লম্বা কেশের নারী, এ প্রচলিত ধারণা থেকে আমরা এখন অনেকটাই দূরে অবস্থান করছি। আজকের আধুনিক নারী দীঘল কালো লম্বা চুলের চেয়ে স্বাস্থ্যবান চুলের দিকে দৃষ্টি দেন। চুলের দৈর্ঘ্যের চেয়ে জৌলুসের দিকেই নারী বেশি মনযোগী। যত্ন-আত্তির পাশাপাশি স্টাইলের বিষয়টিও প্রাধান্য পাচ্ছে। স্টাইলিশ স্বাস্থ্যবান চুল কিভাবে বজায় রাখবেন চলুন তা এবার জেনে নেই।
স্টাইলিশ চুল
০ নরম, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুলের জন্য ব্যবহার করুন হেনা। নাতিশীতোষ্ণ পানিতে হেনা পাউডার ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন দই এবং কফি পাউডার মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে চুলে লাগিয়ে রাখুন। ১ ঘণ্টা পর হার্বাল শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। টি ব্যাগ গরম পানিতে ডুবিয়ে সেই পানি দিয়ে বা লেবুর রস দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। চুল চকচকে হবে। হেনা ব্যবহার করলে চুল সাধারণত হালকা খয়েরি হয়। গাঢ় রং করতে চাইলে হেনা পেস্টের মধ্যে খয়ের, লেবুর রস মেশাতে পারেন।
০ সেমি পারমানেন্ট কালার চুলের বিউটিকলে পৌছলেও চুলের স্বাভাবিক পিগমেন্টেশন স্ট্র্যাকচারকে নষ্ট করে না। তাই চুলের রং পুরোপুরি পাল্টে যায় না।
০ দু-একদিনের জন্য চুল কালার করতে চাইলে টেম্পোরারি কালার ব্যবহার করুন। চুলের ওপরের স্তরে হালকা ভাবে কালার করা হয়। চুলের ভিতরে কিউটিকল ও কর্টেক্সে রং পৌঁছায় না। একবার দুবার শ্যাম্পু করলে রং উঠে যায়।
০ চুলের রং একেবারে সোনালী করতে চাইলে ব্লিচিং জরুরী। তবে ব্লিচিং করলে চুল রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায়। ফলে সপ্তাহে একদিন হট অয়েল ম্যাসাজ করুন। নিয়মিত চুল আঁচড়ান। মাইল্ড শ্যাম্পু ও ভাল মানের কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। ছোট ছোট কয়েকটি ভাগে চুল ভাগ করে চুলে রং করা হয়। পুরো চুলে রং না করতে চাইলে আপনার চুলের জন্য হাইলাইটিং আদর্শ। ভাল কোয়ালিটির হেয়ার কালার ব্যবহার করুন। প্রতি সপ্তাহে শ্যাম্পুর পর নিয়মিত কন্ডিশনিং জরুরী।
চুলের সাধারণ সমস্যা ও সমাধান
০ সাধারণত কিছু সমস্যার জন্য চুল পড়ে। যেমন রক্ত সঞ্চালন ভাল না হলে, অ্যানিমিয়া থাকলে, টেনশন, খুশকি, স্ট্রেস কিংবা বড় ধরনের অসুখ হলে চুল পড়ে যায়।
০ লেটুস পাতা ও পালং শাকের রস চুলের বৃদ্ধির জন্য উপকারী।
০ রিঠা, আমলকী, শিকাকাইয়ের মত ন্যাচারাল শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। শ্যাম্পু করার পর হালকা হাতে সার্কুলার ভঙ্গিতে স্ক্যাল্প ঘষুন। রক্ত সঞ্চালন ভাল হবে।
০ চুল পড়া কমানোর জন্য অয়েল ম্যাসাজ করুন। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন নারকেল তেল হালকা গরম করে চুলে ম্যাসাজ করুন। তেলের সঙ্গে ফুটিয়ে নিতে পারেন আমলকি, জবাফুলের কুঁড়ি।
০ নারকেল তেলের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে প্রতিদিন চুলে লাগান।
০ পেট পরিষ্কার রাখুন। যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করুন। নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন।
চুলের ডগা ফাটা
০ চুল নিয়মিত ট্রিম অর্থাৎ চুলের ডগা না কাটলে ডগা ফাটার সমস্যা দেখা যায়। চুল বড় হয়ে গেলে চুলের প্রটেকটিভ লেয়ার
কিউটিকল ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যায়। চুলের ইনার লেয়ার কর্টেক্স, মেডুলা ফেটে বেরিয়ে আসে।
০ ২ মাস থেকে ৬ মাস অন্তর চুল ট্রিম করুন।
০ গোসলের পর চুল হালকা হাতে মুছুন। তোয়ালে দিয়ে বেশি ঘষলে চুলের কিউটিকল নষ্ট হয়ে যায়।
০ ভিজে চুল আঁচড়াবেন না। ধীরে ধীরে আঙ্গুল দিয়ে চুলের জট ছাড়াবেন। খুব অসুবিধে হলে চুলে লিভ-ইন-কন্ডিশনার লাগিয়ে নিন।
০ মাইল্ড শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
০ চুল উল্টো দিকে আঁচড়াবেন না। এতে চুলের ডগা ফেটে যায়।
০ চুলে কালার বা পার্ম করা হলে ডগা ফাটার সম্ভাবনা বেশি। এক্ষেত্রে ভাল করে কন্ডিশনার লাগান।
০ ব্লো ড্রাই বা হেয়ার ড্রাই যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।
নিষ্প্রাণ চুল
০ সপ্তাহে অন্তত ৩ বার শ্যাম্পু করুন।
০ চুলের ভলিউম বাড়াতে ফ্রুট অ্যাসিড-সমৃদ্ধ শ্যাম্পু এবং চুল পরিষ্কার রাখতে ডিপ ক্লিনজিং শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
০ চুলের গোড়ায় কন্ডিশনার লাগাবেন না। চুলের মাঝখান থেকে ডগা অবধি কন্ডিশনার লাগিয়ে নাতিশীতোষ্ণ পানিতে চুল ধুয়ে ফেলুন।
০ চুলে হাত দেবেন না বারবার। চুলের তৈলাক্ত ভাব বেড়ে যায়।
০ বাঁধা কপি কুচি কুচি করে অল্প গরম পানিতে ভাপ দিয়ে ছেঁকে নিয়ে ঠান্ডা করে চুল ধুয়ে ফেলুন।
কার্লি ও ফ্রিজি হেয়ার
০ সপ্তাহে দুবার ময়শ্চারাইজার সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। ঘন ক্রিম সমৃদ্ধ কন্ডিশনার অন্তত ৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। কন্ডিশনার কিউটিকলের ওপর প্রটেকটিভ লেয়ার তৈরি করে চুল নরম রাখে।
০ সিলিকন সমৃদ্ধ হেয়ার প্রডাক্ট ব্যবহার করুন। চুলে ময়েশ্চারাইজার বজায় থাকবে।
০ অ্যালকোহল সমৃদ্ধ হেয়ার প্রোডাক্ট এড়িয়ে চলুন। এতে চুল আরো শুকনো হয়ে যায়।
০ ২ ভাগ ক্রিম ও ১ ভাগ অ্যালকোহল ফ্রি জেল অল্প ভিজিয়ে চুলে লাগান। চুল এলোমেলো হবে না।
০ ১ চা চামচ নারকেল তেল চুলে ম্যাসাজ করুন।
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক, নভেম্বর ১০, ২০০৯
Leave a Reply