আমি নবম শ্রেণীতে পড়ি। ছোটবেলা থেকেই আমি মেধাবী। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছি। ক্লাসেও রোল নম্বর সব সময় প্রথম তিনজনের মধ্যেই থাকত। কিন্তু নবম শ্রেণীতে ওঠার পর প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় আমি একটি বিষয়ে এক নম্বরের জন্য অকৃতকার্য হই। অথচ বাকি সব বিষয়েই এ প্লাস ছিল। এই ফলাফলের পর থেকেই আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। পড়াশোনা করার জন্য নিজেকে উত্সাহ দিতে চেষ্টা করি। কিন্তু পড়তে বসলেই ১০-১৫ মিনিট পরই মাথা ভারী হয়ে আসে। তখন আমি আর পড়তে পারি না। যখনই প্রথম সাময়িক পরীক্ষার ফলাফলের কথা মনে পড়ে, তখনই আমার খুব কান্না পায়। বারবার মনে হচ্ছে, যদি দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায়ও ফেল করি, তাহলে আমার আত্মহত্যা করা উচিত। আমি জানি, আত্মহত্যা মহাপাপ। কিন্তু এ ছাড়া আমি আর কোনো পথ দেখতে পাচ্ছি না। কারণ, আমি মা-বাবার কষ্ট সহ্য করতে পারি না। অথচ আমিই কিনা তাদের বারবার কষ্ট দিই। আর কয়েক দিন পর আমার দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা। পড়ায় ঠিকভাবে মন দিতে পারছি না। কী করা উচিত?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
তোমার চিকিত্সকের পরামর্শ প্রয়োজন। পরীক্ষায় খারাপ করা নিয়ে তুমি খুব বেশি ভেঙে পড়েছ। সাময়িক পরীক্ষা তো ফাইনাল পরীক্ষা নয়। তবু তোমার কষ্টটা ঠিক আছে। আম্মুকে বলো, তোমার এক আন্টি বলেছেন, চিকিত্সকের কাছে গেলে তিনি অনেক ভালো উপদেশ দেবেন।
আমি বিবাহিত। এক সন্তানের মা। চাকরি করি। স্বামীর সঙ্গে পাঁচ বছরের সম্পর্কের পর বিয়ে হয়। সন্তানের বয়স তিন বছর। আমার স্বামী তার এক সহকর্মীকে ভালোবাসে, তাদের মধ্যে দৈহিক সম্পর্কও রয়েছে। সেও বিবাহিত। তিন সন্তানের মা। প্রথম থেকে তাদের সম্পর্কের কথা বিভিন্নভাবে আমার কানে আসতে থাকে। আমার স্বামীর প্রতি অন্ধবিশ্বাসের কারণে শোনা কথা উড়িয়ে দিয়েছিলাম। যখন আমি এর সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হই, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। স্বামীকে ফেরানোর অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু তাতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ওপর অত্যাচার চালায়। এখন আমার কী করা উচিত?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
যশোর।
আপনি এমন একটি অবস্থা মেনে নেবেন কেন? আপনার সরে আসা উচিত। আপনি যখন বিয়ে করেছেন তখন তো আর জানতেন না যে লোকটা এমন করবে। এখন যদি অন্য সব সামাজিক কারণে এটা মেনে নিতে হয়, তাহলে এটাও মেনে নিতে হবে, আপনার সংসার জীবন হবে কষ্টের। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বেশ কিছুদিন আপনার স্বামী এই সম্পর্ক চালিয়ে যাবেন।
আমি স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। কয়েক মাস আগে ভিন্ন ধর্মের এক সহপাঠীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তার আগ্রহে আমি আমার জীবনের অনেক কথাই তাকে বলি। সবকিছু শুনে সে আমাকে বন্ধু হিসেবে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিছুদিন পর বুঝতে পারি, তার বন্ধুত্বের আড়ালে অন্য কিছু চাওয়া-পাওয়া আছে। বুঝতে পেরে আমি তার কাছ থেকে সরে আসতে চাই, কিন্তু পারি না। কিছুদিন আগে তার সঙ্গে আমার শারীরিক সম্পর্ক হয়। সম্পর্কের দুদিন পর সে আমাকে বলে আমি নাকি আরও ছেলের সঙ্গে এমন সম্পর্কে জড়িয়েছি। কিন্তু আমি প্রথমেই তাকে বলেছি, এ রকম সম্পর্কে আমি কখনোই আর জড়াইনি। কিন্তু সে তা মানতে রাজি নয়। আমি নাকি তার সঙ্গে অভিনয় করেছি, তাই সেও আমার সঙ্গে অভিনয় করেছে। সে আমার সঙ্গে আর যোগাযোগ করছে না। কিন্তু শারীরিক সম্পর্কের পর থেকে আমি তাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছি। নিজেকে খারাপ মেয়ে বলে মনে হচ্ছে। মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে যাচ্ছি। আমি কী করব বা করা উচিত কিছুই বুঝতে পারছি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
