ষড়ঋতুর পালাবদলে আমাদের দুয়ারে শীতকাল। হিম হিম এই সময়ে গাছ হয়ে পড়ে পত্র-পুষ্পহীন শুকনো। অন্যদিকে মানুষের নাজুক ত্বক শুষ্ক হয়ে ফেটে যেতে চায়। সূর্যের আলট্রাভায়োলেট-রে (অতি বেগুনী রশ্মি) শরীরের খোলা অংশে নানা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। চুল থেকে ঝলমলে ভাব উধাও হয়ে গিয়ে চুল বিবর্ণ ও মলিন হয়; মাথায় খুশকির প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। ঠোঁট ফেটে হয় চৌচির। কপালে অকালে বলিরেখা দেখা দেয়।
ত্বকের যত্ন
ত্বকের প্রকৃতি বা ধরণ অনুযায়ী ত্বকের যত্ন নিতে হয়। ত্বক সাধারণত চার ধরনের – স্বাভাবিক, তৈলাক্ত, রুক্ষ ও মিশ্র। স্বাভাবিক ত্বকে ত্বকের তেল ও আর্দ্রতার ভারসাম্য থাকে। যদি কখনো খুব রুক্ষ বা খুব তেলতেলে না হয়ে যায়, তাহলে বুঝবেন আপনার ত্বক স্বাভাবিক। অন্যদিকে যদি আপনার ত্বক সারাক্ষণ তেলতেলে থাকে, তাহলে রাতে মুখ পরিষ্কার করার পরে সকালে উঠে একটি শুকনো টিস্যু মুখে নিয়ে চেপে ধরুন। যদি দেখেন তাতে তেলের প্যাচ রয়েছে, তাহলে বুঝবেন আপনার ত্বক তৈলাক্ত ধরণের। যদি মুখ ধোয়ার পরে ত্বকে টান ধরে ক্রমাগত, তাহলে বুঝবেন আপনার ত্বক মিশ্র ধরণের।
ত্বক পরিষ্কারের উপায়
আমরা আগেই উল্লেখ করেছি যে, ত্বকের ধরণ অনুযায়ী ত্বকের যত্ন নিতে হয়। আর ত্বক পরিষ্কারের ক্ষেত্রেও এই কথাটি খাটে।
১। রুক্ষ ত্বকের অধিকারীদের বারবার সাবান দিয়ে মুখ ধোয়া উচিত নয়। তারা ক্লিনজার ব্যবহার করতে পারেন। মুখে ক্লিনজার মেখে কোন কাপড় বা টিস্যু পেপার দিয়ে মুখে সঠিকভাবে পরিষ্কারের কাজটি করতে হবে। এছাড়া ভাল ময়েশ্চারাইজিং সাবান দিয়ে মুখ ধুয়ে সঙ্গে সঙ্গে তোয়ালে দিয়ে চেপে চেপে পানিটুকু শুষে নিয়ে তখনি মুখের ভেজা ভাব থাকা অবস্থায় ভাল কোল্ডক্রীম বা ময়েশ্চারাইজার বা গ্লিসারিন বা ভেসেলিন মেখে নিলে ত্বক সজীব থাকবে। অন্যদিকে যাদের ক্লিনজার বা দামি ময়েশ্চারাইজার সাবান ব্যবহারে সামর্থ নেই – তারা গ্লিসারিন সোপ ব্যবহার করতে পারেন। তবে গোসলের সময় তারা সাবান দিয়ে দিনে দু’বারের বেশী মুখ ধোয়া ঠিক হবে না। তবে চার-পাঁচবার পানি দিয়ে ভেজানো যাবে।
শীতে রুক্ষ ত্বকের অধিকারী এবং নামাজিদের বারবার পানির সংস্পর্শে যেতে হয় – এতে তাদের ত্বক আরো রুক্ষ হয়ে পড়ে। তারা প্রতিবার ত্বক ভেজানোর পর ত্বকে কোল্ডক্রীম, গ্লিসারিন, ভেসেলিন ইত্যাদির যে-কোনটি মেখে নিলে ত্বক আরো বেশী সজীব হবে। তবে ত্বক দশ-বিশ মিনিটের বেশী পানিতে ভেজা থাকলে তা ত্বকের জন্য ভাল নয়। কারণ এতে ত্বকের ওপরের স্তরের প্রতিরোধক তৈলাক্ত স্তরটি নষ্ট হয়ে যায়।
২। যাদের ত্বক বেশী রুক্ষ অর্থাৎ সামান্য শীতেই যাদের মুখমন্ডল শুষ্ক হয়ে পড়ে – এই ধরণের ত্বকের ক্ষেত্রে মুখমন্ডলে জেলী অথবা গ্লিসারিন মাখলে অনেক সময় ত্বকে চিটচিটে ভাব দেখা যায়। এই অবস্থায় তোয়লে দিয়ে চেপে মুখমন্ডল থেকে বাড়তি গ্লিসারিনটুকু শুষে নিলে অনেকটা স্বস্তি লাগবে। তবে যেকোন ক্রীম ব্যবহারের আগে মুখ ধুয়ে নেয়া উত্তম। গ্লিসারিন সোপ/ ময়েশ্চারাইজিং সোপ দিয়ে মুখ ধুয়ে এবং মুছে নিয়ে পেট্রোলিয়াম জেলি বা গ্লিসারিন আবার মুখে লাগাতে হবে।
৩। যাদের ত্বক তৈলাক্ত, শীতের সময় ত্বক-সম্পর্কিত সমস্যা তাদের কম হয়। তবে ত্বকের যত্নের সাধারণ বিষয়গুলো তাদেরকেও মেনে চলতে হবে। যেমন- সাদা রং-এর টয়লেট সোপ দিয়ে মুখ ধোয়া এবং মুখ ধোয়ার পর মুখ মুছে তখনি কোল্ডক্রিম লাগাতে হবে। যাদের মুখ সাধারণত তৈলাক্ত তারা মুখে ভিটামিন-ই ক্রিম মাখতে পারেন। এই ধরণের ক্রিমে মুখ তেলতেলে লাগবে না অথচ সজীব থাকবে। এছাড়া অন্যান্য কোল্ডক্রিম বা হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। তবে গ্লিসারিন বা ভেসলিন মাখার দরকার নেই।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ডিসেম্বর ০৮, ২০০৯
Leave a Reply