আমি স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে পড়ি। কলেজে পড়ার সময় মোবাইল ফোনে একটি ছেলের সঙ্গে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে সম্পর্কটি প্রেমের দিকে গড়ায়। ছেলেটি ঢাকায় চাকরি করে। বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে হওয়ায় তাঁরা কিছুতেই আমাকে ঢাকায় পাঠাতে চাননি। আমি একরকম জোর করেই পড়তে আসি। কিন্তু আমি ঢাকায় আসার পর ধীরে ধীরে সে বদলে যেতে থাকল। সবকিছুতেই সে সন্দেহ করত। মোবাইল ফোনে ‘কল ওয়েটিং’ পেলেই অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করত। এমনকি আমার ভাইদের ফোন করেও আমার সম্পর্কে নোংরা কথা বলত। সে বলত, তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ালে সন্দেহ করবে না, গালাগাল করবে না। আমি তা চাইতাম না। একদিন কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সে সবার সামনে আমার গায়ে হাত তোলে। আমি তার পরও মেনে নিয়েছিলাম, কারণ ওকে সত্যিই ভালোবাসি। কিন্তু সম্প্রতি সে আবার একই কাজ করেছে। এরপর আমি কোনো যোগাযোগ রাখিনি। তবে সে যখন ভালোবাসার কথা বলে, তখন আমার কিছুই মনে থাকে না। আমি যে তাকে সত্যিই ভালোবাসি। আবার সে যে আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে, সেটাও মানতে পারি না। এখন আমার কী করা উচিত?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ঢাকা।
ছেলেটা ভালোবাসে, কিন্তু শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারে না। এই সম্পর্ক চালিয়ে গেলে মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন যে চলবে না—তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। যদি নিতান্তই একজন আরেকজনকে ছাড়া থাকা সম্ভব না হয়, তবে দুজনে মিলে একজন মনোচিকিত্সকের পরামর্শ নিন। চিকিত্সা অথবা কাউন্সেলিংয়ে এ ব্যাপারটা শোধরাতেও পারে।
দুই বছর হলো একটি ছেলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক হয়েছে। ওকে দেখেমনে হয়েছে, ছেলেটি সত্, ইতিবাচক মনোভাবের এবং আমাকে অনেক ভালোবাসে। সম্পর্কের ব্যাপারে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা পছন্দ করে। আধুনিকতার সুযোগে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা তৈরি হতে পারে বলে মনে করে।
আমার একটা বেদনাদায়ক অতীত আছে। তা জেনেই সে আমাকে ভালোবাসে। দীর্ঘ সময়ে একবারও আমার কষ্টের জায়গায় আঘাত করেনি। সব সময় চেষ্টা করে যাতে আমি হাসিখুশি থাকি। আমার খারাপ সময়ে ইন্টারনেটে কিছু বন্ধু তৈরি হয়। তারা আমাকে মানসিকভাবে সাহায্য করে। সম্প্রতি এরকম দুজন বন্ধু দেশে এলে আমি ছেলেটিকে না জানিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করি। তাদের সঙ্গে আমার নিয়মিত কথা হয়। ও কখনো কোনো ঘটনা আমাকে লুকায় না, সব খুলে বলে। আমি ওকে অনেক যন্ত্রণা করি এবং অনেক ক্ষেত্রে মিথ্যা বলি। কারণ আমি জানি, অপরিচিত কাউকে বন্ধুত্বের তালিকায় রাখা ও পছন্দ করবে না। কিছুদিন হলো উপলব্ধি করছি, ওকে আমি অনেক বেশি ভালোবাসি। আমি কি প্রতারণা বা অনৈতিক কিছু কি করছি?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ঢাকা।
এটা এক ধরনের প্রতারণা তো বটেই। এরকম সম্পর্কের মধ্যে কোনো লুকোছাপা থাকবে না—এটাই স্বাভাবিক। আজকাল নেট বা ভারচুয়াল বন্ধুত্ব থেকে সামনাসামনি দেখা হওয়া একটা রোজকার ব্যাপার হয়ে গেছে। আপনি আপনার বন্ধুকে সব খুলে বলুন, বিশেষ করে সে যখন আপনার ব্যাপারে এত সংবেদনশীল। আপনি যদি এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চান, সব খুলে বলুন।
স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়ে আমি একটি টিউশনি নিই। দুজন ছাত্র। তাদের মা নেই। বড় বোন পরিবারের পরিচালনার দায়িত্বে। হঠাত্ একদিন বড় বোন মেয়েটি আমাকে ফোন করে। আমি খুব অবাক হই। সেই থেকে তার সঙ্গে আমার কথা বলা শুরু। এরপর প্রেম হলো। প্রেম হওয়ার মাসখানেক পর থেকে তার প্রতি আমার অবিশ্বাস জন্ম নেয়। সে মোবাইল ফোনের ছয়-সাতটি সংযোগ ব্যবহার করে। অনেক নম্বরই আমি জানি না। অবিশ্বাস দূর করতে সে আমার কাছে শপথ করে। খরচের জন্য আজ পর্যন্ত অনেক টাকাও আমাকে দিয়েছে। প্রতিবার শপথ করে সে আমার কাছে ক্ষমা চায়। কিন্তু পরে দেখা যায়, ঠিকই ফোনে ছেলেদের সঙ্গে কথা বলে। এই অবিশ্বাসের মধ্যে তার-আমার সম্পর্ক চলতে থাকে। কিছুদিন পর আমাকে পড়াশোনা ছেড়ে চাকরি করার জন্য চাপ দিতে থাকে। আমি তাকে বলি, পড়াশোনা শেষ করে একটা কিছু করব। এতে সে আমাকে অবিশ্বাস করে। তখন আমার সঙ্গে সম্পর্ক থাকতেই অন্য একটি বিবাহিত লোককে বিয়ে করে মেয়েটি। খবর শুনে আমি খুব কেঁদেছি। এরপর সে আমাকে ফোন করে ক্ষমা চায়। বিয়ে হওয়ার দুই দিন পর তার পরিবার বিষয়টি জেনে তাকে ডিভোর্স করায়। তাদের সংসার হয়নি। শারীরিকভাবেও আমরা অনেক কাছাকাছি এসেছি। এখন তার সঙ্গে আমার প্রেম চলছে। আমি তাকে খুব ভালোবাসি এখনো। কিন্তু তার এমন আচরণে খুব ঘৃণাও হয়। আমি যদি তাকে বিয়ে না করি, তাহলে নৈতিকভাবে আমি কতটুকু দায়বদ্ধ?
