তরুণ বয়সটা একটু কেমন যেনো। নিয়ম-নীতির বেড়াজালে একে কখনোই আটকে রাখা যায় না। সব বাঁধন ছিন্ন করে এই বয়সের ছেলে-মেয়েরা দাপিয়ে বেড়ায় জীবন চলার পথ। কিন্তু এই রঙিন আর আলোকোজ্জ্বল দিনাতিপাতেও কখনো নেমে আসে কালো মেঘের ছায়া। তখনই বাঁধে গোল। কিছুই ভালো লাগে না। ঠিকমতো চিন্তা করতেও মন সায় দেয় না। এমন সময়ে চাই পজিটিভ থিঙ্কিং বা ইতিবাচক মনোভাবনা। ইতিবাচক নিয়েই আমাদের এবারের মূল ফিচার লিখেছেন মোর্শেদ নাসের
সকাল দশটায় পরীক্ষা শুরু হবে ইশিতার। কোনো টার্ম পরীক্ষা নয়, কেবল ক্লাস টেস্ট। কিন্তু এই ক্লাস টেস্ট বা সি.টি.’র মার্ক যোগ হবে ফাইনালের সাথে, তাই ইশিতার চিন্তার অন্ত নেই। শুধু কি তাই, আ্যসাইনমেন্ট জমা দেয়ার শেষ তারিখও আজকে। গত রাতে তিনটা পর্যন্ত জেগে আ্যসাইনমেন্ট তৈরি করেছে সে। এরপর বাকি রাত ঘুম হয়নি বললেই চলে। কোনো রকম বিছানায় গড়াগড়ি আর কি। সকাল বেলা বিছানা ছেড়ে উঠেই রেডি হলো কলেজে যাওয়ার জন্য। সবকিছু গোছগাছ করে যখন দেখলো রাত জেগে করা অ্যাসাইনমেন্ট ফাইলটি টেবিলে নেই তখনই মেজাজ গেলো বিগড়ে।
এহেন পরিস্থিতি নিশ্চয়ই আপনার কাছে চেনা চেনা ঠেকছে। আর তা হওয়ারই কথা। একবিংশ শতাব্দির এই বিশ্বায়নের যুগে, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে আমরা প্রায়শই তাল হারিয়ে বেতাল হয়ে পড়ি। কখনো মনে হয় সবকিছুর ডেডলাইন মেইনটেন করাই যেন আমাদের একমাত্র ব্রত। কোনোভাবে যদি এই ইঁদুর দৌঁড়ে কেউ পিছিয়ে পড়ে, তখনই তাকে গ্রাস করে নেয় একরাশ হতাশা আর বিষন্নতা। কিন্তু তাই বলে কি এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনো উপায় নেই। আছে, অবশ্যই আছে। বিষন্নতা, হতাশা, স্ট্রেস জাতীয় সমস্যার সমাধানে একটাই মোক্ষম অস্ত্র, পজিটিভ থিঙ্কিং বা জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি।
আমাদের মনে প্রতিনিয়ত যেসব হাজারো চিন্তা-ভাবনা দোলা দেয় তা আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের মতোই স্বাভাবিক। যেকোনো রকম পরিস্থিতিতেই আমরা এমন অবস্থার মুখোমুখি হতে পারি। আর শত চেষ্টা করেও আমরা একে রুখতে পারবো না। আমরা মনে যা ভাবছি তা প্রভাব ফেলে পরবর্তী কর্মকান্ডের ওপর। ধরা যাক আপনি কারো ব্যবহারে খানিকটা রুষ্ট। সেই ক্ষোভ থেকে হয়তো দিনের শেষভাগে কারো সাথে এমন কোনো ব্যবহার করলেন যাতে তিনিও ক্ষেপে গেলেন। আপনি নিজেও হতাশায় ডুুবলেন, অন্যকেও ডোবালেন। কিন্তু কেন? এমনটা না করলেও তো পারতে। জীবনের নানা চ্যলেঞ্জ, প্রতিকূলতা জয় করার একটাই মূলমন্ত্র পজিটিভ থিঙ্কিং। মনে হতে পারে বিষয়টি বলা সহজ কিন্তু করা কঠিন। আসলে তা নয়। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে আপনার কেবল একটি এলিমেন্টস থাকা চাই। আর তা হলো আত্মবিশ্বাস। আলোকোজ্জ্বল, বর্ণময় জীবনের জন্য এই ইতিবাচকতা খুব জরুরি, কারণ এটি আপনার জীবনকে বিবর্ণ হতে দেয় না।
নিজের চিন্তা-ভাবনার ওপর নিয়ন্ত্রণ আনুন। যে ঘটনা আপনার মনে অস্বস্তি সৃষ্টি করছে, সেই ঘটনাকে যুক্ত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করুন। যদি তোমার কোনো দোষ থাকে তবে সেটি স্বীকার করে নিন এবং পরবর্তীতে এমনটি করবেন না বলে শপথ করুন।
বন্ধুদের মধ্যে যারা পজিটিভ থিঙ্কার তাদের সাথে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন। আপনারা প্রত্যেকে প্রত্যেকের কর্মদক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবেন, এটা খুবই স্বাভাবিক। একজনের সংকটময় মুহূর্তে যখন দশজন পজিটিভ মানুষ পাশে এসে দাঁড়াবে তখন সেই একজনের মধ্যে স্বভাবতই পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হবে। আমার দ্বারা কিচ্ছু হবে না কিংবা আমি একটি অপদার্থ, এ ধরণের চিন্তাভাবনা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে আসুন। এসব ভাবনা আপনাকে পজিটিভ হতে বাঁধা দেবে। বরং আমিই এই কাজটি পারবো, আমার দ্বারা সম্ভব, এমন ভাবনা ভাবুন।
বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। বই আপনাকে নানা রঙের পৃথিবী দেখাবে। সেই নানা রঙের পৃথিবীকে আপনি আপনার মতো করে সাজিয়ে নিতে পারবেন। তাছাড়া বইয়ের মাধ্যমে আপনার জ্ঞান বাড়বে, ফলে যুক্তিবোধ প্রখর হবে।
নিজের লক্ষ্য ঠিক করুন। পড়াশোনা, ক্যারিয়ার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে পজিটিভলি ভাবুন। সপ্তাহের শুরুতে নিজের কাজের একটি চেকলিস্ট তৈরি করে নিন। সেই অনুযায়ী কাজ করুন। দিনের শেষে সারাদিনের যা করলেন সেটা নিয়ে ভাবুন। যেটা পারেননি সেটা নিয়ে চিন্তিত না হয়ে যেটা পেরেছেন সেটা নিয়ে চিন্তা করুন। আর যেটা পারেননি সেটা কাল কিভাবে পারবেন তাই ভাবে। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই চাই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বিচার। তা হলে দেখবে জীবনটা কতো সহজ হয়ে গেছে।
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক, ডিসেম্বর ১৯, ২০০৯
Leave a Reply