সমস্যা: আমি অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছি। আমাদের ক্লাসের অর্ধেকই ছাত্রী। তাদের সঙ্গে আমার কোনো কথা হয় না; মনে হতো, ওরা অহঙ্কারী। আমি যদি কোনো বন্ধুকে খুব আপন মনে করি, তাহলে ওরা ভেবে নেয়, আমি বোকা প্রকৃতির। তখন আমি খুবই কষ্ট পাই। এবং কলেজ জীবনের সেই বন্ধুদের কথা মনে হয়; ওরা কতই না ভালো ছিল! নতুন এ পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে ও পড়াশোনায় মন বসাতে পারছি না।
জহির উদ্দীন
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
পরামর্শ: নতুন পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে সবারই খানিকটা অসুবিধা হয়। তবে যারা অতিরিক্ত লাজুক এবং সহজে কারও সঙ্গে মিশতে পারে না, তাদের ক্ষেত্রে একটু বেশি সময় লাগতে পারে। তুমি কি ছেলেবেলায় অনেকের সঙ্গে মেশার সুযোগ পাওনি? বর্তমান সময়ে আমি দেখছি মা-বাবারা সন্তানদের খুব আগলে রাখেন বলে তারা জীবনে চলতে গেলে যেসব দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজন, সেগুলো লাভ করছে না। তোমার মধ্যে যেসব ভালো ও দুর্বল দিক রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট হওয়ার জন্য প্রতিদিন নিজের ভালো দিকগুলো সম্পর্কে লিখবে এবং যেগুলোর আরও উন্নয়ন দরকার সেগুলোও লিখবে। ভালো দিকগুলো সম্পর্কে লেখার সময় নিজের প্রতি তোমার আস্থা বাড়বে। আর দুর্বল দিকগুলো জানার পর তুমি সেগুলোর ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নেবে। নিজের সম্পর্কে তোমার ধারণা যখন স্পষ্ট হবে তখন অন্যদের মনোভাব বুঝতে সহজ হবে। কাউকে তখন তুমি শুধু বাহ্যিক আচরণের ভিত্তিতে বিচার করে ফেলবে না। সব মেয়েকে তখন তোমার অহংকারী বলে মনে হবে না। এটা কি হতে পারে মেয়েরা সংকোচ বোধ করছে বলে তোমার সঙ্গে চট করে মিশছে না? বন্ধুদের ব্যাপারে আমার অনুরোধ থাকবে, পরিচয়ের শুরুর দিকেই কাউকে নিজের দুর্বল দিক এবং জীবনের সব ঘটনা বলে দিয়ো না। কিছু সময় পার হওয়ার পর যাদের তোমার বিশ্বস্ত মনে হবে, কেবল তাদের সঙ্গেই কিছুটা মন খুলে কথা বলবে। ওরা তোমাকে বোকা ভাবলেও তুমি অন্তত এই বিশ্বাসটি ধরে রাখো যে ওরা তোমাকে ভুলভাবে বিচার করছে। তোমার কলেজজীবন যেহেতু এখন ইতিহাস হয়ে গেছে, সেখানে কী কী ভালো ছিল তা না ভেবে বরং সেখান থেকে তুমি বাস্তব জীবন সম্পর্কে যে অভিজ্ঞতা লাভ করেছ, বর্তমানে তা কাজে লাগাও। বর্তমানকে ফলপ্রসূ করতে পারলে ভবিষ্যতেও তুমি অনেক বেশি আস্থা নিয়ে চলতে পারবে।
সমস্যা: প্রায় দেড় বছর আগে আমার নিকটাত্মীয়ার সঙ্গে প্রেম শুরু করি। দুজন দুজনকেই খুব ভালোবাসি। মেয়েটি এইচএসসি পরীক্ষার ফলপ্রার্থী। মেধাবী ছাত্রী হওয়ায় তার পরিবারের সদস্যরা এখন তাকে পাত্রস্থ করতে রাজি নয়। আমরাও এখন বিয়ে করার পক্ষপাতি নই। পড়াশোনা শেষ করে সামাজিক রীতি অনুসারে বিয়ে করব ঠিক করি। বেশ কিছু দিন আগে কোনো এক কারণে আমার পরিবারে বিষয়টি জানাজানি হয়। এখনো এর প্রভাব পড়েনি আমার ওপর। আত্মীয়তার সম্পর্ক হওয়ায় আমার ও মেয়ের পরিবারে বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দ্বিধা রয়েছে। আমাকে হারানোর ভয়ে সে নিজেকে সবসময় গোপন করে রাখে। তার ফোন না থাকায় ২০-৩০ দিন পরপর যোগাযোগ হয়। তার সঙ্গে কথা বলতে না পারলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।
মাহফুজ
পরামর্শ: তোমাদের দুজনকেই জীবনের আরও অনেকটা পথ চলতে হবে একটি স্থায়ী বন্ধনের জায়গায় পৌঁছাতে। তোমরা যে আবেগের বশে এখনই বিয়ের মতো একটি বড় সিদ্ধান্ত নিচ্ছ না সেটা অত্যন্ত ইতিবাচক। কারণ অনেক সময় বয়ঃসন্ধিতে ছেলেমেয়েরা এই ভুলগুলো করে ফেলে। মেয়েটি তোমার আত্মীয় বলে যদি ওদের পরিবারের অমত থাকে, তাহলে জোর করে তো তুমি কিছু করতে পারবে না। তা ছাড়া মেয়েটি যেহেতু পড়ালেখায় ভালো, তাকে তোমারও উত্সাহ দেওয়া উচিত, যাতে করে সে একটি ভালো ক্যারিয়ার গড়ে নিতে পারে।
দুজনই যখন যোগ্যতা অর্জন করবে, তখন মেয়েটির পক্ষে তার পরিবারকে বোঝানোটা অনেক সহজ হবে। তত দিন পর্যন্ত কিন্তু তোমার ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। মেয়েটি এখনো ছোট, তাই পরবর্তীকালে ওর মধ্যেও মানসিকতার পরিবর্তন আসতে পারে—এই কথাটিও মাথায় রাখবে। ওর সঙ্গে কথা বলতে পারছ না মনে করে যখন শ্বাসরুদ্ধ হবে, তখন অন্য কিছুতে মনোযোগ দিয়ে মনটিকে শান্ত করবে।
জীবনের বাস্তবতাগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হলে মনের অভ্যন্তরে অনেক ধরনের কৌশল অবলম্বন করতে হয়। তার মধ্যে একটি হচ্ছে মনের আবেগ এবং যুক্তির জায়গা দুটোকে মুখোমুখি করা। এই দুটো সত্তাকে প্রতিনিয়ত বোঝাপড়ার পরিস্থিতিতে ফেলে আবেগীয় সত্তাকে পরাভূত করতে হবে। দেখবে তখন মানসিক চাপ কিছুটা হলেও কমবে। মেয়েটির পরিবারের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে এখন নিজের ভবিষ্যত্ গড়ার পেছনে মনোযোগ দেবে সেই প্রত্যাশা রাখছি।
অধ্যাপক ড. মেহতাব খানম
কাউন্সেলিং সাইকোলজি
মনোবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ২৪, ২০০৯
Leave a Reply