‘বয়োবৃদ্ধ শ্রদ্ধেয় কোনো ব্যক্তিকে উপহার দেওয়ার সময় তাঁর শখ ও পছন্দের বিষয়টি মাথায় রেখে এ ধরনের ব্যতিক্রমী উপহার দিলে তাঁর বাকি দিনগুলোতে বয়ে আনবে সুখস্মৃতি।’ বললেন আইডিয়াস ক্র্যাফটের স্বত্বাধিকারী নিপা খালেদ।
পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ কোনো সদস্যকে উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে সেটি তাঁর কী কাজে আসবে, তা ভেবে উপহার নির্বাচন করা উচিত। সে ক্ষেত্রে উপলক্ষের ওপরও নির্ভর করবে উপহারের ধরন। বাড়িতে নাতি-নাতনিরা মিলে অনেক সময় দাদা-দাদি বা নানা-নানির জন্মদিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। সে ক্ষেত্রে মহিলা হলে দেওয়া যেতে পারে শৌখিন পানের কৌটো, চাবি রাখার ছোট বটুয়া, ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের হালকা ডিজাইনের ব্যাগ এবং পুরুষ হলে ঘরে পরার জুতা বা আরামদায়ক কোনো পোশাক।
পরিবারের প্রবীণ সদস্যটি সবাইকে বুক আগলে দেন ভালোবাসার ছায়া, এর বিনিময়ে শুধু চান প্রিয় মানুষগুলোর ভালোবাসার পরশ। তাই উপহারটিতে যদি থাকে প্রিয় মানুষের হাতের ছোঁয়া, তবে সেই উপহারটি তাঁর কাছে হয়ে থাকে এক অমূল্য সম্পদ। গত ঈদের এক মাস আগে একটি স্কুলে চাকরি পেয়েছেন তাহমীনা। তিনি বলেন, ‘প্রথম মাসের বেতন পেয়ে নানির জন্য শাড়ি কিনে নিজেই হাতের কাজ করে তা উপহার দিয়েছিলাম তাঁকে। ঈদের দিন সেই শাড়িটা সারা দিন পরে ছিলেন তিনি। কী যে আনন্দ পেয়েছিলেন! প্রবীণ মানুষটি যদি রান্নাবান্না করতে ভালোবাসেন, তবে তাঁকে উপহার দিতে পারেন বিভিন্ন ধরনের রান্নার বই। আজকাল বেশির ভাগ পরিবারের মহিলারা কর্মজীবী হয়ে থাকেন। সে ক্ষেত্রে বাড়িতে বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি থাকলে বিভিন্ন উত্সবে তাঁদের উপহার দিতে পারেন হটপট, রাইস কুকার, ফ্লাস্ক, ওয়াটার হিটার। এতে তাঁদের কাজে সুবিধা হবে। বাড়িতে যদি বয়োজ্যেষ্ঠ দম্পতির বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠান হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে এক অভিনব উপহারে তাঁদের চমকে দিতে পারেন; তা হলো এমন কিছু পারিবারিক ছবি যা অনেক সময় নিজের কাছে থাকে না। কিন্তু নিকটাত্মীয়ের সংগ্রহ থেকে একে একটু কষ্ট করে খুঁজে বের করতে পারেন সেসব আনন্দঘন মুহূর্তের ছবি, ওই ছবিগুলো ফ্রেমে বাঁধিয়ে ঘরের নিভৃত স্থানে র্যাপিং দিয়ে মুড়িয়ে খাড়া করে রাখুন। অনুষ্ঠানস্থল যখন সরগরম, তখন তাঁদের ডেকে নিয়ে উপহারের প্যাকেটটি খুলতে বলুন। দেখবেন, বিশেষ দিনে এ রকম বিশেষ উপহার পেয়ে কেমন চমকিত হন তাঁরা। এ ছাড়া আরও আনন্দ দিতে বিশেষ দিনগুলোতে আগে থেকে না জানিয়ে হঠাত্ নিয়ে যেতে পারেন তাঁদের পছন্দসই কোনো বেড়ানোর জায়গায়। আর যদি ঈদ, পূজা এবং অন্য ধর্মীয় উত্সবগুলোতে পোশাক না দিয়ে অন্য কোনো উপহার দিতে চান, সে ক্ষেত্রে দিতে পারেন ইজি চেয়ার, বুক শেলফ, হাতঘড়ি অথবা অ্যান্টিকের গয়না। এ ছাড়া বৃদ্ধ বয়সে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। সে ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস, ওজন, প্রেশার মাপার যন্ত্র, চশমা বা লাঠিও দেওয়া যেতে পারে উপহার হিসেবে। এ ছাড়া প্রবীণ সদস্যদের উপহার দেওয়া-নেওয়ায় রয়েছে কিছু বাঙালিয়ানা রীতিনীতি। যেমন, কোনো বড় উত্সবে বাড়ির বয়স্ক সদস্যকেই সবার আগে উপহার দিন। এতে তাঁর প্রতি আপনার দায়িত্ববোধ এবং সম্মান প্রকাশ পাবে। এ ছাড়া বয়স্ক কোনো নিকটাত্মীয় যদি দূরে থাকেন, সে ক্ষেত্রে একটু কষ্ট করে হলেও নিজ হাতে পৌঁছে দিন উপহারটি। অন্য কারও মাধ্যমে তা পাঠালে অনেক সময় দৃষ্টিকটু হয়। উপহার দেওয়ার আগে এর প্যাকেটে যে মূল্য লেখা থাকে, তা কেটে ফেলুন এবং দৃষ্টিনন্দনভাবে তা প্যাকিং করুন। বয়োজ্যেষ্ঠ কোনো আত্মীয়কে টাকা উপহার না দেওয়াই ভালো। কারণ, এতে অনেক সময় তাঁরা অপমানিত বোধ করেন। উপহারটি দেওয়ার সময় খুবই আন্তরিকভাবে হাসিমুখে তা মানুষটির হাতে তুলে দিন।
বিপাশা রায়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ২৭, ২০০৯
Leave a Reply