রাজিব (ছদ্মনাম)
হবিগঞ্জ।
আপনি যদি মেয়েটির সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করেন, নৈতিক দিক থেকে এটা অন্যায় হবে না। যতদূর বোঝা যাচ্ছে, মেয়েটির ব্যাপারে আকর্ষণ নিতান্তই শারীরিক। যাকে আপনি ভালোবাসেন, তার কারণে আপনি ঈর্ষান্বিত হতে পারেন, তার প্রতি আপনার ক্রোধ হতে পারে, কিন্তু কোনোদিন ঘৃণা হবে না। আর মেয়েটিও খুব জটিল—আপনার ব্যাখ্যা থেকে তাই বোঝা যাচ্ছে।
মেয়েটির কাছ থেকে সরে আসুন, সেটা আপনার জন্য মঙ্গল হবে।
আমি এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় ‘ক’-এর সঙ্গে ফোনে সম্পর্ক হয়। ‘ক’ ছেলেটি আমার এক বন্ধুর বন্ধু, কিন্তু আমাদের কোনোদিন দেখা হয়নি। তার সঙ্গে সম্পর্ক চলার সময়ই আমি আরেকটি ছেলে ‘খ’-এর সঙ্গে মজা করেই সম্পর্ক গড়ি। সে আমার সঙ্গে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করে। আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি ছেলেটা এমন। সে আগেও অনেক মেয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। ‘খ’ আমার ফোনের সম্পর্কের কথা জানতে পারে এবং পরে ‘ক’-কে সবকিছু বলে দেয়। এতে ‘ক’ আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে। আমি ‘খ’-এর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করি এবং ‘ক’-এর কাছে ক্ষমা চাই। অনেক চেষ্টা করে দুই মাস পরে ‘ক’-এর সঙ্গে আবার আমার সম্পর্ক হয়। দেড় বছর পরে আমাদের দেখা হওয়ার পর তার সঙ্গে কথা বলে মনে হতো সে আমাকে অনেক পছন্দ করেছে। আমি অনেকবার চাইছি ‘খ’-এর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের কথা বুঝিয়ে বলতে কিন্তু সে বলত, আমি তোমাকে ক্ষমা করেছি, আর কিছু শুনতে চাই না। দেখা হওয়ার দেড় মাস পরে সে আমাকে জানায়, অন্য একটা মেয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে, সে আমার সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখতে পারবে না। কারণ জানতে চাইলে সে আমাকে ‘খ’-এর কথা বলে। আমি ‘ক’-কে অনেক ভালোবাসি। পাঁচ মাস সে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, কিন্তু আমি তাকে ভুলতে পারিনি। আমার এখন কী করা উচিত?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
তুমি একটা ভুল করেছিলে এটা ঠিক। তবে ‘ক’ কিন্তু নিজের মতো করে আরেকজনের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছে। এখন বলছে, তোমার দ্বিতীয় সম্পর্কের কারণে এটা হয়েছে। আমার বিশ্বাস, তেমনটা নয়। সে একটা অজুহাত দাঁড় করাচ্ছে। যাহোক, তোমার সঙ্গে ‘ক’-এর সম্পর্ক শেষ হয়ে যাওয়াই ভালো। কষ্ট হলেও সেটা তোমার জন্য ভালো হবে।
সারা যাকের এমন অনেক সমস্যা আছে যা কাউকে বলা যায় না। এ রকম প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন সারা যাকের। ১৫ দিন অন্তর সুবন্ধু সমীপেষু কলামে চিঠি লিখুন সাদা কাগজের এক পিঠে সংক্ষেপে, ঠিকানাসহ। চিঠি পাঠানোর ঠিকানা : সুবন্ধু সমীপেষু, নকশা, প্রথম আলো
সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ১৯, ২০১০
Leave a Reply