বাড়িটা দূর থেকে দেখতে খুব সাদামাটা। একেবারেই সাধারণ একটা ভবন, যার প্রবেশ দ্বারে নেই কোনো নামফলক কিংবা ব্যানার। হররোজ যারা এখানে খেতে আসেন তাদের বাইরে কাউকে এ বাড়িটা চিনতে হলে একটু পরিশ্রমই করতে হবে। শুধু প্রবেশ মুখে আছে একটি মাইল ফলক। সড়ক পথে ঢাকা পেরুলে এমন মাইল ফলক হাইওয়েতেই দেখা যায়। কিন্তু শহরের ভিতরে এমন ফলক বোধকরি এই একটাই আছে। সেটি হলো কুটুমবাড়ি। শূন্য কিলোমিটার লেখা এই কুটুমবাড়ি মূলত একটি খাবার ঘর। এখানে খুব কম দামে যেকেউ নিজের উদরপূর্তি করতে পারেন।
২০০৩ সালে জল্পনা কল্পনা শুরু হলেও খাবার ঘরটির জন্ম হয় ২০০৭এর মার্চে। ঢাকাতে মোট ২টি শাখা আছে কুটুমবাড়ির। এর একটি লালমাটিয়ায় আর অপরটি বনানীতে। মাইল ফলকে কুটুমবাড়ি শূন্য কিলোমিটার লেখার কারণ জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষ জানান, এই মাইল ফলক ধরেই পথ এগিয়ে যায় দূর থেকে দূরে, ঠিক তেমনি এই মাইল ফলক ধরেই কুটুমবাড়ি এগিয়ে যাবে দেশের প্রান্ত থেকে প্রান্তরে। আর শূন্য কিলোমিটার বলতে এখানে শেষ লক্ষ্য বোঝানো হয়েছে যেখানে গেলেই আমাদের উদর পূর্তি হবে। ছিমছাম ইন্টেরিয়র দেখলেই বোঝা যায় এখানে মানুষ শুধুই খাবার উপভোগ করতে আসে, আর কিছুর জন্য নয়। আসলে কুটুমবাড়ির খাবার মেন্যু আর দাম দেখলেই বোঝা যায় প্রায় সব শ্রেণীর মানুষের জন্য খাবার যোগাড়েই যেন ব্রত কুটুমবাড়ি খাবার ঘরটি।
প্রায় ৩০০০ বর্গফুট জায়গা নিয়ে কুটুমবাড়ি। একসাথে বসে খেতে পারে প্রায় ১৫০ জন মানুষ। পার্টি কিংবা ছোট কোনো মিটিং আয়োজন করা যাবে কুটুমবাড়িতে। তারজন্য খরচাপাতি আলোচনা করতে হবে কর্তৃপক্ষের সাথে। এখানে সকালের নাস্তার জন্য আছে ৫৫টাকার একটি প্যাকেজ। যার মধ্যে থাকছে ভিন্ন ভিন্ন ৬টি ধরনের সেট মেন্যু। খাওয়া যাবে নুডলস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চা অখবা স্যুপ, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, অন্থন অথবা চিকেন মাসালা, লুচি, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চা অথবা চাপ, লুচি, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চা অথবা কলিজা ভুনা, লুচি, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই চা অথবা ব্রেইন মাসালা, লুচি ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চা। এসব আইটেমই ৫৫টাকার প্যাকেজের আওতায় পাওয়া যাবে সকালে কিংবা বিকেলের নাস্তায়। দুপুরের খাবারে পাওয়া যাবে একই রকম ৬টি প্যাকেজ। এগুলো হলো গরুর মাংস, ২টি ভর্তা, সবজি, ডাল ভুনা অথবা চিকেন, ২টি ভর্তা, সবজি, ডাল ভুনা অথবা খাসির মাংস, ২টি ভর্তা, সবজি, ডাল ভুনা অথবা রুই মাছ ২টি ভর্তা, সবজি, ডাল ভুনা অথবা চিংড়ি মাসালা, ২টি ভর্তা, সবজি, ডাল ভুনা অথবা ইলিশ দো-পেয়াঁজা ২টি ভর্তা, সবজি, ডাল ভুনা। দুপুরের খাবারের এই সেটগুলো পাওয়া যাবে ৭৫টাকায়। রাতের খাবারে পাওয়া যাবে মোরগ পোলাও, চিকেন বুরিন্দা, গ্রীন সালাদ অথবা মোরগ পোলাও, বিফ বুরিন্দা, গ্রীন সালাদ অথবা মাটন বিরিয়ানি, চিকেন/বিফ বুরিন্দা, গ্রীন সালাদ। এছাড়া পাওয়া যাবে বিফ খিচুড়ী আর চিকেন খিচুড়ী। এসবই মিলবে ৯৯টাকার প্যাকেজে।
এছাড়া রাতে বারবিকিউ আয়োজনও হয় এই কুটুমবাড়িতে। খাবার আর পরিবেশনে প্রতিটি মুহুর্তে আপনার মনে হবে এটা সত্যিই কুটুমবাড়ি যেখানে আপনি খাবার গ্রহণ করবেন আতিথেয়তার সাথে। তিন বন্ধুর স্বপ্ন আর পরিশ্রমকে সঙ্গি করে কুটুমবাড়ি এখন দুটি শাখায় বিস্তৃত। আগামি বছর ফেব্রুয়ারি নাগাদ আরো ৪টি শাখা উদ্বোধন হতে যাচ্ছে কুটুমবাড়ির। কুটুমবাড়িতে শুধু মেন্যু দেখে খাবার গ্রহণ নয়, চাইলে পুরো পরিবার নিয়ে যেকোনো রেসিপির জন্য অনুরোধ করতে পারেন কুটুমবাড়ি কর্তৃপক্ষকে। কুটুমবাড়ির ঠিকানা শূন্য কিলোমিটার, কুটুমবাড়ি, লালমাটিয়া।
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক, নভেম্বর ১৭, ২০০৯
Leave a Reply