বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও শিশুবিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুর বয়স ছয় মাস পূর্ণ হলে তাকে বুকের দুধের পাশাপাশি শক্ত খাবার দেওয়া উচিত। এর আগ পর্যন্ত শিশু তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও শক্তি বিশেষ করে আয়রন মায়ের দুধ থেকেই পায়। ছয় মাস বয়সে শিশুদের পরিপাকতন্ত্র শক্ত খাবার হজমের উপযোগী হয়। এ সময় জিহ্বার পেছন দিকে খাবার ঠেলে গিলতে পারে শিশুরা।
ছয় মাস হওয়ার পরও দেখুন, আপনার শিশু সাপোর্ট নিয়ে বসতে পারে কি না, কোনো জিনিস মোটামুটি ধরতে পারে কি না, সবকিছু মুখে দিয়ে চাবাতে চায় কি না, লালা পড়ে কিংবা খাবার দেখলে আগ্রহ দেখায় কি না, অনেকক্ষণ ধরে দুধ খাওয়ানোর পরও হাত চোষে কি না, পুরোপুরি দুধ খাওয়ানোর পরও রাতে হঠাৎ কেঁদে ওঠে কি না-এসব আচরণ করলে বুঝতে হবে, বাচ্চাকে শক্ত খাবার দেওয়ার সময় হয়েছে।
যেসব শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মায় অথবা ৩৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগে জ্নায় বা যাদের বৃদ্ধিজনিত সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে এ সময়টা আরও পরে হতে পারে।
উপযুক্ত সময় হয়ে গেলে প্রথম খাবার হিসেবে চাল, ডাল কিংবা গম দেওয়া উচিত। একটু দুধ মিশিয়ে সামান্য খাবার চামচের অগ্রভাগে নিয়ে মুখে দিতে হবে, খুব সকালে বা রাতে বাচ্চার মেজাজ তেমন ভালো থাকে না। এ সময় শক্ত খাবার না দেওয়াই ভালো। শিশুকে কিছু বুকের দুধ খাওয়ানোর পর সে যখন হাসিখুশি থাকে তখন খাবার দিন।
শিশু যদি প্রথমে খাবার খেতে বাধা দেয়, তবে হতাশ না হয়ে ঘণ্টা কয়েক পর কিংবা পরের দিন শুরু করুন।
কখনো বা শিশুরা কিছু খাবার মুখে দিয়ে বাকিটুকু ঠোঁট উল্টিয়ে ফেলে দিতে পারে, এতে অবাক হবেন না। কারণ, বুকের দুধ বা বোতল খাওয়ার সময় তার যে ঠোঁট উল্টিয়ে রাখার অভ্যাস ছিল, তা থেকেই ও এমন করছে। কোনো অবস্থাতেই আপনার শিশুকে খাবার দেওয়ার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করবেন না। একটি খাবার দেওয়ার পর তিন-চার দিন দেখুন, কোনো অ্যালার্জিক রি-অ্যাকশন বা অন্য সমস্যা হয় কি না। পরিমাণ বাড়ানোর ক্ষেত্রেও সপ্তাহখানেক অপেক্ষা করুন।
শিশু চাল, ডাল ও গম ঠিকভাবে খেতে পারলে শাকসবজি দেওয়া শুরু করুন। বিভিন্ন রকমের শাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, গাজর, টমেটো ইত্যাদি একটি একটি করে চাল, ডালের সঙ্গে মিশিয়ে কিংবা আলাদাভাবে স্যুপের মতো করে দেওয়া যায়।
অনেকেই ফলের জুস খাওয়ানোর জন্য খুব আগ্রহ দেখান। অতিরিক্ত মিষ্টি ও শর্করা শিশুর দাঁতে সহজেই ক্ষতের সৃষ্টি করতে পারে। তাই শিশুর বয়স সাত-আট মাস হলে যদি ফলের রস খাওয়ান, তাহলে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, তা যেন দৈনিক চার আউন্সের বেশি না হয়।
শিশুকে বিভিন্ন পাকা ফল ছোট ছোট টুকরো করেও দিতে পারেন। আপনার শিশুর বয়স আট-নয় মাস হলে খিচুড়ি বা স্যুপের সঙ্গে মাছ বা মাংস দিন। ডিম ৯-১০ মাসে দিতে পারেন। ডিম খাওয়ালে অনেক ক্ষেত্রেই শিশুর অ্যালার্জি হয়। কেউ ইচ্ছা করলে আগেও খাওয়াতে পারেন, বিভিন্ন রকমের পুডিং-জাতীয় খাবার খাওয়ানো যেতে পারে। সব সময় খেয়াল রাখবেন, শিশুর খাবার যেন অতিরিক্ত লবণাক্ত বা মিষ্টি না হয়। শিশুকে কখনো জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন না। এতে খাবারের প্রতি ওর অনীহা জ্নাবে। একটু বড় হলেই সোনামণিকে নিজে থেকে খেতে দিন।
প্রথম দিকে অনেক খাবার হয়তো নষ্ট করবে, জামা-কাপড় ময়লা করবে; তারপর দেখবেন ঠিকই খেতে পারছে। এতে আপনার চাপও অনেক কমে যাবে।
এতক্ষণ যে কথাগুলো বলা হলো, তা অবশ্যপালনীয় বা মানতেই হবে এমন নয়। এটি একটি গাইডলাইন মাত্র। খাওয়ার-দাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিটি শিশুর আচরণ আলাদা হওয়াই স্বাভাবিক। শিশুর খাবারেরও রয়েছে বড়সড় তালিকা। এগুলো থেকে আপনার মনের মতো করে খাবার বানাতে পারেন। তবে সব সময় আপনার শিশুর রুচি ও চাহিদার কথাটা খেয়াল রাখাটা ভালো।
——————–
ডা· আবু সাঈদ শিমুল
চিকিৎসা কর্মকর্তা
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পটিয়া, চট্টগ্রাম
প্রথম আলো, ৪ জুন ২০০৮
Leave a Reply