হলুদ উৎসবের তত্ত্ব তালাশ বিয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় আর মজার দিক হলো গায়ে হলুদ। যত তোড়জোড় সবই থাকে এই হলুদবরণ উত্সবকে ঘিরে। কেননা বরের বাড়ি থেকে কনের বাড়িতে এবং কনের বাড়ি থেকে বরের বাড়িতে হলুদের তত্ত্ব পাঠাতে হয়। সেই তত্ত্ব দিয়েই সাজানো হয় বর-কনেকে। তাই তো গায়ে হলুদের দিন আগেই এসব সাজাতে বসে যান সবাই। কেউ ডালা-কুলা, কেউ বা সুন্দর মোড়কে মুড়িয়ে দিচ্ছেন উপহারসামগ্রী। অনেকে হাঁড়িতে রং করান। এসব হাঁড়ি হলুদের মঞ্চে, মিষ্টির পাত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আগের মতো সুটকেসে করে তত্ত্ব পাঠানোর রীতি কমে গেছে। বিয়ের সামগ্রীগুলোও এখন হলুদের তত্ত্বের সঙ্গেই পাঠানো হয়। সে জন্যই এখন এই তত্ত্ব সাজানোই শিল্পে রূপ নিয়েছে। বৈচিত্র্য ও নতুনত্ব আনার জন্য শুরু হয়ে যায় প্রতিযোগিতা। ফলে এক জায়গা থেকে ছুটতে হয় আরেক জায়গায়। এ রকম ছোটাছুটিতে অনেক সময় প্রয়োজনীয় জিনিসটি কেনা হয় না। তবে সাধ ও সাধ্যের ভারসাম্য বজায় রেখে সহজেই হলুদবরণ উত্সব এমনকি তত্ত্ব সাজাতে পারেন মনের মতো করে। সাজানোর এই কাজটি করে দেয় অনেক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ঢাকার ফ্যাশন হাউস ওপেনটি বায়োস্কোপ একটি। ধানমন্ডির মেট্রো শপিং মলে তাদের শোরুম আছে। এর শোরুম ইনচার্জ মুনিরা আমিন জানান, ‘ক্রেতার রুচি ও সাধ্যের মধ্যেই আমরা সব সাজিয়ে থাকি। গায়ে হলুদের অন্তত সপ্তাহখানেক আগে বুকিং দিলে ভালো হয়।’ তিনি আরও জানান, ‘প্রচলিত ধারার মধ্য থেকেই তত্ত্ব সাজানো হয়ে থাকে। ডালা, কুলা, ঝুড়ি সাজাতে এখন কাতান কাপড়ই বেশি ব্যবহূত হচ্ছে। মিষ্টি, দই, পিঠা, শরবত, পান, নাড়ু, মোয়া, কেক প্রভৃতি খাবার স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পরিবেশন করা হয়। আর এর দাম নির্ভর করে খাবারের পদের ওপর। এ ছাড়া প্রাকৃতিক ফুলের পাশাপাশি শুকনো ও কৃত্রিম ফুলও সরবরাহ করা হয়। হাতে পরার রাখির মধ্যেও আনা হয়েছে বৈচিত্র্য।’
দামদর
ডালা-কুলা পড়বে ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা। খাবারের ডালা ২০০ থেকে ৫০০ টাকা, মিষ্টির হাঁড়ি ও ডালার দাম ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, দইয়ের হাঁড়ি ৬০০ টাকা, ফুলের ঝুড়ি ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা, উপহারের মধ্যে বটুয়া, কার্ড, চুড়ি, মালা, নূপুর, পায়েল, কানের দুল রয়েছে। এসব পাবেন ৫০ টাকার মধ্যে। আপনি চাইলে বাড়িতে গিয়েও তাঁরা সাজানোর কাজটি করে দেবেন।
তবে হলুদ, বিয়ের তত্ত্ব ও এসব সাজানোর সামগ্রী কেনাকাটার জন্য সবার পছন্দের জায়গা এলিফ্যান্ট রোড এবং কাঁটাবনের দোকানগুলো। এলিফ্যান্ট রোডের বর-কনে দোকানের বিক্রেতা সালাউদ্দীন আহমেদ জানান, ‘তত্ত্বের সেটই বেশি বিক্রি হয়। অনেকে সাজিয়েও নিয়ে যান দোকান থেকেই।’ তত্ত্বসহ ডালা-কুলার সেটের দাম ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। হলুদের তোয়ালে ও পাটির দাম ৫০ থেকে ২০০ টাকা। রাখি ৫০ থেকে ২০০ টাকা। আফসান চন্দন ইত্যাদির দাম পড়বে ৭০ টাকার মধ্যে। এ ছাড়া সাজানোর জন্য ছোট পালকির দাম পড়বে ৪০০ টাকা, তত্ত্ব ছাড়া ডালা, কুলা, ঝুড়ির দাম পড়বে ৫০ থেকে ২৫০ টাকা, ফিতা, নানা রকমের মোড়ক, জরির মালা পাবেন পাঁচ থেকে ২৫০ টাকায়। কাপড়ে মোড়ানো বড় ডালা পাবেন ৪৫০ টাকায়। এতে আনুষঙ্গিক সামগ্রী রাখার ছোট ছোট বাটিও পাবেন। ব্র্যান্ড অনুযায়ী প্রসাধনসামগ্রীর সেটও পাবেন এসব দোকানে। হলুদের সঙ্গে উপটানও কিনে থাকেন অনেকে। দাম পড়বে ৩০ থেকে ৪০০ টাকা।
তৌহিদা শিরোপা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ০৫, ২০১০
Leave a Reply