ইদানিং ভারতীয় চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত ডেইলি সোপ আমাদের দেশে কতটা প্রভাব বিস্তার করে তার প্রমাণ পাওয়া যায় চাদনীচক কিংবা মৌচাক মার্কেটে মেয়েদের পোশাকের দোকানগুলোতে গেলে। এসব সিরিয়ালে দেখানো চোখ ধাঁধানো ইন্টেরিয়র দেখে মনে হতে পারে এগুলো আসলে ক্যামেরার কারসাজি। কাঠ খোদাই করা বিশাল দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতেই নজরে আসে বিশাল আকৃতির সিঁড়ি ঘরের দুপাশ বেয়ে উঠে গেছে উপর তলার ঘরগুলোতে। ক্যামেরার প্যান ইফেক্টে এসব সিঁড়ি দেখতে মনে হয় সিড়িগুলো বুঝি সিনেমারই একটি অংশ। কিন্তু আধুনিক ইন্টেরিয়র কনসেপ্ট বলছে ভিন্ন কথা। ইন্টেরিয়রের অংশ এই সিঁড়ি খুব সহজেই বাড়িতে পুরো দৃশ্যপট বদলে দিতে পারে। সিঁড়ি যে শুধুই দুটি ভিন্ন তলার মাঝে যোগাযোগ তৈরি করবে এমন কিন্তু নয়। এক চিলতে নান্দনিক সিড়ি ঘরের অভ্যন্তরিন সৌন্দর্যে বিরাট ভুমিকা রাখতে পারে।
০ এমএইচ মিশু ০
ইন্টেরিয়রের সাথে সংযুক্ত করতে এই সিড়ি নানান ভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সিঁড়ির ব্যবহার নির্ভর করছে আপনার বাড়ির আকৃতি, আয়তন ও ঘরের বাদবাকি ইন্টেরিয়রের অবস্থানের উপর। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার জায়গাটা তাই আগে ঠিক করে নিন। সিঁড়ি তৈরিতে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন:
০ সিঁড়িটা এমন জায়গাতে হতে হবে যে স্থানটার অবস্থান মোটামুটি ঘরের সব জায়গা থেকেই দেখা যাবে।
০ উপরটা জুড়ে দিতে পারেন ডুপ্লেক্স দোতলায়। সেক্ষেত্রে সিড়ির অবস্থানটা ঘরের এক পাশ থেকে তৈরি করুন। আর চেষ্টা করুন সিঁড়ির নিচটা ব্যবহার উপযোগী করে রাখতে।
০ যদি সিঁড়ি ছাদের সাথে জুড়তে হয় তাহলে সিঁড়ির অবস্থান হতে পারে ঘরের ঠিক মাঝখান থেকে। আর এই সিঁড়ির অবস্থান এমন হতে হবে যেনো সব ঘর থেকেই সহজে এই সিঁড়ি ব্যবহার করে উপরে ছাদে ওঠা যায়।
০ অনেক সময় বাড়ির বাইরের বাগান থেকে সিঁড়ি পেঁচিয়ে ঘরের মধ্যে টেনে আনা যায়। তবে সেক্ষেত্রে বাইরের সিঁড়িটা কোনো বড় জানালা, দরজা অথবা কাঁচের দেয়াল ঘেষে হওয়া উচিৎ যেন ঘরের ভেতর থেকেও বাহিরের সিড়িটার অবস্থান টের পাওয়া যায়।
সিড়ি তৈরির উপকরণেও ভিন্নতা রাখতে পারেন। চমক তৈরি করতে চাইলে এই সিড়িটা এমন হতে হবে যেনো এই সিঁড়িতেই প্রকাশ প্রায় আপনার রুচি, নান্দনিকতা আর ঘরময় ইন্টেরিয়রের একটা প্রতিচ্ছবি।