আপনার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই পাপবোধ নিজের মন থেকে উপড়ে নিতে হবে। দেখুন, ছেলেটি অন্যায় করেছে। আপনি নন। ছেলেটি প্রতারক। আপনি শুধু শুধু কেন নিজেকে কষ্ট দেবেন।
আমার বয়স ২৮। স্ত্রীর বয়স ২০। স্ত্রী পড়ালেখা করেছে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত। আমি স্বল্প আয়ের চাকরিজীবী। ২০০৮ সালে বিয়ে করি। তখন বিয়ের ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু বাবা আত্মহত্যা করবে বলে হুমকি দিলে বিয়ে করতে রাজি হই। বিয়েটা মূলত বাবার পছন্দেই হয়েছিল। সমস্যাটা আমার স্ত্রীকে নিয়ে। আমি তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে উঠছি না। তাকে বলি আঞ্চলিকতা পরিহার করো, আমার সঙ্গে অনর্গল সাধু ভাষায় কথা বলো, ধর্মীয় বইসহ বিভিন্ন রুচিশীল বই কিনে দিয়েছি ওগুলো পড়ো। কিন্তু সে তা শোনে না। বিয়ের বয়স প্রায় ১৫ মাস। কিন্তু আজও তাকে কোনো দিন দেখিনি পড়তে বা লিখতে। তারপরও ভাগ্যকে মেনে নিলাম। ভোগের বস্তু হিসেবে নয়, স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে ভালোবেসে আমার মতো করে তৈরি করতে চাইছি। কিন্তু সে সবকিছুতেই না-সূচক মাথা নাড়ে। সামাজিক ও পারিবারিক পরিবেশে কীভাবে চলতে হয়, মানুষের সঙ্গে কীভাবে কুশল বিনিময় করতে হয়, এসবও সে জানে না। এ ছাড়া তার শারীরিক গঠনও ভালো নয়। ফেব্রুয়ারি মাসে সে একটা মৃত সন্তান প্রসব করেছে। এসব চিন্তায় মন খুলে হাসতে পারি না। ইদানীং কোনো আত্মীয়স্বজন দেখলে খুব রাগ হয়। বাবাকে একদম সহ্য করতে পারি না। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছি। তালাক দেওয়ার ব্যাপারেও ভাবছি। কাবিননামা দেওয়া হয়েছে দেড় লাখ টাকা। কিন্তু একদিকে দারিদ্র্য, অন্যদিকে স্ত্রীকে নিয়ে দুশ্চিন্তা। এখন আমি কী করব?
খোরশেদ
বাইট্রাপাড়া, লংগদু, রাঙামাটি।
বাবার কথা মাথায় রেখে যখন বিয়ে করেছেন, মা-বাবা, পরিবারের কথা ভেবে বিয়েটা টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করুন। মেয়েটা কি এ বিয়ের ব্যাপারে এতটাই অসন্তুষ্ট, যতটা আপনি? বিয়ে করে মানুষ ভাঙার জন্য নয়, একটি পরিবার গঠনের জন্য। যাকে ইংরেজিতে বলে ‘গিভ ইট অ্যানাদার ট্রাই’, আপনাকে আমি সেই পরামর্শই দেব।
আমার বয়স ২৩। আমি ডিপ্লোমা প্রকৌশলেপড়ালেখা করছি। গত বছর হঠাত্ আমার মোবাইল ফোনে একটা মিসড কল আসে। সেই থেকে তার সঙ্গে পরিচয়। এরপর মাঝেমধ্যে তার সঙ্গে কথা হয়। একপর্যায়ে দুজন বন্ধু হয়ে যাই। সে আমাকে ভালোবাসে বলে ফোনে জানায়। কিন্তু তার সঙ্গে তখনো আমার দেখা হয়নি। শুধু ফোনে কথা হতো। আমিও তার ভালবাসায় সাড়া দিই। তারপর থেকে মোবাইল ফোনে আরও অনেক বেশি কথা হতো। দুজন-দুজনার সঙ্গে কথা না বললে ভালো লাগত না। হঠাত্ একদিন তার বিয়ে হয়ে যায়। অবশ্য বিয়ের আগে সে আমার কাছে চলে আসতে চেয়েছিল। আমি বলেছিলাম, আমিও তো এখন পড়ালেখা করছি। এক বছর অপেক্ষা করতে তাকে অনুরোধ করি। সে রাজি না হয়ে বিয়ে করে ফেলে। সে তখন স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ছাত্রী। কিন্তু বিয়ের পর থেকে সে স্বামীর সংসার মেনে নিতে পারছে না। আমাকে ফোনে বলে, আমি তোমাকে এখনো ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি অন্য কিছুই ভাবতে পারি না। সে আরও বলেছে, বিয়ের পাঁচ মাসেও স্বামীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক হয়নি। আমার জন্যই নাকি এটা করেছে। এখন বলে আমি তোমার কাছে আসতে চাই, তা না হলে আমি মারা যাব। আমাকে ছাড়া নাকি কিছুই ভাবতে পারে না। এখনো প্রতিদিনই ফোন করে। আমি ফোন করতে নিষেধ করলেও শোনে না। আমি এখন কী করতে পারি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
ঢাকা।
মেয়েটি যখন বিয়ে করেছে, তার মানে সে এক জায়গায় কথা দিয়ে ফেলেছে। মেয়েটির ফোন আপনি ধরবেন না। আপনি নিজে এবং আপনার এক সময়ের প্রেমিকা একটা দোদুল্যমান অবস্থায় থাকবেন, এটা কারও জন্যই ভালো হবে না।
প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছেন সারা যাকের।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ০৮, ২০০৯
akjan k khob beshi like kori kintu tar bapara sandhihan ki korbo?