কয়েক দিন পরেই ঈদ। ঘরে ঘরে চলছে প্রস্তুতি। বাড়ির লোকেরা ব্যস্ত কোরবানির হাট নিয়ে। এদিকে গৃহিণীর দম ফেলার ফুরসত নেই। কেননা, অনেকখানি ধকল যায় তাঁর ওপর দিয়ে। তাই আগেভাগেই নিতে হয় প্রস্তুতি। তা ছাড়া এই ঈদে রান্নার পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। সে জন্য গৃহিণীর পূর্বপরিকল্পনার প্রয়োজন। ধারাবাহিকভাবে কাজগুলো লিপিবদ্ধ করতে হবে। এতে সাজানো-গোছানোভাবে সহজেই সব কাজ হয়ে যাবে।
সাধ্য না থাকায় এই ঈদে হয়তো আপনার ফ্রিজটি কেনা হলো না। কিন্তু মাংস তো সংরক্ষণ করতে হবে। সংরক্ষণের সঠিক নিয়ম জানা না থাকলে তা খাওয়ার উপযোগী থাকবে না। পচন ধরবে। এ সমস্যার সমাধান দিয়েছেন পুষ্টিবিদ সিদ্দিকা কবীর। তিনি মাংস সংরক্ষণের নানা পদ্ধতি সম্পর্কে বলেছেন।
মাংস সংরক্ষণের পদ্ধতি
১. মাংস কেটে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। এরপর আদা বাটা, রসুন বাটা, পেঁয়াজ বাটা বেশি করে দিয়ে ডুবানো তেলে মাংস ছেড়ে দিন। ভালোভাবে সেদ্ধ করুন, যাতে মসলা মাংসের ভেতরে ঢোকে। কিন্তু খেয়াল রাখবেন, যাতে মাংস নরম হয়ে না যায়। একদিন অন্তর মাংসগুলো গরম করুন; এতে ১৫-২০ দিন পর্যন্ত ভালো থাকবে।
২. মাংস লম্বা লম্বা করে টুকরো করুন। এরপর লবণ, হলুদ মেখে রোদে শুকিয়ে নিন। এটি তেলে ভেজেও খেতে পারেন। তবে রান্নার আগে ভিজিয়ে নিন মাংসগুলো।
৩. এ পদ্ধতিতে মাংসের টুকরোগুলো কাঁটা চামচ বা ছুরি দিয়ে কেঁচে নিন। এরপর লবণ ও লেবুর রসে ডুবিয়ে নিন, যাতে ভালোভাবে এ মিশ্রণ মাংসের ভেতরে ঢোকে। এভাবে রাখলেও মাংস অনেক দিন ভালো থাকে।
এ তো গেল ফ্রিজ না থাকলে কী করবেন তার সমাধান। অনেকে ফ্রিজ থাকলেও সঠিকভাবে মাংস রাখতে পারে না। ফলে জায়গার সংকুলান হয় না, সে ক্ষেত্রে আলাদা করে ডিপ ফ্রিজ কেনার কথা ভাবতে হয়। সাধ থাকলেও সামর্থ্য থাকে না। তাই তো এই ফ্রিজের যত্নটাই প্রথমে নেওয়া উচিত বলে মনে করেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ফিরোজা সুলতানা।
ফ্রিজের যত্ন-আত্তি
ঈদের আগে সময় করে ফ্রিজ পরিষ্কার করে ফেলা উচিত। ফ্রিজটি বন্ধ করে তরল সাবান দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিন; এরপর দরজা খুলে রাখুন, যাতে ভাপসা গন্ধ দূর হয়ে যায়। আবার ফ্রিজ চালু করে দিন, যাতে সংরক্ষণের উপযোগী শীতল হয়। পরিষ্কার পাত্রে খাবার রাখুন।
ফ্রিজে সংরক্ষিত মাংস
যদি মাংস পরিমাণে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে মাছ-মুরগিসহ অন্যান্য খাবার আগেই সরিয়ে ফেলুন। সবাইকে মাংস বিলিয়ে দেওয়ার পর বাকিগুলো আলাদা করুন। ঠিক করুন কতটুকু করে রান্না করবেন। সেভাবেই ছোট ছোট মোড়কে মুড়িয়ে ফ্রিজে রাখুন। এ ছাড়া বড় আকারের মাংস না কেটে ভালোভাবে পলিথিনে মুড়িয়ে ফ্রিজে রাখুন। তবে খেয়াল রাখবেন, ব্যবহূত পলিথিনটি যেন যেখানে-সেখানে না খোলা হয়। মাংসগুলো বেটে কিমা করেও রাখতে পারেন। এতে জায়গা কম লাগবে। আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর কাছ থেকে পাওয়া মাংসগুলো একসঙ্গে রান্না করুন, স্বাদটাও ভিন্ন হবে। রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় মসলাপাতি এখনই কিনে ফেলুন। ভালোভাবে বেটে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। এতে ঈদের দিন বাড়তি ঝক্কি পোহাতে হবে না।
রান্নাঘরের যত্নে
এই ঈদে রান্নাঘরের প্রতি বাড়তি যত্নশীল হতে হয়। খেয়াল রাখুন, মাংসের রক্ত, চর্বি যেন মেঝে বা তাকে না লেগে থাকে। এসব থেকেই দুর্গন্ধ ছড়ায়। মাংস কাটা ও রাখার স্থান তরল সাবান ও জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন। এরপর এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহার করুন। যাতে ভাপসা গন্ধ দূর হয়।
গোছানো হেঁশেল
সাজানো-গোছানো হেঁশেলে কাজ করতে সবারই ভালো লাগে। নাগালের মধ্যে জিনিস পেলে অল্প সময়ে কাজ করা যায়। কোরবানির ঈদে রান্নাঘরের কাজই বেশি। সে জন্য ঈদের আগেই এটি গুছিয়ে ফেলুন। যেসব জিনিসের ব্যবহার বেশি হবে, তা হাতের কাছেই রাখুন। মসলার বাক্সগুলো পরিষ্কার করে ফেলুন। বড় হাঁড়ি-পাতিল, সসপ্যানগুলো ওপরের তাক থেকে নামিয়ে পরিষ্কার করে রাখুন। প্রেসারকুকারটি ঠিক আছে কি না পরীক্ষা করে নিন। চাপাতি, বঁটি, ছুরি, শিলপাটায় আগেই ধার দিয়ে নিন। আগত অতিথির সম্ভাব্য সংখ্যা ভেবে রাখুন। সে অনুযায়ী তৈজসপত্র পরিষ্কার করে রাখুন। পরে তাড়াহুড়োয় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। রন্ধনপ্রণালী এখনই ঠিক করে ফেলুন। এরপর তালিকা অনুযায়ী জিনিসপত্র কিনে রান্নাঘরে গুছিয়ে রাখুন। দেখবেন, সব কাজ কত সহজেই হয়ে যাবে। ঝক্কি-ঝামেলা ছাড়াই কেটে যাবে ঈদের দিনটি। আপনার মুখের হাসি অন্যদের মনেও প্রশান্তি বয়ে আনবে।
লক্ষ রাখবেন
গ্যাসের চুলা ও ফ্রিজের কোনো সমস্যা আছে কি না, তা এখনই পরীক্ষা করে নিন।
যে কাজই করুন না কেন, তা যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়।
কোরবানির পশুর বর্জ্য যেখানে-সেখানে ফেলবেন না। আলাদাভাবে তা ফেলার ব্যবস্থা করুন।
তৌহিদা শিরোপা |
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ২৪, ২০০৯
Leave a Reply