আমি বিবাহিত, আমার বয়স ২৯। আমি যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি, তখন আমার বিয়ে হয়ে যায়। আমার স্বামীর সঙ্গে আমার বয়সের পার্থক্য প্রায় ১১ বছর। তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, কিন্তু তাঁর পরিবারের কেউই খুব শিক্ষিত নয়। তাদের আর্থিক অবস্থাও আগে ভালো ছিল না। আমার স্বামীও লেখাপড়া বেশি করেননি, খুব বেশি হলে এসএসসি পাস।
বিয়ের প্রথম কয়েক মাস সুখেই ছিলাম আমি। আমার মেয়ে যখন আমার পেটে, তখন থেকেই স্বামী আমার ওপর অত্যাচার শুরু করেন। গালিগালাজ ছাড়া ঠিকমতো কথা বলতেন না, তুচ্ছ কথায় গায়ে হাত তোলেন, অমানুষিকভাবে নির্যাতন করেন আমার ওপর। আমার মেয়ের জন্মের পর তার গায়েও আঘাতের চিহ্ন ছিল। যখন স্বামী আমাকে মারধর করেন, তখন তিনি মানুষ থাকেন না, হাতের কাছে যা পান, তা দিয়েই মারতে থাকেন।
যখন রাগ কমে যায়, তখন তাঁর মতো ভালো মানুষ যেন আর কেউ হয় না। বাজারের সেরা জিনিসটা আমাদের সংসারে আনা হয়। কোনো প্রয়োজনই অপূর্ণ রাখেন না।
শুধু আমার ওপর অত্যাচারই নয়, তাঁর চরিত্রেরও দোষত্রুটি আছে। তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে অনেকের কাছে শুনতাম যে তাঁর চরিত্র ভালো না। কিন্তু আমি তাদের কথায় আগে কান দিতাম না। একসময় আমি আমার বাসার কাজের লোকের সঙ্গে তাঁর অবৈধ সম্পর্কের কথা টের পাই। তখন ব্যাপারটায় আমি গুরুত্ব দিইনি। আমার পরিচিত একজনের সহায়তায় তাঁকে হাতেনাতে ধরি এবং বুঝতে পারি, এ অবস্থা অনেক দিন ধরেই চলে আসছে। সেই দিন তিনি আমার কাছে মাফ চান, আমার মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলেন, আর ওই পথে যাবেন না।
আমার শাশুড়িকে আমার স্বামীর এই বিষয়গুলো বললে উনি উল্টো আমাকেই বকতেন। বলতেন, খেতে পারছ, পরতে পারছ, আর কী চাও? মা-ছেলে মিলে আমার দোষ বের করার চেষ্টা করতেন।
এর মধ্যে তাঁর ব্যবসায় ধীরে ধীরে অবনতি হতে থাকে, ধারদেনা অনেক বেড়ে যায়। তাঁর স্বভাবের কথা আশপাশে ছড়িয়ে যায়। ফলে তিনি ব্যবসা গুটিয়ে অন্য জায়গায় চলে যান।
আবার তিনি তাঁর আগের রূপে ফিরে আসেন। কথায় কথায় গালিগালাজ আর গায়ে হাত তোলা চলতে থাকে। একদিন এতটাই হিংস্র হয়ে আমাকে মারতে থাকেন, মনে হচ্ছিল সেদিন বুঝি মেরেই ফেলবেন। আমি কোনো রকমে পালিয়ে আমার বাবার বাসায় চলে আসি। পরদিন স্বামী আমাকে ফিরিয়ে আনতে যান আমার মেয়ের কান্নাকাটির কারণে। আমি আমার মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে ফিরে আসি।
আমার মেয়ে এখন নবম শ্রেণীতে পড়ে। শুধু ওর জন্য আমি সংসারটা টিকিয়ে রাখতে চাইছি। আমার মা-বাবা, ভাইবোন সবাই বলছেন, ‘এত অত্যাচার কেন সহ্য করছ? তুমি চলে এসো।’ আমাদের এই ছোট শহরে তালাক বিষয়টাকে কেউ সহজে মেনে নেবে না। আমি চাই না, আমার জন্য আমার পরিবারের সদস্যরা কোনো কষ্ট সহ্য করুক। সব সময় আমার একটা কথাই মনে হয়, আমার মেয়ের একটা ভালো জায়গায় বিয়ে দিয়ে তারপর কোনো পদক্ষেপ নেব। মাঝেমধ্যে এত অসহায় লাগে যে, মনে হয় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। কখনো মনে হয় আত্মহত্যা করি। আমার স্বামীকে সঠিক পথে এনে কীভাবে সংসারটা টিকিয়ে রাখব?
