শীতকালে চুলে ভেষজ নানা উপাদান দিয়ে যত্ন করতে হবে ‘সৌন্দর্যের সার্বিক প্রকাশ ঘন কালো চুলের মসৃণতায়। চুলের এ মসৃণতা ধরে রাখতে শীতের শুরু থেকেই চাই বিশেষ পরিচর্যা। নয়তো শীতের রুক্ষ প্রকৃতি আমাদের চুলও করে তুলবে রুক্ষ।’ বলছিলেন রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা। শীতে চুলের নানা সমস্যা ও এর যত্ন-আত্তি নিয়ে শুনুন তাঁর কাছে।
চুলের পরিচ্ছন্নতায়
শীতকালে চুল নিয়মিত পরিষ্কার করতে শ্যাম্পুর বিকল্প হিসেবে রাহিমা সুলতানা ভেষজ উপাদান বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
রাতে রিঠার খোসা টুকরো করে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে সেটা ভালোভাবে চটকে ছেঁকে সেই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল ঝরঝরে হয়ে উঠবে।
মুলতানি মাটি ১০০ গ্রাম একটা পাত্রে নিয়ে দুই ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে নিজেই তৈরি করতে পারেন ঘরোয়া শ্যাম্পু। পানিতে ফুলে ওঠা মুলতানি মাটি ভালোভাবে পেস্ট করে ব্যবহার করুন শ্যাম্পু হিসেবে।
শ্যাম্পুর বিকল্প হিসেবে বেসনও ব্যবহার করতে পারেন। বেসন পানিতে গুলে এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে মাথায় লাগান। ১৫-২০ মিনিট রাখুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন।
শিকাকাই ২৫ গ্রাম আধাভাঙা করে এর সঙ্গে ২৫ গ্রাম আমলকী মিশিয়ে ৫০০ মিলি পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপর ছেঁকে শ্যাম্পু হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
সরষের খৈল চুলের জন্য খুব ভালো শ্যাম্পু। খৈল রাতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর ছেঁকে চুল ধুয়ে নিতে পারেন।
শ্যাম্পুর পাশাপাশি কন্ডিশনার হিসেবেও ভেষজ উপাদান বেছে নিন। কন্ডিশনার হিসেবে চায়ের লিকার খুবই উপকারী। এ ছাড়া শ্যাম্পুর পর লেবুর পানি ও কন্ডিশনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
তেল দিন নিয়মিত: শীতে মাথার তালু শুকনো হয়ে যায়। তাই চুলের পুষ্টি জোগাতে নিয়মিত মাথার ত্বকে তেল ম্যাসাজ করুন। তেল কুসুম গরম করে নিন। নারকেল বা জলপাই তেল ব্যবহার করতে পারেন। তারপর চুল ও মাথার ত্বকে লাগান ও ম্যাসাজ করুন আঙুলের ডগা দিয়ে ওপর থেকে নিচ ও নিচ থেকে ওপরে। তেল লাগিয়ে সারা রাত রেখে পরদিন শ্যাম্পু করলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
খুশকি দূর করুন সহজেই: হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজের চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ সৈয়দ আফজালুল করিম বলেন, খুশকি একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে কাজ করা হলে চুলের গোড়ায় ঘাম জমে অথবা ঠিকমতো শ্যাম্পু করা না হলে খুশকি হতে পারে। বাজারে যেসব অ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু পাওয়া যায় তা সপ্তাহে এক থেকে তিনবার ব্যবহার করুন। শ্যাম্পু পাঁচ-দশ মিনিট মাথায় রাখুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। এসব শ্যাম্পুতে কাজ না হলে ছত্রাকরোধী মেডিকেডেট শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। অথবা চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী ছত্রাকরোধী ট্যাবলেটও খেতে পারেন।
চাই বাড়তি যত্ন
মধু ও লেবুর রস প্রতিদিন চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করে এক ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল পড়া কমবে।
চুলের ডগা যাঁদের ফাটে ও চুল ভেঙে যায়, তাঁরা এক ভাগ মধু ও দুই ভাগ লেবুর রসের সঙ্গে আমলকীর নির্যাস মিশিয়ে নিয়মিত চুলে লাগালে উপকার পাবেন।
চুল বেশি পড়লে পেঁয়াজের রস মাথায় এক ঘণ্টা রেখে ধুয়ে ফেলুন।
সবুজ ধনেপাতার রস নিয়মিত চুলের গোড়ায় লাগালে চুল পড়া বন্ধ হয় এবং নতুন চুল গজায়।
সপ্তাহে এক দিন চুলে মেহেদি লাগাতে পারেন। এতে চুলের গোড়া শক্ত হয় ও চুল রেশমি হয়।
মনে রাখুন
সন্দুর চুলের জন্য যত্নের পাশাপাশি প্রয়োজন সঠিক খাদ্যতালিকা। শীতের শাসকবজি তো আছেই। পাশাপাশি পানি পান করুন প্রচুর পরিমাণে। দুশ্চিন্তা ছেড়ে দিন আজ থেকেই। দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুমানোর অভ্যাসটাও দিন ছেড়ে। চুলে হেয়ার স্প্রে ব্যবহারে সতর্ক থাকুন। গরম ড্রায়ার, আয়রন যথাসম্ভব কম ব্যবহার করুন। বাইরে বা রোদে বের হওয়ার আগে চুলটা বেঁধে নিন অথবা চুলে পেঁচিয়ে নিতে পারেন স্কার্ফও।
শান্তা তাওহিদা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ১২, ২০১০
Leave a Reply