বর-কনের বাহারি বাহন পালকি চড়ে বউ আসবে, ঘোড়ার গাড়িতে করে বর। অথবা এসব কিছু নয়, একদম আধুনিক কায়দায় বর-বউ যাবে ফুলের সাজে সাজানো গাড়িতে চড়ে। যেটাই হোক না কেন, আগে জানা থাকা চাই এসব বাহন কোথা থেকে, কিভাবে যোগাড় করা যাবে।
ঘোড়ার গাড়ি
অনেকেই বিয়ের অনুষ্ঠানে আভিজাত্য আর বৈচিত্র্যময়তা প্রকাশ করতে চায়। বিয়ের আয়োজনকে একটু ভিন্ন ও আকর্ষণীয় করে তুলতে ঘোড়ার গাড়ি বা টমটম ব্যবহার করা যেতে পারে। অন্য বাহনের মতো ঘোড়ার গাড়ির ভাড়াও দূরত্বের ওপর নির্ভর করে। দূরত্ব কমবেশির ওপর ভাড়া কমবেশি হয়। ঢাকার মধ্যে সারা দিনের জন্য ঘোড়ার গাড়ির ভাড়া তিন থেকে চার হাজার টাকার মধ্যে। যদি একটু দূরের পথ হয় তবে ভাড়া কিছুটা বেশি দিতে হবে।
ঘোড়ার গাড়ির ভাড়া পাঁচ হাজার থেকে সাত হাজার টাকা। ঘোড়া ও গাড়ি আলাদাভাবে সাজাতে পারেন। সাজাতে খরচ পড়বে ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা। আর যদি নিজে সাজানোর ঝামেলা নিতে না চান, তবে ভাড়ার সঙ্গে সাজানোর খরচ যোগ করে দিলেই পেয়ে যাবেন সুন্দরভাবে সাজানো ঘোড়ার গাড়ি।
গাড়ি
বরযাত্রী বেশি হলে নিজের শহর অথবা অন্য শহরে বিয়ে করতে গেলে বড় গাড়ি দরকার সবচেয়ে বেশি। বরযাত্রীর সংখ্যার ওপর নির্ভর করে গাড়ির সিটের সংখ্যা কত হবে। বরের সঙ্গে কতজন যাবে তার ওপর নির্ভর করবে গাড়ির আকার। তাড়াতাড়ি গন্তব্যে যাওয়ার জন্য গাড়ির বিকল্প নেই। দূরত্ব অনুযায়ী বর ও বরযাত্রীর গাড়ির ভাড়া নির্ধারিত হয়ে থাকে। ঢাকার বাইরে অনেক দূরে ৫২ সিটের গাড়ি নিতে চাইলে ২০-২৫ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে। আর কাছের জেলায় যেতে চাইলে ৫২ সিটের গাড়ির জন্য ১৫-২০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে। বরযাত্রীর সংখ্যা যদি কম হয় তবে ৩২ সিটের গাড়ি ভাড়া করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দূরের জেলার ভাড়া ১৫-২০ হাজার টাকা আর কাছের জেলার ভাড়া ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যে।
বরের গাড়ি দুই রকমে ভাড়া করা যায়। যদি সাজিয়ে দেওয়া হয় তবে ভাড়া বেশি দিতে হবে। গাড়ি সাজানোর টাকার পরিমাণ গাড়ির আকারের ওপর নির্ভর করবে। আকার ও সাজানোর ভিন্নতার ওপর এক থেকে চার হাজার টাকা লাগবে। বরের জন্য ছোট গাড়ি নিলে, কাছাকাছি জেলায় তিন-চার হাজার টাকা। কিছুটা দূরের জেলায় চার-পাঁচ হাজার টাকা। নয় সিটের গাড়ি তিন থেকে ছয় হাজার টাকার মধ্যে। বরের জন্য ১২ সিটের গাড়ি তিন হাজার ৫০০ টাকা থেকে আট হাজার টাকা।
পালকি
বেহারার কাঁধে পালকি চেপে কনের আগমান বিয়ের উত্সবের জৌলুস বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। আগের দিনে রাজা-বাদশারা শুধু বিয়ে নয়, বিভিন্ন কাজে পালকি ব্যবহার করতেন। দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে পালকির ব্যবহার কমতে থাকেন। কিন্তু আজও বিয়েতে পালকি ব্যবহার করা হয়। শহরের তুলনায় গ্রামের বিয়েতে পালকির ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে অনেক রকম পালকি আছে। দুই বেহারা, চার বেহারা, এমনকি ছয় থেকে আট বেহারার পালকিও দেখা যায়। বেহারা বেশি হলে পালকির ভাড়া বেশি হয়। এলাকা ও বেহারাভেদে দুই থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া হয়ে থাকে। বর্ষাকালে পালকির ভাড়া কিছুটা কম হয়।
কোথায় পাবেন
বাস, মাইক্রোবাস দেশের প্রায় সব শহরেই আছে। রাজধানী ঢাকার প্রতিটি মহল্লায় ‘রেন্ট-এ কার’ ব্যবসায় আছে। সেখান থেকে চাহিদা ও পছন্দ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বাহনটি ভাড়া করতে পারেন। পালকি আর ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহারের জন্য পুরান ঢাকা বিখ্যাত। পুরান ঢাকার অনেক লোক এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। চানখাঁরপুল থেকে শুরু করে আলুবাজার পর্যন্ত অনেক স্থানে ঘোড়ার গাড়ি ও টমটম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান দেখা যায়। চানখাঁরপুল, বঙ্গবাজার, কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালের সামনে, ফুলবাড়িয়ার ঘোড়াপট্টি ইত্যাদি স্থানে বেশি দেখা যায়। রাজধানীর গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত অনেক ঘোড়ার গাড়ি চলে। চালকদের সঙ্গে কথা বলে আপনার পছন্দমতো ঘোড়ার গাড়ি ভাড়া করতে পারেন। পালকি দেশের প্রায় প্রতিটি বড় গ্রামে পাওয়া যায়। কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া, লক্ষ্মীবাজার, সিদ্দিকবাজার ও পুরান ঢাকার আলুবাজারে অনেক পালকির দোকান আছে। এখান থেকে আপনার পছন্দের পালকি ভাড়া করতে পারেন।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ০৫, ২০১০
Leave a Reply