চোখে চোখে রূপ-সৌন্দর্যের প্রকাশে চোখ তো একটা বড় ব্যাপার। তাই চোখের সাজটি হওয়া চাই নিখুঁত ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। স্থান-কাল বুঝেও চোখকে সাজাতে হবে।
শুধু কাজল, আইলাইনার বা সুরমা টেনে আপনার চোখকে করে তুলতে পারেন নজরকাড়া। আবার চোখে কিছু ত্রুটি থাকে, যা একটু গুরুত্বের সঙ্গে যথার্থ সাজের মাধ্যমে ঢেকে নিতে পারেন। চোখ বুঝে ধারণ করা উচিত চোখের সাজ। বললেন প্রিভে স্যালনের রূপসজ্জাশিল্পী নাহিলা হেদায়েত।
চোখের আকারের ওপর নির্ভর করে আপনার চোখের সাজ। আপনার চোখ যদি হয় কিছুটা কোটরের ভেতর ঢোকানো, তবে আইশ্যাডো হওয়া চাই হালকা। চোখের পাতা ও ভেতরের দিকে হালকা আইশ্যাডো দিন। একটু গাঢ় আইশ্যাডো লাগান পাতার ওপরে, ভ্রুর নিচে। মাঝারি রং থেকে আরও একটু গাঢ় রঙের আইশ্যাডো লাগান চোখের বাইরের কোণে, একটু বাইরের দিকে টেনে। ভ্রুর নিচে একদম হালকা রঙের আইশ্যাডো দিয়ে হাইলাইট করুন। আর ভ্রু যেখানে শেষ হয়, সেই লাইনটাতে খুব সরু করে সাদা আইশ্যাডো লাগান। এবার চিকন আইলাইনার বা কাজল চোখের ওপরের পাতায় নিয়ে বাইরের কোণ পর্যন্ত টেনে দিন। নিচের পাতায় চাইলে খুব সরু করে কাজল নিতে পারেন। নিচের পাতায় কাজল না দিয়ে শুধু মাশকারা লাগিয়ে নিতে পারেন। চোখের ওপরের পাপড়িতেও মাশকারা দিতে পারেন। এতে আপনার চোখ বড় ও সজীব দেখাবে।
এ ধরনের চোখের পাতায় ও কোটরের ওপরের অংশজুড়ে খুব গাঢ় আইশ্যাডে লাগাবেন না। এতে চোখ আরও ভেতরের দিকে মনে হবে।
দুই চোখের মাঝে দূরুত্ব যদি একটু বেশি হয়, তবে চোখের সাজ হওয়া উচিত এমন যাতে চোখ দুটি কাছাকাছি দেখায়। চোখের পাতার মধ্যভাগ থেকে ভেতরের অংশ পর্যন্ত একটু হালকা রঙের আইশ্যাডো দিন। চোখের মধ্যভাগ থেকে বাইরের দিকের অংশে একটু গাঢ় রঙের আইশ্যাডো দিন। এই দুই শেড চোখে ব্লেন্ড করে নিন। টেনে কাজল বা আইলাইনার দিন চোখের ভেতরের দিকের অংশে। চোখের ভেতরের অংশে ওপরে ও নিচে হালকা করে মিলিয়ে নিয়ে চোখ আঁকতে পারেন।
আপনার দুই চোখের মাঝে দূরত্ব যদি কম হয়, তবে চোখের পাতার ভেতরের অংশে হালকা আইশ্যাডো দিন মাঝ বরাবর। এবার মধ্যাংশ থেকে বাইরের দিকে গাঢ় রঙের আইশ্যাডো দিন। দুটো রং ভালো করে মিলিয়ে দিন চোখের ওপরে। গাঢ় রঙের আইশ্যাডো চোখের কোণের বাইরে টেনে দিয়ে নিচের অংশের মাঝ বরাবর দিতে পারেন। আইলাইনার বা কাজল চোখের ভেতরের অংশ থেকে চোখের কোণের বাইরে পর্যন্ত টেনে দিন। বাইরের অংশটিতে একটু গাঢ় বা মোটা করে, একটু ওপরের দিকে টেনে দিতে পারেন। এভাবে আপনার চোখ টানা-টানা ও সুন্দর দেখাবে।
আপনার চোখের আকার যদি হয় নিচের দিকে নামানো, তবে আইশ্যাডো ওপরে এবং বাইরের দিকে টেনে দিতে হবে। চোখের ভেতরের অংশে হালকা ও বাইরের কোণ থেকে নিয়ে মধ্যভাগ পর্যন্ত গাঢ় আইশ্যাডো দিন। খেয়াল রাখবেন, ওপরের অংশের গাঢ় আইশ্যাডো যেন টেনে নিচে নামিয়ে না আনা হয়। এবার চোখের ভেতরের অংশ থেকে আইলাইনার বা কাজল টেনে বাইরের অংশ পর্যন্ত দিয়ে একটু ওপরের দিকে ছড়িয়ে দিন। মধ্যভাগ থেকে বাইরের কোণ পর্যন্ত একটু মোটা করে নিন আপনার কাজল। চোখের নিচের পাতায় হালকা কাজল দিয়ে বাইরের কোণটি ওপরের কোণের সঙ্গে একটু ওপরে টেনে মিলিয়ে নিন। চোখের ওপরের পাতার পাপড়িতে ঘন করে মাশকারা লাগিয়ে নিন।