নাম ও ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক
‘সংসার সংসার’ করে আমরা মেয়েরা অনেক সময় একটা বিষময় জীবন কাটিয়ে দিই। আপনার স্বামীর যে চরিত্র, আমার মতে, তাঁকে কোনো মতেই মেনে নেওয়া যায় না।
আপনিই সিদ্ধান্ত নিন যে একটা নরপশুর সঙ্গে আপনার মতো একজন সুন্দর/শিক্ষিত মেয়ে জীবন কাটাতে চান কি না। সিদ্ধান্তটা আপনার।
——————————–
আমার মায়ের বয়স ৪০ বছর। আমার বাবা মারা গেছেন চার বছর আগে। আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি। ছোটবেলা থেকে মা বাবার সঙ্গে যা-তা ব্যবহার করতেন। বাবা একটু ভদ্র আর খ্যাতনামা ছিলেন বলে মাকে কিছু বলতেন না। মা এখন আমাদের সঙ্গেও এ রকম ব্যবহার করেন। ফলে আমরা বাবার আদর্শটা ভুলতে বসেছি। মা প্রায়ই পড়ালেখা করতে হবে না বলে বই-খাতা নিচে ফেলে দেন। আবার তিনিই সাংস্কৃতিক কাজে উত্সাহ দেন। ছোটখাটো যেকোনো জিনিস নিয়ে বিশ্রী গালাগাল করেন; এতে আমরা অনেক কষ্ট পাই। আমার এখন এই বয়সে ঘরের যাবতীয় কাজে হাত দিতে হচ্ছে মায়ের বকাবকির কারণে, খুবই কষ্টের সঙ্গে। তার ওপর মায়ের উল্টাপাল্টা কথা, যার-তার সামনে অপমান, ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে ঝগড়া, এমনকি মা আমার গায়ে হাত তোলেন ওই ছোটখাটো বিষয় বা কাজ নিয়ে। হাতে যা পান, তা দিয়ে মারতে থাকেন। আর অভিশাপ দিতে থাকেন, আমরা যেন কোথাও গিয়ে ঠাঁই না পাই ইত্যাদি ইত্যাদি। মনটা একদম বিষিয়ে তোলে ওই মুখের কথাগুলো, যা আমার প্রাপ্য নয়। অনেক সময় স্কুলে কারও সঙ্গে মিশতে পারি না। আমার শুধু ভাবনা হয় এ জন্য যে আমার আচরণও কি মায়ের মতো হয়ে যাবে! আমার মা কি আর কোনো দিনও ভালো হবেন না? তাঁকে কীভাবে ভালো করা যাবে?
তবে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে আমার মা সব সময়ই সুস্থ থাকেন না, আবার কোনো কোনো সময় থাকেনও। তবে মামার বাড়িতে যদি যান, তাহলে তাঁর মুখ দিয়ে একটা গালিও আসে না। খালার মুখে শুনেছিলাম, তাঁর নাকি টাইফয়েড হয়েছিল। মায়ের এ রকম ব্যবহারে আমার পড়াশোনার চরম ক্ষতি হচ্ছে।
নাম ও ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক
টাইফয়েড কোনো বিষয় নয়। তোমার মা খুব চাপের মধ্যে থাকেন বলে একধরনের রাগ বা ‘হিস্টিরিয়া’ হয়।
তুমি যখন এত বোঝো, তোমার মাকেও বোঝানোর চেষ্টা করো। তবে মাঝেমধ্যে রিল্যাক্স করার জন্য মামার বাড়িতে পাঠিয়ে দাও। তোমার খালাকে তোমার অস্বস্তির কথাটা বলো। তোমার মা ভালো, তোমার চিন্তার কোনো কারণ নেই।
——————————
আমি একটি এনজিওতে কাজ করছি। এখানে যোগ দেওয়ার কিছু দিন পর আমার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তিনি বিবাহিত জেনে আমি তাঁকে ফিরিয়ে দিই। তা ছাড়া আমাদের ধর্মও আলাদা। তাঁকে এত বোঝানোর চেষ্টা করি যে একটা মেয়ে কাউকে ভালোবাসলে স্বাভাবিকভাবে বিয়ে করতে চাইবে, সে ক্ষেত্রে আপনি তাকে কতটুকু সম্মান দিতে পারবেন। তখন তিনি তাঁর দাম্পত্য জীবনের সমস্যা এবং নিঃসন্তানের কথা জানান এবং আমি যেন তাঁকে ভালোবাসি, এ জন্য খুব অনুরোধ করেন। একটা পর্যায়ে আমি তাঁকে ভালোবেসে ফেলি এবং আমাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হয়। এর কিছুদিন পর আমি যখন তাঁকে বিয়ে করতে বলি এবং বিয়ের জন্য চাপ দিই, তখন তিনি নানা অজুহাতে এড়িয়ে যান এবং একপর্যায়ে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন। আমার প্রচণ্ড জেদ হয় এবং একটা পরিস্থিতিতে ফেলে আমি তাঁকে বিয়ে করি। তখন আমাকে ধর্মও পরিবর্তন করতে হয়। এ কথা আমার পরিবার, আত্মীয়স্বজন কেউ জানে না। মাস দুয়েক হলো বিয়ে করেছি, আজ অবধি তাঁর সঙ্গে কোনো দেখা হয়নি। মাঝেমধ্যে ফোনে কথা হলেও আমার সঙ্গে দেখা করতে অসম্মতি জানান। আমি খুব মানসিকভাবে কষ্ট পাচ্ছি। কোনো কাজে ভালোভাবে মনোনিবেশ করতে পারছি না। তা ছাড়া আমি কোনো আইনি ঝামেলায়ও জড়াতে চাইছি না। কী করলে আমি একটু মানসিক শান্তি পাব, বুঝতে পারছি না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
