নান্না মিয়ার খাবার বিয়ের কথা ভাবলেই চিন্তা করতে হয় খাবারের কথা। বিয়ের আয়োজনের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে অতিথি আপ্যায়নে খাবারের মানের ওপর। বিয়ের আয়োজন স্মরণীয় করে রাখতে চান সবাই। আর সে জন্য খাবারের মান ভালো হওয়া চাই সবার আগে। ভালো খাবারের জন্য চাই ভালো মানের বাবুর্চি। খাবার সরবরাহ করায় সুনাম আছে এমন কিছু বাবুর্চির খাবার নিয়ে এবারের আয়োজন বিয়ের খাবার।
নান্না মিয়া
বিয়ের খাবারের জন্য নান্না মিয়ার খাবার শুধু পুরান ঢাকা নয়, সারা দেশের মানুষের কাছে পরিচিত। নান্না মিয়া শুরু থেকেই বিয়ের অনুষ্ঠানসহ নানা অনুষ্ঠানে খাবার সরবরাহ করে থাকেন। তিনি খাবারের ব্যবসা প্রথম শুরু করেন পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে প্রায় ৪০ বছর আগে। এরপর ৪২ বেচারাম দেউড়ির গলির বর্তমান দোকানে ব্যবসা শুরু করেন প্রায় ১৫ বছর হয়ে গেছে। এখন তাঁর বড় ছেলে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ব্যবসা পরিচালনা করছেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাঁরা বিয়েতে খাবার সরবরাহ করে আসছেন। মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জানান, একসঙ্গে দেড় হাজার লোকের খাবার সরবরাহ করতে পারেন তাঁরা। এ ছাড়া একসঙ্গে দুই থেকে তিনটি বিয়ের খাবারের অর্ডারও তাঁরা নিতে পারেন। তিনি বলেন, ‘পুরান ঢাকায় আমাদের মোট চারটি শাখা আছে। তবে নতুন ঢাকায় কোনো শাখা নেই। অনেকেই আমাদের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন রকম খাবারের দোকান দিয়েছে। সেখানে গিয়ে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আসল নান্না মিয়ার বিয়ের খাবার পেতে হলে আমাদের আসল দোকানগুলো থেকে খাবার কিনতে হবে। কেননা, চারটি দোকানের খাবার এক স্থানেই রান্না হয়।’ বিয়ের খাবারের ফরমায়েশ দিতে হলে সরাসরি আসতে হবে। টেলিফোনে বিয়ের জন্য কোনো ফরমায়েশ নেওয়া হয় না। যদি খাবারের পরিমাণ বেশি হয়, তবে তিন থেকে চার দিন আগে অর্ডার দিতে হবে; আর যদি কম হয়, তবে এক থেকে দুই দিন আগে অর্ডার দিলেই হবে। তাঁদের খাবারের মধ্যে মোরগ পোলাও ১৫০ টাকা, খাসির কাচ্চি ১৬০, খাসির বিরিয়ানি ১৩০, বোরহানি এক লিটার ৬০, লাবাং এক লিটার ৯০, ফিরনি এক বাটি ১৫, টিকা কাবাব ১৫ টাকা করে রাখা হয়। আর যদি একসঙ্গে সবগুলো খাবারের প্যাকেজ নেওয়া হয়, তবে পরিমাণের ওপর এর দাম নির্ভর করবে। এ ছাড়া প্রতি মাসের ৫ তারিখে নান্না মিয়ার স্পেশাল আস্ত মোরগের কাচ্চি পাওয়া যায়। এর দাম পার্সেল ২২০ এবং প্লেট ২১০ টাকা। মাসের ৫ তারিখ ছাড়াও আগে ফরমায়েশ দিলে মাসের যেকোনো তারিখে তা পাওয়া যাবে, তবে দাম কিছুটা বেশি দিতে হবে।
যোগাযোগ: ০১৭২৬৬৭১৭২৭।
ফখরুদ্দিন অ্যান্ড সনস
বিয়ের খাবারের মধ্যে ফখরুদ্দিন বাবুর্চির খাবারের মান বেশ সুনাম অর্জন করেছে। ফকরুদ্দিনের আদি ব্যবসা ছিল চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে। তারপর তাঁরা পরিবারের সবাই ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় প্রথমে বাদামসহ নানা জিনিস বিক্রি করতেন। কিছুদিন পর ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ছোট্ট একটি খাবারের দোকান দেন ফকরুদ্দিন। আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে তাঁদের খাবারের ব্যবসা। ১৯৯৫ সালে ব্যবসা যখন ভালোর দিকে, তখন ফকরুদ্দিন মারা যান। এরপর ব্যবসার হাল ধরেন তাঁর ছেলে মোহাম্মদ রফিক। ঢাকায় ছয়টি, চট্টগ্রামে একটিসহ দেশের বাইরেও তাঁদের খাবারের দোকান রয়েছে বলে জানান মোহাম্মদ রফিক। প্রতিদিন তিন-চারটি বিয়ের খাবার সরবরাহ করে থাকেন তাঁরা। একসঙ্গে ২৫ হাজার লোকের জন্য আয়োজন করতে পারেন তাঁরা। বেশি লোকের আয়োজন হলে তাঁরা সেখানে গিয়ে রান্না করে দেন। আর যদি সংখ্যা কম