আপনার চোখ যদি চিকন ধরনের হয়, তবে চোখের পাতার ভেতরের অংশে একটু হালকা শ্যাডো দিন। বাইরের অংশে গাঢ় শেড দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। আইলাইনার বা কাজল চোখে খুব একটা টেনে দেওয়ার দরকার নেই। তাতে চোখ আরও লম্বা দেখাবে। হালকা লাইনার বা কাজল অথবা এর বদলে কালো আইশ্যাডো দিয়ে ঘন করে মাশকারা নিতে পারেন।
যাঁদের চোখ একটু ফোলা ধরনের, তাঁরা চোখের পাতার ভেতরের অংশে হালকা, চোখের কোণ ও কোটরের ওপর গাঢ় আইশ্যাডো দিয়ে চোখের ফোলা ভাব কমাতে পারেন। মোটা করে কাজল বা আইলাইনারও লাগিয়ে চোখের ফোলা ভাব কমানো যায়।
যাঁদের চোখের কোল ফোলা থাকে, তাঁরা ওপরের ও নিচের পাতায় গাঢ় করে কাজল বা আইলাইনার টেনে একটু মোটা করে লাগাতে পারেন।
আপনার চোখ যদি হয় গোলাকৃতির, তবে চোখের পাতার ভেতরের অংশে হালকা ও বাইরের অংশে গাঢ় আইশ্যাডো লাগিয়ে নিন। কাজল বা আইলাইনার চোখের ভেতরের কোণে হালকা করে লাগিয়ে বাইরের কোণ পর্যন্ত চিকন করে টেনে লাগান। বাইরের কোণে কাজল একটু মোটা বা ঊর্ধ্বমুখী করতে পারেন। চোখের নিচের পাতার কোণের সঙ্গে কাজল টেনে ওপরের অংশের সঙ্গে মিলিয়ে দিন।
আইশ্যাডো ব্যবহার করতে না চাইলে মুখে হালকা ফেস পাওডার দিয়ে, চোখে শুধু কাজল দিয়েও হয়ে উঠতে পারেন নজরকাড়া সুন্দরী। প্রসাধনীতে সুরমার প্রচলন এখনো আছে। টেনে সুরমা দিলে চোখ টানা টানা লাগে। আবার হালকা করে চোখের ওপরের পাতায় কাজলের সঙ্গে মাশকারা লাগাতে পারেন।
চোখ যদি মাঝারি আকারের হয়, তবে আইলইনার বা কাজল চোখের ভেতরের কোণ থেকে টেনে নিয়ে বাইরের কোণ পর্যন্ত লাগান। ভেতরের দিকে ওপরের ও নিচের পাতায় কাজল দিয়ে চোখ টেনে এঁকে নিন। আবার বাইরের কোণেও একটু বাড়িয়ে ওপর দিকে কাজল দিন। চোখের নিচের পাতার মাঝ থেকে বইরের অংশ পর্যন্ত একটু মোটা করে ওপর দিকে টেনে কাজল দিন। এতে চোখ টানা টানা ও ভাসা ভাসা লাগবে।
আজকাল চোখের সঙ্গে স্মোকি আইস বা কালো ধরনের মেকআপ খুব প্রচলিত। এতে প্রথমে চোখের পাতায় একটি বেজ লাগিয়ে নিন। হালকা বাদামি রঙের শেড দিন বাইরের কোণ থেকে চোখের কোটরের ওপর দিয়ে ভেতর পর্যন্ত। একটু কালো বা গাঢ় বাদামি রঙের শ্যাডো লাগান চোখের পাতার বাইরের কোণ থেকে ভেতরে চোখের কোটরের লাইন বরাবর। আইলাইনার বা কাজল লাগান গাঢ় করে, চোখের পাতার ভেতরের অংশ থেকে বাইরের অংশ পর্যন্ত। নিচের পাতায় কাজল দিন। কাজলের বদলে আইশ্যাডো দিতে পারেন। ভ্রুর নিচে একটু হালকা সোনালি আইশ্যাডো দিন।
চোখে ভাসা ভাসা একটা ভাব আনতে চোখের ওপর নিচের পাতায় কাজল দিন। এবার আঙুল দিয়ে চোখের ওপরের পাতার কাজল একটু ওপরের দিকে ঘষে মিশিয় দিন।
চোখের সাজ আরও আকর্ষণীয় করতে আপনার ত্বকের সঙ্গে মানানসই বিভিন্ন রঙের লেন্স পরতে পারেন।
চোখের সাজ আপনার পোশাকের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া চাই। ভ্রুর ক্ষেত্রে কাজল ব্যবহার না করে, বাদামি ভ্রু পেনসিল বা বাদামি আইশ্যাডো ব্যবহার করুন। এ ছাড়া চোখ আরও দৃষ্টিনন্দন করতে ব্যবহার করতে পারেন আলগা আইল্যাশ। আপনার চোখ ও মন বুঝে একেক ধরনের নিতে পারেন একেক সাজ। কখনো চিকন, কখনো বা ষাটের দশকের নায়িকাদের মতো টেনে কাজল দিয়ে আপনি হয়ে উঠতে পারেন দৃষ্টিনন্দিত।
আইরিন খান
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ১৯, ২০১০
Leave a Reply