অন্দরমহলের সাজকে নান্দনিক করার প্রচেষ্টায় ঘরের সবটুকু জুড়ে কতনা আসবাব এবং প্রপসের থাকে সরব উপস্থিতি। আর ঘরের এই রূপকে আরও বিকশিত করার জন্য বর্ণিল প্রজাপতি হয়ে দরজা-জানালায় উড়ে থাকে বাহারি পর্দার সমারোহ। শুধু আব্রু নয়, এ যেন এমন এক সাজ যা প্রতিটি ঘরকেই করে আরও স্টাইলিশ, নান্দনিক। পর্দার এই অপরূপ ব্যবহার নিয়ে লিখেছেন রুদ্র মাহ্ফুজ
বাঙালি উৎসব-পাবর্ণে যেমন নিজেকে রাঙায় বাহারি পোশাক দিয়ে তেমনি নিজের অন্দরমহলকেও নানা আঙ্গিকে সাজিয়ে তোলে। ঈদ-পূজো ছাড়াও বৈশাখ থেকে বসন্তে বাঙালি ঋতু বৈচিত্র্যের সাথে প্রাসঙ্গিক রেখেই সাজাতে চেষ্টা করে নিজ ঘরকে। আর এই ক্ষেত্রে পর্দা নামক শব্দটি ঘরের সাজ-সজ্জা এমনকি স্টাইলকেও করে পরিবর্তন। ছোট্টবেলার স্মৃতিতে যে কেউ-ই অকপটে বলতে পারবেন, কী করে উৎসবে ঘরের নতুন পর্দাগুলো ঘরের সব আবহকে বদলে দিত। হালে অন্দরসাজের বদলে যাওয়া সংজ্ঞার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পর্দা নিয়ে চলছে নানান এক্সপেরিমেন্ট। ব্যবহার করা হচ্ছে ফ্যাব্রিক, টেক্সচার। তবে পর্দার ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বাড়ির তথা ঘরের আয়তন, আসবাব, প্রপস এবং দেয়ালের রঙের বিষয়টিকে অবশ্যই প্রাধান্য দিতে হবে। অন্দর সাজে যদি থাকে ভাইব্রান্ট কালারের ব্যবহার আর বাইরে থেকে ঢুকেই বেশ বড় বসার ঘরে যদি থাকে রঙের উষ্ণ অভ্যর্থনা তবে বড় কাঁচের জানালা ও দরজায় লাগানো যেতে পারে হেভি কটন আর বাঁশের সম্মিলনে রোমান ব্লাইন্ডস। ঘরের আসবাব ও দেয়ালের রঙের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কটন ফ্যাব্রিকের রঙ হিসেবে বেছে নিতে পারেন মাস্টার্ড ইয়েলো। কিংবা ট্র্যাডিশনাল ডেকর উপর যাদের রয়েছে দুর্বলতা, তারা তাদের বড় ঘরগুলোতে ব্যবহার করতে পারেন মাদুরের চিক। দূর থেকে দেখলে চিকগুলো বেশ এক্সপেনসিভ মনে হলেও বাস্তবে বেশ স্বল্পমূল্যে আপনি তৈরি করে নিতে পারেন এই দিকগুলো। চিকের চারধারে এবং ভার্টিক্যালি বসানো কাপড়ের পট্টি এনে দিতে পারে আরও নান্দনিকতা। আর এ কাজটি অবসর সময়ে বাড়িতে নিজেই সেরে নিতে পারেন। চিকের ব্যবহারের ক্ষেত্রে ঘরে আসবাবের বাহুল্য না থাকাই বাঞ্চনীয়। চিক ঘরের আলোর আগমনকে যেমন বিঘ্নিত করবে না তেমনি বাতাসকেও স্বাগত জানাবে নির্দ্বিধায়। তবে আপনার মনবাসনা যদি থাকে পর্দার প্রতি তাহলে ভারী কটন অথবা সিন্থেটিক ফ্যাব্রিকের পর্দা ব্যবহার করতে পারেন। যে সব বাড়ির পুরো ঘরজুড়েই থাকে এথনিক টাচ, তাহলে পর্দা হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন মাদুরের চিক। বিভিন্ন আঙ্গিকের চিকে গর্জিয়াস ভাব আনতে জরির কাজ করা কাপড়ের পট্টি ব্যবহার করা যেতে পারে। এথনিক টাচে থাকা ঘরে গাঢ় রঙের চিক ব্যবহার করেও আপনি দেখতে পারেন। পর্দা যেমনই হোক না কেন পর্দার ফ্যাব্রিক পছন্দ করার সময়ে একটা বিষয় অবশ্যই মনে রাখা উচিত, তা হল সেটার সঠিক ও নিয়মিত মেন্টেনেন্স। পর্দার রঙ আর ঘরের রঙের সঙ্গে কালার কো-অর্ডিনেট করাও জরুরি। ঘরে আলোর প্রবেশকে যদি করতে চান সীমিত তাহলে ভারি পর্দা ব্যবহার করা যেতে পারে। গরমের সময় সূর্যের তাপ থেকে ভারি পর্দা আপনাকে নিশ্চয় অনেক আরাম দেবে। আর ভারি পর্দার পাশেই আপনি রাখতে পারেন হালকা কাপড়ের পর্দা যা শীত মৌসুমে সূর্যের আলোকে কখনোই করবে না বাঁধাগ্রস্ত। কোনো কারণ ছাড়াই আপনার জানালাটি যদি হয় দখিনা, তাহলে বাতাসের প্রবেশকে নির্বিঘ্ন করতে হালকা পর্দা ব্যবহার করা বাঞ্চনীয়। পর্দা শুধু আব্রু নয়, পর্দা নান্দনিকতার এক অপূর্ব ছোঁয়া। যা আপনার ঘরকে স্টাইলিশই করে না, করে সুন্দর।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০০৯
Leave a Reply