চা, একেক দেশে জনপ্রিয় একেক রীতিতে। কিন্তু পান করার উদ্দেশ্য একটিই—মুহূর্তে সতেজ হয়ে যাওয়া। চায়ের পরিপূর্ণ স্বাদ পাওয়া যায় এর পরিবেশনের সঙ্গে। সারা দিনের পর ক্লান্তি দূর করতে চা-ই আমাদের সঙ্গী হয়। মনোরম বিকেলে বা সন্ধ্যায় সেই চা পরিবেশনের কথাই তুলে ধরা হলো এখানে।
শত হোক মনের সঙ্গে চোখের শান্তিরও একটা যোগাযোগ আছে বৈকি। চায়ের উপকারিতা কম-বেশি সবারই জানা। দুধ দিয়ে, দুধ ছাড়া-চা তো আমরা খাই-ই। এ ছাড়া মসলা চা, দুধের ভেতর পাতি দিয়ে বানানো চা, আদা চা তো আছেই। আছে লেবু চা-ও। প্রিয় পানীয়ের স্বাদ আনতে ব্যবহার করা হয় অনেক রকমের উপকরণ। বানানো হয় মনমতো করে। বানাতে যখন এত আয়োজন, তখন পরিবেশনও হওয়া উচিত রঙে-ঢঙে মিলিয়ে।
পরিবেশনে নান্দনিকতা
বন্ধুদের আড্ডায়, পারিবারিক মেলবন্ধনে, নিজেদের একান্ত মুহূর্তে কিংবা একা একাই কিছুটা সময় পার করা—চা পানের জন্য হতে পারে এমন হাজারো উপলক্ষ। এসব মুহূর্তকে সাজিয়ে তুলতে চায়ের পরিবেশনটাও হওয়া চাই সুন্দর। ডিজাইনার শৈবাল সাহা জানান, ‘চায়ের পরিবেশনটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এর সঙ্গে অর্থনৈতিক দিকও জড়িত। নান্দনিকতা ধরে রেখে যতটুকু সম্ভব সুন্দরভাবে চা পরিবেশন করা উচিত।’ রান্না এবং তার উপস্থাপনা—দুটি বিষয়েই সমান সচেতন রান্নাবিদ রাহিমা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘আমাদের সময় টি-কোজি ব্যবহার করা হতো। এখন এর প্রচলন অনেকটাই কমে গেছে। তবে এ রীতিটা আবার চায়ের টেবিলে যোগ করলে মন্দ হবে না। এতে করে চায়ের পাত্রে অনেকক্ষণ চা গরম থাকবে। ইচ্ছেমতো পছন্দ অনুযায়ী কিছুক্ষণ পরপরই চা পান করা যাবে।’ জানালেন রাহিমা সুলতানা রীতা।
চা পরিবেশনের কিছু কথা তুলে ধরলেন রাহিমা সুলতানা। চায়ের টেবিলে থাকা উচিত চায়ের পাত্র, চিনির পাত্র, দুধের পাত্র ও চামচ। চা পান করা হয় আমেজের জন্য। এ সময় সবকিছুতেই যেন একরকম আন্তরিকতা খুঁজে পেতে চায় মন।
কখনোই কাপে ভরে চা দেওয়া উচিত নয়। চা ছলকে পড়ার আশঙ্কা তো আছেই, দেখতেও ভালো লাগে না।
টি-পটে করে চা দিতে হবে। পান করার সময় কাপে চা ঢেলে নিতে হবে। কাপগুলো উপুড় করে পিরিচের ওপর রাখা উচিত, এতে ময়লা পড়ার আশঙ্কা থাকবে না। প্রতিটি কাপের সঙ্গে একটি করে চামচ থাকবে। চা পরিবেশনের জন্য বাজারে পাওয়া যাচ্ছে হরেক উপাদানের পাত্র। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কাচ, মাটি ও সিরামিকের পাত্র। ‘এখন সিরামিকের চায়ের পাত্রের চাহিদা বেশি।’ জানালেন ক্লে সিরামিকসের কর্ণধার ও ডিজাইনার রেহানা আখতার। একটু ছাই-ধাঁচের রঙে দেশীয় আমেজটাও ফুটে ওঠে বলে মনে করেন তিনি।
সঠিকভাবে উপস্থাপন
‘একজন বা দুজনের জন্য চা পরিবেশনের ক্ষেত্রে চারকোনা ট্রে হওয়াই ভালো। ট্রের কোনার দুই দিকে (বিপরীতমুখী) চায়ের পাত্র, চিনির পাত্র ও দুধের পাত্রটি সাজান। অপর দুই দিকে চায়ের কাপ দুটি রাখতে হবে।’ এভাবেই বললেন রেহানা আখতার।
পারিবারিক আমেজে চা পরিবেশনটা একটু আলাদা হবে। এ ক্ষেত্রে ট্রে গোল হলে ভালো। টি-পটটি মাঝখানে রেখে কাপগুলো চারপাশ দিয়ে সাজানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে কাপ নিতে সুবিধা হবে। বিকেলে টি-টেবিলে শুধু চা মানানসই নয়, দরকার হালকা কিছু খাবারও। কুড়মুড়ে, নোনতা বা ঝাল-জাতীয় খাবারই এ সময় মুখরোচক হবে বলে মনে করে রাহিমা সুলতানা। রং চা দিলে আলাদা একটি পাত্রে লেবুর টুকরা, নানারকম মশলা দিয়ে পরিবেশন করতে পারেন।
সঠিক মাপ
একটুও কম নয়, আবার অতিরিক্ত বেশিও না, কাপে ঢেলে দেওয়া চায়েরও আছে একটা নির্দিষ্ট মাত্রা। চায়ের তৃষ্ণা মেটাতে যতটুকু দরকার, ততটুকু চুমুক দেওয়া উচিত। এ জন্য দরকার সঠিক মাপের কাপ। রেহানা আখতার জানান, চায়ের কাপের ক্ষেত্রে ২৫০-৩০০ সিসি মাপই সঠিক। ছয়জনের জন্য টি-পটটি হওয়া দরকার ১১০০-১২০০ সিসি। চিনি ও দুধের পাত্রটি এ ক্ষেত্রে হওয়া দরকার ২০০-৩০০ সিসির। চায়ের টেবিলটি হতে পারে গোল বা চারকোনা আকারের, আপনার পছন্দ অনুযায়ী। তবে এটি উচ্চতায় যেন কম হয়।
রয়া মুনতাসীর
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ২০, ২০০৯
Leave a Reply