কর্মজীবনে অফিসিয়াল মিটিং এক রকম প্রাত্যহিক কাজ। কিন্তু জীবনে প্রথম যেদিন অফিসের সব কর্তা ব্যক্তিদের সাথে মিটিংএ, সেদিন কিন্তু কমবেশী সবারই গলা শুকিয়ে যায়। এমন সব গুরুত্বপূর্ণ মিটিংএ কিন্তু আপনার পোশাক, ব্যবহার সর্বোপরি আপনার বডিল্যাঙ্গুয়েজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অফিসে বসদের সাথে কিংবা সহকর্মীদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং-এর দিন ঠিক কি পোশাক পড়া উচিৎ, কেমন হওয়া উচিৎ আপনার বডি ল্যাংগুয়েজ আর তাই নিয়ে থাকছে এসপ্তাহের কড়চা ম্যানার্স বিভাগটি।
মিটিং-এর বডি ল্যাংগুয়েজ
০ মিটিংএ গিয়ে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাতে ভুলবেন না। আর এই শুভেচ্ছা জানানো প্রক্রিয়াতে নিজেকে খুব স্মার্ট ভাবে উপস্থাপন করুন। তাই বলে চেয়ারের উপর দাড়িয়ে সবাইকে সালাম দেবার কথা বলছি না। কেবল সবাইকে শুভেচ্ছা জানান। ঘড়ি দেখে ঠিক করেন নিন এখন গুড মর্নিং না গুড আফ্টার নুন।
০ মিটিংএ কারো প্রস্তাবের বিপক্ষে কিছু বলবার আগে অবশ্যই তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে শুরু করুন। এতে সবার দৃষ্টি যেমন আপনার দিকে পড়বে তেমনি তাকে অপমান না করেই আপনি পাশ কাটিয়ে আপনার অভিমত ব্যক্ত করতে পারবেন।
০ যদি এটাই হয় আপনার জন্য প্রথম মিটিং এবং যদি মিটিংএ আপনার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রেজেন্টেশন দেবার না থাকে তাহলে নিজেকে মিটিংএর মধ্যে আগ বাড়িয়ে ইন্ট্রোডিউস করতে যাবেন না। এতে সবার মাঝে হাসির পাত্র হতে পারেন। যিনি মিটিংএ সঞ্চালকের দায়িত্বে আছেন তাকে সময় দিন আপনাকে মিটিংএ সবার মাঝে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য।
০ মোবাইল ফোন একদিকে আমাদের জন্য যেমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অপরদিকে কিন্তু নানান উপসর্গ তৈরিতেও ওস্তাদ। যেমন ধরুন জরুরী মিটিংএ আপনার মোবাইল ফোনটি কর্কশ আওয়াজ তুলে বেজে উঠলো, ব্যস, আপনি কিন্তু মিটিংএর মধ্যে এক রকম সং হয়ে গেলেন। আর তাই বোর্ড রুমে প্রবেশের আগে মোবাইল ফোনটি সাইলেন্ট করে নিন। দীর্ঘ মিটিংএর ক্ষেত্রে বাড়িতে ফোন করে বলে দিন আপনি মিটিং-এ থাকবেন অনেকটা সময়। একান্তই যদি ফোন কল রিসিভ করতে হয় তাহলে মিটিং সঞ্চালকের কাছে অনুমতি নিয়ে চলে যান বোর্ড রুমের বাইরে।
০ যখন াইড শো দেখে আপনি অত্যন্ত বিজ্ঞের ভঙ্গিতে প্রেজেন্টেশন দিচ্ছেন তখন চেষ্টা করুন সবার সাথে আই কন্টাক রাখতে। এতে করে আপনার বক্তব্য কার কতটা মনঃপুত হচ্ছে তা তৎক্ষণাত বুঝে যাবেন। আর সেই সাথে নিজেকে পাল্টা আক্রমনের জন্য তৈরি করে নিতে পারবেন।
০ মিটিংএর ফাঁকে অপরের কোনো আচরণ কিংবা কাজ আপনার মনযোগে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। সেক্ষেত্রে দৃঢ়, শান্ত আর সাবলিল ভাবে তাকে জানিয়ে দিন যে আপনার সমস্যার কথা।
পোশাক
০ কোথায় কেমন চাকরি করছেন তার উপরই পুরোপুরি নির্ভর করছে আপনার পোশাক আয়োজন। ধরুন আপনি চাকরি করেন একটা এয়ারলাইন্সে। সেক্ষেত্রে আপনার মিটিং-এর পোশাক হওয়া উচিৎ প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত ইউনিফর্ম কিংবা ফর্মাল ইংলিশ স্যুটে সাথে মাননসই শার্ট আর টাই। কিন্তু যদি আপনি কোনো সংবাদপত্র কর্মী হয়ে থাকেন আর মিটিংএ আপনাকে ইংলিশ স্যুটে দেখা যায় তাহলে কিন্তু মিটিংএ আপনি হবেন সবার হাসির খোরাক। আর তাই প্রতিষ্ঠানের উপরই নির্ভর করবে আপনার পোশাক।
০ মেয়েদের জন্য, মিটিংএ মার্জিত পোশাক পড়া উচিৎ। খোলামেলা পোশাক মিটিংএ মানানসই না। এক্ষেত্রে শাড়ি হতে পারে সবচেয়ে উত্তম। তবে কামিজ কিংবা শার্ট প্যান্টও চলতে পারে।
০ রঙ নির্বাচনে চেষ্টা করুন হালকা শেড বেছে নিতে। কটকটে রঙ মিটিংএ বেমানান।
আচার ব্যবহার
০ মিটিংয়ে কখনো দেরি করে পৌঁছাবেন না। এতে আপনার প্রতি সকলের খারাপ ধারণা হবে। চেষ্টা করুন মিটিংয়ে সময়ের চেয়ে একটু আগে পৌঁছে নিজেকে গুছিয়ে নিতে।
০ যদি প্রবেশে একটু দেরি হয়েও যায় তাহলে ঢুকেই সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিবেন। আর মিটিং সঞ্চালকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তবেই আসনে বসবেন।
০ কাগজ কলম রেডি রাখবেন। কারো বক্তব্য শুরু হলে মাধ্যেখানে কথা বলে উঠবেন না। আপনার কমেন্ট নোট করে রাখুন নিজের নোটবুকে। এরপর যখন আপনার বলার পালা আসবে তখন সেসব কমেন্ট তুলে আনুন আপনার বক্তব্যে।
খাওয়া-দাওয়া
০ মিটিংয়ের মাঝে খাবার সার্ভ করার জন্য উঠে পড়ে লাগবেন না। যে যার যার মতো খেয়ে নেবে। আর সবার আগে আগ বাড়িয়ে খাবার নিতে যাবেন না। অপেক্ষা করুন সিনিয়র কলিগদের জন্য।
০ চা, কফি, কোল্ড ড্রিঙ্কস যে ধরনের পানীয়ই পান করুন না কেনো খেয়াল রাখুন যেনো খাবার সময় কোনো আওয়াজ না হয়।
০ যখন কেউ কথা বলছে তখন খাবার খাবেন না। তার বক্তব্য শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। নচেৎ সে অপমানিত বোধ করতে পারে।
০ মিটিং শেষে যদি জলখাবারের ব্যবস্থা করা থাকে তাহলে মিটিং সঞ্চালকের আহবানের অপেক্ষা করুন।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, অক্টোবর ২০, ২০০৯
Leave a Reply