হয়, তবে এখানকার (ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ভেতর তাঁদের রান্না করার স্থানে) রান্নাই চাহিদামতো সরবরাহ করে থাকেন বলে জানালেন মোহাম্মদ রফিক। মানুষ যদি বেশি হয়, তবে তিন-চার দিন আগে খাবারের ফরমায়েশ দিতে হবে। আর লোকসংখ্যা যদি কম হয়, তবে দুই-এক দিন আগে ফরমায়েশ দিলেই খাবার সময়মতো পাওয়া যায়। তিনি জানান, খাবারের অর্ডার দিতে হলে নিজে এসে অর্ডার দিতে হবে। টেলিফোনে বড় কোনো অর্ডার তাঁরা নেন না। দেশের যেকোনো এলাকায় গিয়ে তাঁরা রান্না করে দিয়ে আসেন। এমনকি বিদেশে যদি কোনো অর্ডার থাকে, তবে সেখানে গিয়ে তাঁরা রান্না করে দেন। মোহাম্মদ রফিক বলেন, ‘বিদেশে গিয়ে যখন রান্না করি, তখন নিজের দেশের কথা চিন্তা করি। যদি রান্না ভালো হয়, তবে দেশের সুনাম হবে। লোকে বলবে, বাংলাদেশের রান্না অনেক ভালো। আমার কাছে এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া।’
২৫০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিয়ের খাবারের প্যাকেজ দিয়ে থাকেন তাঁরা। এ ছাড়া ২৫০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে সাদা পোলাওয়ের প্যাকেজ আছে। প্যাকেজ ছাড়া কেউ যদি আলাদাভাবে খাবার নিতে চান, তবে তাঁরা কাচ্চি বিরিয়ানি হাফ ১১০ টাকা ও ফুল ১৯০ টাকা; গরুর মাংসের তেহারি হাফ ৬৫ টাকা, ফুল ১৩০ টাকা; মুরগির বিরিয়ানি হাফ ১২০ টাকা, ফুল ১৯০ টাকা; মুরগির রোস্ট ৮০ টাকা, বোরহানি ৩০ টাকা, ফিরনি ২৫ টাকা এবং জালি কাবাব ২৫ টাকার মধ্যে সরবরাহ করেন। যোগাযোগ: ০১৭১১৫২৭৩৭৯।
শওকত তেহারি অ্যান্ড ক্যাটারিং সার্ভিস
অনেক পরিবার আছে, যারা বিয়েতে রান্নাবান্নার কোনো ঝামেলা করতে চায় না। তাদের জন্য চাই ক্যাটারিং সার্ভিস। শওকত তেহারি ঘর অ্যান্ড ক্যাটারিং সার্ভিস বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। শওকত তেহারি ঘর অ্যান্ড ক্যাটারিং সার্ভিসের কর্ণধার শওকত হোসেন বলেন, স্বাধীনতার পর আমাদের ছিল বৈকালিক রেস্টুরেন্ট। এরপর ১৯৮৫ সালে তেহারির ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। মোহাম্মদপুর টাউন হলের এই দোকান ২০০৩ সাল থেকে শুরু করি। আমরা এক থেকে দেড় হাজার লোকের খাবারের আয়োজন করতে পারি। তিনি বলেন, খাবারের মানের সঙ্গে অনেক সময় পরিবারের সম্মান জড়িয়ে থাকে। ভালো খাবার বিয়েতে পরিবেশন করতে পারলে সবার কাছে বিয়ের অনুষ্ঠানটি অনেক ভালো মানের হয়। তাই আমরা চেষ্টা করি বিয়েতে ভালো মানের খাবার পরিবেশন করতে। তিনি বলেন, ‘বিয়ের জন্য বিভিন্ন রকম প্যাকেজ আমাদের আছে। একটি প্যাকেজ আছে, যেখানে তাদের সবকিছু নিজেদের কিনতে হবে। আমাদের বাবুর্চিরা গিয়ে শুধু রান্না করে দিয়ে আসবে। আরেকটা প্যাকেজ আছে, যেখানে তারা মেনু দেবে আর লোকের সংখ্যা বলবে, আমরা নিজেদের দায়িত্বে সব কিছু করে দেব। এ ছাড়া আমাদের কিছু খাবারের তালিকা আছে। সেখান থেকে পছন্দ করে দিলে আমরা তা সরবরাহ করব। যেমন: কাচ্চি, গ্রিলড মুরগি, আলু বোখারার চাটনি, বোরহানি, সালাদ, জর্দা, ফিরনি, পানি—এই প্যাকেজের দাম ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। সাদা পোলাও, খাসির রেজালা, মুরগির রোস্ট, জর্দা, বোরহানি, পানি—এই প্যাকেজের দাম ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা। এ ছাড়া আমরা গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে খাবার সরবরাহ করে থাকি। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে তেহারি, বোরহানি, কাবাব, পানি ১৩০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। গায়েহ লুদের এই খাবারের সঙ্গে খাসির মাংস দিলে দাম ১৮০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে।
যোগাযোগ: ০১৯১৬০৩৫৩১১।
বাদল খান
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ০৫, ২০১০
Leave a Reply