সোনাডাঙ্গা, খুলনা। ফোন: ০১৭১৪০৫৭৭৮৩
রাঙাবন নার্সারি, সাভার বাসস্ট্যান্ড, সাভার, ঢাকা।
মৃত্যুঞ্জয় রায়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ২৬, ২০১০
আশরাফ
বর্তমানে আমার বারান্দায় কয়েক রকমের গোলাপ গাছ আছে। কিন্তু আমি ভিন্ন রকমের গোলাপের চারা খুঁজছি যেমনঃ গোলাপি,নীল,কালো। দয়া করে বলবেন কি এইসব রকমের গোলাপ আমি কোথায় পাব?