ঢাকা।
যে লোককে জোর করে বিয়ে করেছেন, তিনি বিয়ে করার উপযুক্ত নন। আপনি যদি এখন তালাক নেন, কোনো অসুবিধা নেই।
আর আপনি বর্তমান চাকরিটা ছেড়ে দিন। এই অভিশপ্ত অতীত ভুলে যান এবং নতুন জীবন গড়ুন।
————————–
আমি মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। জীবনে অনেক কষ্ট করে এ পর্যন্ত এসেছি। অনেকটা রূপকথার মতো আমার বেড়ে ওঠা। তাই ভালোবাসা শব্দটাই অনেক ভয়ের মনে হতো। কারণ আমি চাইনি কেউ আমার সঙ্গে প্রতারণা করুক। অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে পড়াতে গিয়ে প্রেম হয়ে যায়। পরিবারের প্রধান তার মা। পরিবারটি অন্য সবার চেয়ে আলাদা। সহজে কেউ তাদের বাসায় যায় না। তাঁর মা তাঁর বাবার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেন এবং রাস্তায় নেমে মানুষের সামনে ঘৃণ্য ভাষায় গালাগাল দেন। অহংকার ও লোভ খুবই তীব্র। সবচেয়ে বড় কথা, অন্যের সম্মান, এমনকি জীবনও তার কাছে তুচ্ছ। যখন মেয়েটিকে পড়াই, তখন তাকে খুব অসহায় মনে হয়েছে। মনে হয়েছে, সে পরিবারের সবার চেয়ে আলাদা। আর ছাত্রী হিসেবে মোটামুটি। তাই তার জন্য অনেক পরিশ্রম করি। অবশেষে ঘটনা জানাজানি হয়ে যায়। তাই আমি চলে আসি। কিন্তু আমাদের ভালোবাসা ঠিকই থাকে। ক্রমে সে আমার সঙ্গে খুবই খারাপ ব্যবহার করে, তার মা আমার ওপর নির্যাতন চালায়; তবুও আমি চুপ থাকি। পরে সেও ঠিক তার মায়ের মতো আমাকে অপমান করে। কোনো মায়ের ভাষা এত খারাপ হতে পারে, তা আমার জানা ছিল না। সে এখন দশম শ্রেণীতে পড়ে, কিন্তু অহংকার, সন্দেহ, লোভ—এগুলো ক্রমে আরও প্রখর হচ্ছে। সে কাউকে কোনো মূল্য দেয় না। কিন্তু নিজের কিছু প্রয়োজন হলে খুবই সুন্দর ভাষায় কথা বলে। আমার সঙ্গে কয়েকবার সে সম্পর্ক ভেঙেছে এবং অকথ্য ভাষায় চিঠি লিখেছে, আবার ভালো ব্যবহারও করে। কিছুদিন আগে সে আমার সঙ্গে খুবই খারাপ ব্যবহার করে এবং সম্পর্ক ভেঙে দেয়। কিন্তু গত ২ মার্চ ফোন করে ক্ষমা চায় এবং একটা জিনিস কিনে দিতে বলে। আমি তা দিই।
মেয়েটির কাছে আমার সম্মান এবং আমার কোনো মূল্য নেই। সে পুরোপুরি তার মায়ের মতো। আমাকে বারবার বিয়ে করতে বলে। কিন্তু আমি সার্বিক দিক বিবেচনা করে সময়ের অপেক্ষা করছি।
আমি তাকে খুব ভালোবাসি, আমি চাই, তার মধ্যে মানবীয় গুণাবলি আসুক। এখন আমার কী করা উচিত?
নাম ও ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক
আপনি অনেক কথা বলেছেন, এর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ সময়ে প্রকাশ পেয়েছে—মেয়েটি ও তার মা মন্দ।
পাশাপাশি এটাও বলেছেন যে আপনি এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চান। আপনি যদি এতটাই মনে করেন মেয়েটি খারাপ, তাহলে এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসাই ভালো।
হয়তো সে যখন ভালো ব্যবহার করে, আপনি পটে যান, কিন্তু কাউকে ভালোবাসতে হলে মনেপ্রাণে তার ওপর আস্থা রাখতে হবে। এ আস্থা যখন আপনার নেই, তখন এ সম্পর্ক থেকে সরে পড়াই ভালো।
——————————
এমন অনেক সমস্যা আছে যা কাউকে বলা যায় না। এ রকম প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন সারা যাকের। ১৫ দিন অন্তর সুবন্ধু সমীপেষু কলামে চিঠি লিখুন সাদা কাগজের এক পিঠে সংক্ষেপে, ঠিকানাসহ। চিঠি পাঠানোর ঠিকানা :
সুবন্ধু সমীপেষু, নকশা, প্রথম আলো
সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ২৭, ২০০৯
Leave a Reply