০ পুরো ঘরের ইন্টেরিয়রে যদি এথনিক ভাবটা বজায় রাখতে চান তাহলে সিঁড়িটা কাঠের তৈরি করুন। ঘরের মাঝের সিঁড়িটা একটু হালকা ডিজাইনের হলেই ভালো। এই ধরুন মোটা একটা থামের গায়ে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে ল্যাকার পলিশ কাঠের এক একটা তাক দিয়ে তৈরি করুন সিড়ি, সঙ্গে কাঠের হাতল ব্যবহার করতে পারেন। এমন সিঁড়ি কিছুটা আধুনিক আবার সাথে এথনিক ভাবও বজায় থাকবে।
০ যদি ইন্টেরিয়র পুরোপুরি জিওমেট্রিক স্টাইলের হয় তাহলে সিঁড়িতেও তার একটা আঁচ রাখতে পারেন। সেক্ষেত্রে সিড়ি তৈরিতে অ্যালুমিনিয়াম অথবা স্বচ্ছ চাচ্ ব্যবহার করতে পারেন।
০ সিড়ির হাতলে কিছুটা ভিন্নতা আনতে স্টেইনলেস স্টিলের ফ্রেম অথবা রাফ কাঠ ব্যবহার করতে পারেন। অন্দরের সিঁড়িগুলোতে হাতলটা একটু হালকা গড়নে তৈরি করুন। তবে যদি বাড়িতে বাচ্চা-কাচ্চা খুব বেশী না থাকে তাহলে হাতল ছাড়াই ছেড়েদিন সিঁড়িটাকে। দেখতে মন্দ লাগবে না।
০ যদি পুরো সিড়িটা সিমেন্টে তৈরি করতে হয় তাহলে সিমেন্টের ্যাব দিয়ে তৈরি করুন সিঁড়ির তাকগুলো। খেয়াল রাখুন তাকগুলোর মাঝে যেনো ফাঁকা জায়গা থাকে। নচেৎ সিঁড়িটা ঘরের মাঝে একটা দেয়াল হেয় দাঁড়িয়ে যাবে।
ঘরের এই সিঁড়িকে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে সাজাতে ইন্টেরিয়রগত কিছুটা পরিবর্তন আনুন। এতে করে আপনার গড়া এতো যত্নের সিঁড়িটা আর একটু প্রাধান্য পাবে। প্রথমেই এর জন্য সিঁড়ির পাশের দেয়ালটাতে একটু পরিবর্তন আনুন। দেয়ালটা একটু রাফ হতে পারে। এর জন্য রাফ টাইলস ব্যবহার করতে পারেন। কাঠের কোনো পরত দিয়েও তৈরি করতে পারেন এমন একটা দেয়াল। এই দেয়ালটা যদি ভেঙে নতুন করে তৈরি করতে পারেন তাহলে কাঁচের ব্লক দিয়েও তৈরি করতে পারেন নতুন দেয়াল। এতে করে আলোর যোগাযোগটা যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি দেয়ালটাও ভিন্নতা পাবে। দেয়াল সাজাতে ব্যবহার করুন বড় কোনো পেইন্টিং। ছোট ছোট ৩-৪টা পেইন্টিং ব্যবহার করতেও চাইলে এই দেয়ালটি ব্যবহার করা যেতে পারে কিন্তু তাহলে দেয়ালের লাইটিংটা একটু মনোযোগ দিয়ে সাজাতে হবে। ছোট ঘরে সিঁড়িটা এমন করে তৈরি করুন যেনো এর বাইরের অংশটা ব্যবহার করা যায়। সিঁড়ির পাশ ঘেষে একটা ছোট্ট বসার জায়গা সাজাতে পারেন। অথবা সিঁড়ির নিচের অংশে সাজাতো পারেন ছোট একটা ডাইনিং। সিঁড়ির আলোকসজ্জাটা একটু ভিন্ন আঙ্গিকে সাজাতে উপযোগী অনেক ধরনের লাইট এখন দেশেই পাওয়া যায়। উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ঝুলে থাকবে এমন কিছু লাইটও এখন বিক্রি হচ্ছে আমাদের লাইটিং শোরুম গুলোতে। সিঁড়ির উপর থেকে স্পট লাইট সাজিয়ে তৈরি করুন আলো ছায়ার ছায়াপথ।
Leave a Reply