প্রকৃতির বৈরি ভাব আর হিংস্র পশু-পাখিদের হাত থেকে বাঁচতেই মানুষ গুহায় বসবাস শুরু করেছিলো। আর সেই গুহায় বাস থেকে শুরু হয় ঘর তৈরির প্রয়োজনীয়তা। শুরুটা কেবলই দেয়াল আর ছাদ ঘেরা কোনো জায়গা হলেও বর্তমানে এই ঘরের সংজ্ঞাটা অনেকটাই পরিবর্তিত। মার্বেল করা মেঝে, রাফ টাইলসের দেয়াল আর নান্দনিক সব আসবাবের সমাহার ঘটে এখনকার ঘরগুলোতে। এতসব ফার্নিচারের মাঝ থেকে এসংখ্যার কড়চায় থাকছে বসার জন্য বিভিন্ন ফার্নিচার নিয়ে বিশেষ আয়োজন নিয়ে লিখেছেন এমএইচ মিশু
ঘরের মধ্যে ঘুমানো কিংবা জিরিয়ে নেয়ার জন্য প্রয়োজন খাট। হাটাহাটি করার বাইরে অন্য সময়টা ঘরের যে আসবাবটি সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত হয় সেটি হলো বসার আসবাব। চেয়ার, সোফা, ডিভান হরেক নামে আর ডিজাইনে এখন বসার আসবাব এর প্রচলন আছে। ঘরের আয়তন আর ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ভেদে এগুলো ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
প্রবেশ মুখের আয়োজন
বসার জন্য আসবাব শুরু হয় ঘরে প্রবেশের মুখ থেকেই। অনেকে ঘরের এই অংশে একটু এথনিক লুক দেয়ার চেষ্টা করে থাকেন। আর সেই প্রয়োজন থেকেই অনেকে এখানে কাঠের ফ্রেমে মোড়া কিছু নান্দনিক বসার আয়োজন রেখে থাকেন। তবে ঘরের ফয়ার বা প্রবেশ মুখটা যদি একটু বড় আকৃতির হয় তাহলে কিন্তু ছোট-খাট একটা বসার ঘরের রূপ দেয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ২জন মানুষের বসার উপযোগী একটা সোফা কিংবা ছোট ছোট ২টা সোফা দিয়ে জায়গাটা সাজানো যেতে পারে। আর যদি ছোট জায়গা হয় তাহলে জুতো রাখার আলনাটা এমন মাপ আর আকৃতির করতে পারেন যেখানে উপরের অংশে বসা যাবে আর নিচের অংশে পাল্লা দেয়া জুতোর র্যাক করা যেতে পারে।
খাবাব ঘরে বসতে
ডাইনিং টেবিলের প্রচলনটা এক সময় একটু বনেদী ঘরে প্রচলিত হলেও এখন দুই রুমের ফ্ল্যাটেও দেখা যায় ডাইনিং-এর আয়োজন। ডাইনিং এর রকমফের এখন অনেক রকম। তবে প্রচলিত জনপ্রিয় ডাইনিং ফার্নিচার একেবারেই ইংলিশ স্টাইলের যেখানে উঁচু টেবিলের সাথে থাকবে সিঙ্গাল চেয়ার। এসব ডাইনিং তৈরি হতে পারে কাঠের কিংবা রট আয়রনের। তবে ইদানিং স্টেইনলেস স্টিল কিংবা প্লাস্টিকের তৈরি ডাইনিং জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ডাইনিংএর চেয়ারগুলো এমন উচ্চতায় হওয়া উচিৎ যেনো খাবার গ্রহণ করার পুরো প্রক্রিয়াতে কোথাও ছেদ না পড়ে। আর তাই এসব আসনে শুধুমাত্র বসার জায়গাতেই গদি থাকে। তবে জাপানি স্টাইলের ডাইনিং চেয়ারগুলো হয়ে থাকে একটু ভিন্ন ধাঁচের। এসব ডাইনিং-এর টেবিল খুব নিচু থাকার কারণে চেয়ারগুলো নিচু হয়ে থাকে। আর চেয়ারগুলো মেঝের কাছাকাছি হওয়াতে একটু ছড়ানো আকৃতির হয়ে থাকে চেয়ার। আরামের দিক থেকে বিবেচনা করলে এসব চেয়ার খুবই আরামদায়ক। কিন্তু অপেক্ষাকৃত নিচু হওয়াতে এসব চেয়ার আমাদের দেশে জনপ্রিয়তা কম পায়। জাপানি স্টাইলের ডাইনিং চেয়ার সব সময় একজনের বসার জন্য না হয়ে ২-৩জনের বসার উপযোগী করে বেঞ্চ টাইপেরও হয়ে থাকে।
বসার ঘরে
ড্রইংরুম বা বসার ঘরের মূল আসবাবই হলো সোফা আর বিভিন্ন আকৃতির চেয়ার। মনে রাখবেন, ফয়ার পেরিয়ে কোনো অতিথি কিন্তু সরাসরি আপনার বসার ঘরে চলে আসবে। আর তাই, এখানের প্রতিটি ফার্নিচারে একদিকে যেমন থাকবে আপনার রুচির ছাপ তেমনি থাকতে হবে ঘরের বাদবাকি ইন্টেরিয়র আর আসবাবের সাথে এক ধরনের সামঞ্জস্য। এখানে ফার্নিচারগুলো হতে পারে এথনিক স্টাইলের কিংবা হতে পারে জিওমেট্রিক স্টাইলের। আর ইন্টেরিয়ারের ধরন বুঝেই তৈরি হবে ড্রইংরুমের বসার আসনগুলো। এই ঘরের আসনগুলোতে আরামের ব্যাপারটা খেয়ালে রেখে তৈরি করা উচিৎ। হতে পরে কাঠের কিংবা রটের। কিন্তু গদিগুলো একটু ভারি আর নরম হতে হবে। মখমলি কাপড়ে মোড়ানো গদিতে ধূলাবালু আটকানোর সম্ভাবনাটা একটু বেশী থাকে। আর তাই অনেকে এখন চামড়ায় মোড়া গদি যুক্ত সোফা কিনে থাকেন। বসার ঘরটা যদি একটু বড় আকৃতির হয় তাহলে ২-৩ ধরনের সোফা রাখতে পারেন। অর্থাৎ ২ ধরনের সেট রাখতে পারেন। পাশাপাশি একপাশে ডিভান রাখলেও মানিয়ে যাবে। কিন্তু মনে রাখবেন সবগুলো আসবাবের ধরন যেন এক রকম হয়। ২-৩ রকমের আসবাব এক ঘরে বেমানান। বসার ঘরের বাকি আসবাব নিচু থাকলে বসার আসনগুলোও হওয়া উচিৎ নিচু প্রকৃতির।
শোবার ঘর আর অন্যান্য
এছাড়া শোবার ঘরেও বসার আয়োজন করে থাকেন অনেকে। শোবার ঘরে খুব বড় মাপের বসার আসবাব না থাকাই ভাল। এতে ফাকা জায়গার পরিমাণ কমে যেতে পারে। শোবার ঘরে শুধু কার্পেটের উপর কুশন দিয়ে বসার আয়োজন করতে পারেন। যদি ঘরের সব ফার্নিচারের উচ্চতা অপেক্ষাকৃত নিচু হয় তাহলে এমন বসার আয়োজন শোবার ঘরে ভাল লাগবে।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, অক্টোবর ২৭, ২০০৯
Leave a Reply