বাংলাদেশের মোট জাতীয় রপ্তানি আয়ের প্রায় তিন-চতুর্থাংশই আসে পোশাক শিল্প থেকে। এ শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ৪০ লাখ লোক। অর্থাৎ এক কথায় বলতে গেলে এ শিল্পের মাধ্যমে দেশের উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যাপক কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যে শুধু অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত বা দরিদ্র শ্রেণীর লোকদেরই কর্মসংস্থান হয়েছে তা নয়, শিক্ষিত শ্রেণীর লোকদের জন্যও এ শিল্প বয়ে এনেছে সুবর্ণ সুযোগ। কারণ একজন শিক্ষিত যুবক স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করে এ প্রফেশনে যে পরিমাণ আয় করতে পারে তা অন্য কোনো প্রফেশনে সম্ভব নয়। ফ্যাশন ডিজাইন ও মার্চেন্ডাইজিং পেশায় ন্যূনতম যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো ডিজাইনার ও মার্চেন্ডাইজারের মাসিক বেতন হতে পারে কমপক্ষে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। যা যোগ্যতা অনুযায়ী এক থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে। পরিতাপের বিষয় হলেও সত্যি যে, আমাদের দেশের শিক্ষিত লোকজন এ পেশায় তেমন এগিয়ে না আসার কারণে পোশাক শিল্পের প্রধান পদগুলোর বেশির ভাগই দখল করে আছে বিদেশিরা। এক্ষেত্রে শ্রীলংকা, ভারত ও পাকিস্তান এগিয়ে রয়েছে। যারা মাসিক বেতন হিসেবে দুই হাজার থেকে ছয় হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত পেয়ে থাকে। যা কোনো কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মোট খরচের চেয়েও বেশি। এদেশের জনসংখ্যার বড় একটি অংশ শিক্ষিত ও বেকার। কিন্তু পেশাগত কোন প্রশিক্ষণ না থাকায় তারা বিশেষ কোনো পেশায় জড়িত হতে পারছে না। আর সেই গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো পূরণে আমাদের দেশের শিল্প মালিকরা বড় অঙ্কের বেতনে নিজেকে এ পেশায় ওই বিদেশিদের স্থলা ভিষিক্ত করতে পারে অনায়াসে। স্নাতক, মাস্টার্স বা সমমানের যেকোনো ডিগ্রিধারী এ পেশায় প্রশিক্ষণ নিয়ে আধুনিক ও স্মার্ট ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারে। পোশাকশিল্পে পণ্য রপ্তানির গোড়ার দিকে এ দেশে তেমন কোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল না। কিন্তু গত কয়েক বছরে গার্মেন্টস শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উদ্যেগে গড়ে উঠেছে এনআইএফটি নামে একটি প্রশিক্ষণ একাডেমী। দক্ষ ফ্যাশন এবং মার্চেন্ডাইজার গার্মেন্টস টেকনিশিয়ান তৈরিতে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এছাড়া শুধু বাণিজ্যিক ভিত্তিতে অনেকেই এ ধরনের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেছে। যাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণার্থীরা প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারে নাই। এই কোর্সে শেখানো হয় ঃ টেক্সটাইল ফাইবার অ্যান্ড ইয়ার্ন, নিটওয়ার ও ওভেন ফেব্রিকস, সোয়েটার ডিজাইনিং, প্রডাকশন প্লানিং এন্ড কন্ট্রোল, বায়ার করেসপন্ডিং, টোটাল কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট, ট্রিমস এন্ড অ্যাকসেসরিজ, কনজাম্পশন এন্ড গার্মেন্টস কস্টিং, প্যার্টার্ণ মেকিং, ফ্যাশন ক্যাড, টেক্সাইল সাইন্স, ডিজাইন থিওরী, গার্মেন্টস কনস্ট্রাকশন, সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স, কর্মাশিয়াল প্রসিডিউর, এ্যাপারেল প্রজেক্ট ডেভেলপমেন্ট, ইন্টারনেট মার্কেটিং এন বিজনেস, ইকোনোমিক্স অব এ্যাপারেল মার্চেন্ডাইজিং প্লানিং এন্ড বায়িং, ফ্যাশন ফোরকাস্টিং, এ্যাপারেল গ্লোবাল ইকোনমি, ফ্যাশন এক্সেসরিজ, ফ্যাশন ক্যাড, ফ্যাশন শো প্রডাকশনস, টুলস এন্ড টেকনিকস অব মার্চেন্ডাইজার, এ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং, নিটওয়্যার টেকনোলজি, টেক্সটাইল সাইন্স এন্ড এ্যাপারেল এনালাইসিস এবং সর্বশেষ ফ্যাক্টরী ভিজিট।
কাজের ক্ষেত্র ঃ টেক্সটাইল, গার্মেন্টস, ফ্যাশন ডিজাইনিং বিষয়ে শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশে রয়েছে চাকরির বিশাল বাজার। সরকারি- বেসরকারি দুটি ক্ষেত্রেই রয়েছে চাকরির বিশাল ক্ষেত্র। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সুযোগের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে স্থাপিত দেশি-বিদেশি টেক্সটাইল মিল, বিভিন্ন বায়িং অফিস, বুটিক হাউস, ফ্যাশন হাউস, গার্মেন্টস শিল্প ও ইন্ডাস্ট্রিতে উৎপাদন কার্যক্রমের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করে যেতে হয় তাদের। মূলত টেক্সটাইল বিষয়ে শিক্ষার্থীদেরকে যেকোন ছোট বড় টেক্সটাইল বা গার্মেন্টস ইন্ড্রাস্ট্রির পণ্য উৎপাদন কার্যক্রমের প্রাণ হিসেবে বিবেচিত করা হয়। সেই সাথে বিভিন্ন ব্যাংক এবং শিল্প ঋণ প্রদানকারী সংস্থাসমূহের শিল্পঋণ বিতরণ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ রয়েছে।
বিস্তারিত তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন : ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি, ৩৮/৩, বীর উত্তম জিয়াউর রহমান সড়ক, নিউ এয়ারপোর্ট রোড, আমতলী, মহাখালী, ঢাকা, ফোনঃ ০১৭১৩-১১৬৩১৩, ৮৮৩১৩০৪।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, জানুয়ারী ২৩, ২০১০
Leave a Reply