কিছুদিন আগেও গৃহসজ্জার নিত্যপ্রয়োজনীয় আসবাব থেকে শৌখিন সামগ্রী সবকিছুতেই আমরা ছিলাম বিদেশনির্ভর। চিনামাটি, সিরামিকস, ক্রিস্টালের আড়ালে হারিয়ে যেতে বসেছিল আমাদের দেশীয় পাট, মাটি, বেত, বাঁশের তৈরি গৃহসজ্জার সামগ্রী। বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাব এসে পড়েছিল আসবাবের নকশায়। তবে ইদানীং দেশি এই পণ্যগুলো আবারও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আর অন্দরসজ্জায় এসব দেশীয় সামগ্রীর ব্যবহারে ঘরগুলো হয়ে উঠছে যেন দেশপ্রেমের স্মারক। এসব দেশীয় পণ্যের মধ্যে আছে কাঠের আসবাব, পটারি, মুখোশ, চিত্রকর্ম, ল্যাম্পশেড, শতরঞ্জি, পর্দার কাপড়, কুশন কাভার, বিছানার চাদর ইত্যাদি। এসব পণ্য দেখতে খুবই নান্দনিক। সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই থাকে এবং খুব সহজেই পাওয়া যায়। তাই ঘর সাজানোয় এসব পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে বলে জানালেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার গুলশান নাসরীন চৌধুরী। মেঝের সজ্জা থেকে সিলিংয়ের সজ্জা—সব জায়গায়ই এসব পণ্যের ব্যবহার ঘরে আনে নান্দনিকতা। অনেকেই এমন দেশীয় পণ্যের প্রতি ভালোবাসা থেকে ঘরের মেঝেতে টাইলস, মোজাইকের পরিবর্তে করছেন কাঠের ব্যবহার, শতরঞ্জি, পাট, দড়ির পাপোস দিয়ে মেঝের সজ্জা। বসার ঘরের দেয়ালে করা হচ্ছে মুখোশের ব্যবহার, বিভিন্ন বিখ্যাত শিল্পীর আঁকা চিত্রকর্মও স্থান পাচ্ছে। ঘরের কোণগুলোয় রাঙাতে করা হচ্ছে বেত, বাঁশ, কাপড় ও কাগজের তৈরি বাহারি ল্যাম্পশেডের ব্যবহার। এ ছাড়া খাবার টেবিল, শোকেস, বুকশেলফ এবং টেবিল সজ্জায় দেশীয় জিনিসের ব্যবহারে ঘরে নিয়ে আসা হচ্ছে বৈচিত্র্য। খাবার টেবিলের ওপর দেশী কাপড়ের তৈরি রানার রাখতে পারেন। শোকেস, বুকশেলফ ও টেবিলের ওপর কাঠের ছোট ফুলদানি রেখে এর ওপর ছোট রংবেরঙের মোমের শোপিস রাখতে পারেন। এ ছাড়া ঘরের যে কোনো একদিকের দেয়ালে ছয় ইঞ্চি প্রস্থের শোকেস বানিয়ে এর ভেতর রাখতে পারেন বিভিন্ন ডিজাইনের মাটির শোপিস। এ ছাড়া সুতা দিয়ে বেঁধে বিভিন্ন ধরনের কাপড়ের পুতুল ঝুলিয়ে দিতে পারেন সিলিং থেকে। বিভিন্ন ঘরের পার্টিশন হিসেবে করতে পারেন বেতের ব্যবহার।
দেশীয় এই অন্দরসজ্জার সামগ্রী পাওয়া যাবে আড়ং, ডেকোর, যাত্রাসহ আরও কয়েকটি দোকানে। যাত্রার সমন্বয়কারী কামাল আহমেদ মারুফ জানান, মূলত রিকশা পেইন্টিং ও লোকসংস্কৃতির বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে যাত্রার গৃহসজ্জার পণ্যগুলোয়। এখানে রয়েছে গৃহসজ্জার সামগ্রীর এক বিশাল সম্ভার। মাটির পটারি, আয়না, কলমদানি, ল্যাম্পশেড, ছবির ফ্রেম ছাড়াও সিডির তাক, বইয়ের তাক, ছোট পিঁড়িতে হ্যান্ড পেইন্টিংয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গ্রামীণ লোকজ কাহিনীগুলো। এ ছাড়া বেত ও বাঁশের আসবাব দিয়ে কীভাবে সাজাবেন অন্দরটিকে, সে ধারণা পেতে হলেও চলে আসতে পারেন যাত্রায়। বেত-বাঁশের ডাইনিং টেবিল, দোলনা, ড্রেসিং টেবিল, সোফাসেট, খাট দিয়ে ঠিক ঘরের আদলেই সাজানো হয়েছে তাদের শোরুমটি। মাটি ও পাটের তৈরি জিনিসগুলো একসময় শুধু পাওয়া যেত পয়লা বৈশাখের মেলায়। দেশীয় ফ্যাশন হাউস আড়ং এই পণ্যগুলোর স্থায়ী স্থান করে দিয়েছে মানুষের মনে। গরুর গাড়ি, ময়ূরপঙ্খি, নৌকা, পালকি, বউ, মাটির ঘণ্টাসহ বিভিন্ন নকশার শোপিস পাবেন আড়ংয়ের প্রতিটি শোরুমে। এ ছাড়া বাঙালি সংস্কৃতির উত্সব এবং গ্রামীণ জীবনের গল্প সুঁই-সুতা দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কাপড়ের তৈরি আড়ংয়ের ওয়ালম্যাটগুলোয়। দেশীয় আমেজের অন্দরসজ্জায় মুখোশ খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এখন। বাঙালি সংস্কৃতির ধারক এই মুখোশগুলো পাওয়া যাবে আজিজ সুপার মার্কেটের দেশীয় গৃহসজ্জার সামগ্রীর দোকানগুলোয়।
বিপাশা রায়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ১৫, ২০০৯
Leave a Reply