মেকআপ ব্রাশ এখন রূপচর্চার একটা অন্যতম প্রধান উপকরণ। সাধারণভাবে মেকআপ ব্রাশ হলো এমন এক ধরনের উপকরণ যার কাজ হচ্ছে আপনার ত্বকের উপর মেকআপ প্রয়োগ করা। তবে মেকআপের উপকরণ হিসেবে এই ব্রাশ অপরিহার্য হলেও এটা নিয়ে রমনীকূল খুব কমই চিন্তা করে থাকেন। কিন্তু একটা নিখুঁত মেকআপের পেছনে উন্নতমানের উপাদান ও প্রয়োগ দক্ষতার পাশাপাশি যে উপকরণ ব্যবহার করা হবে সেটার গুরুত্ব উড়িয়ে দেয়া যায় না। সৌন্দর্য প্রেয়সীরা মনে করুন তো মেকআপ ব্রাশবিহীন একটা পৃথিবীর কথা। আপনাদের জন্য আসলেই এই কাজটা অনেক কঠিন। তাই তো মেকআপের পাশাপাশি মেকআপ ব্রাশ কেনার আগে আপনার যাচাই বাছাই করে নিতে হবে কী প্রয়োজন এবং বাজারে আপনার জন্য কী আছে। তাই এই সাধারণ ও বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়েই আমাদের বিশেষ আয়োজন।
মাহফুজ অনিম
মেকআপ ব্রাশ তিনটা অংশ নিয়ে গঠিত। হাতল, হেয়ার বালোম ও ফেরল যার কাজ হচ্ছে হেয়ারের সাথে হাতলকে যুক্ত করা। মেকআপ ব্রাশের মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ব্রাশের চুল। কারণ এটা আপনার মেকআপ নির্ভুলতাকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করছে। এটা তিনভাবে তৈরি হতে পারে। প্রাকৃতিক চুল, পশুর শক্ত লোম ও কৃত্রিম চুল থেকে। এদের মধ্যে সবচেয়ে উন্নতমানের হলো প্রাকৃতিক চুল থেকে তৈরি ব্রাশ কারণ এরা অতিরিক্ত কসমেটিকস তাদের ভেতরে আটকে রাখে। এছাড়া ব্যবহারের সাথে সাথে ব্রাশের চুলগুলো নরম হতে থাকে ফলে ব্যবহার করা আরও সহজ হয়ে যায়। তবে প্রাকৃতিক ব্রাশের ভেতরেও মানের রকমফের রয়েছে। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্রাশ তৈরি হয় ছাগলের লোম ও চুল ব্যবহার করে। আর প্রাকৃতিক ব্রাশের প্রধান সুবিধে হলো এগুলো অনেক সহজে পরিষ্কার করা যায়।
মেকআপ ব্রাশের প্রয়োজনীয়তা
ভাল মেকআপ ব্রাশ বলতে এমন এক ধরনের ব্রাশকে বোঝায় যা ধরা ও নিয়ন্ত্রণ করা আপনার জন্য সহজ এবং একই সাথে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারবেন। এমন কিছু রমনী আছেন যারা মনে করেন মেকআপ ব্রাশ কেবল তখনই ব্যবহার করা উচিত যখন মেকআপ প্রয়োগ করার কাজটা হাতের আঙ্গুলে করা সম্ভব হবে না। একটু খেয়াল করলেই দেখবেন হাতের আঙ্গুলগুলো জিনিসপত্র ধরার কাজেই ব্যবহার করে আসছেন, তাহলে মেকআপ ব্রাশ ধরতে বাধা কোথায়?
মেকআপ ব্রাশ ব্যবহারের সুবিধা
০ মেকআপ ব্রাশ সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
০ ব্রাশের সাহায্যে মেকআপকে অনেক বেশি স্বাভাবিক ও সহজ করে তোলা যায়। ব্রাশের সাহায্যে একটা রঙকে আরেকটা রঙের সাথে মেশানোও সহজ হয়।
০ ব্রাশের সাহায্যে ম্যাচিং ইফেক্ট দেয়াও বেশ সহজ।
০ হাতের আঙ্গুল প্রয়োগ করে কসমেটিক প্রয়োগ করা অনেক ক্ষেত্রেই অস্বাস্থ্যকর।
ব্রাশের প্রকারভেদ
অনেক ধরনের মেকআপ ব্রাশ হতে পারে। কোন স্থানে ও কোন কাজে মেকআপ ব্রাশ প্রয়োগ করা হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে মেকআপ ব্রাশকে পাঁচভাগে ভাগ করা যায়। নিচে এধের বিস্তারিত দেওয়া হল-
পাওয়ার ব্রাশ : পাওয়ার ব্রাশ মূলত আকারে একটু বড় হয়। এ ব্রাশগুলো হলো অভিজাত গোত্রের। সাধারণত মুখের উপর থেকে ধূলো পরিষ্কার করতে বা চাপ দিয়ে পাউডার বসানোর জন্য ব্যবহৃত হয় এই ব্রাশ।
ব্লাশ ব্রাশ : ব্লাশ ব্রাশ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো খুবই নিখুঁতভাবে প্রয়োগ করা যায়। এ ব্রাশগুলো মূলত ব্যবহার করা হয় মুখের উপর।
স্পঞ্জ ব্রাশ : একটি রঙের সাথে আরেক রঙ মেশানোর জন্য এই ব্রাশ কার্যকরী। মুখের উপর দুই তিন রঙের শেড করে কোন একটা বিশেষ লুক দেয়ার জন্য এই ব্রাশ ব্যবহার করা হয়।
আই ব্রাশ : আপনার সৌন্দর্যে আপনার চোখের অবদান অনেক। একই সাথে মনে রাখতে হবে চোখ অনেক সেনসেটিভ। সেই জন্য চোখের যত্নে প্রয়োজন হয় বিশেষ এক ধরনের ব্রাশের। এসব ব্রাশের মধ্যে রয়েছে আইশ্যাডো, আইলাইনার, আইব্রো ব্রাশ ইত্যাদি।
লিপ ব্রাশ : বর্তমান সময়ে লিপস্টিক ঠোঁটে ব্যবহার করার জন্য একমাত্র উপকরণ নয়। এর পাশাপাশি আরো কিছু কসমেটিকসও ব্যবহার হয় ঠোঁটের উপরে শেডগুলোকে নিখুঁত করার জন্য। এই ধরনের ব্রাশ বিভিন্ন রকমের রঙ ঠোঁটের উপর লাগানো ও মেশানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ মেকআপ ব্রাশ
আপনার ব্যবহার করার মত প্রায় শ’খানেক বিভিন্ন ধরনের ব্রাশ আপনি বাজারে পাবেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে কেবল ৫টি ব্রাশ থাকলেই আপনি আপনার মেকআপের পুরো কাজটা সুচারুভাবে সম্পাদন করতে পারবেন। এগুলো হলো-
সোজা মাথাবিশিষ্ট কনসিলার ব্রাশ : লিক্যুইড, ক্রিম বা পাউডার যেকোনো ধরনের কনসিলার প্রয়োগ করা সম্ভব এই ব্রাশের সাহায্যে।
আইলাইনার ব্রাশ : আলাদা আইলাইনার ব্রাশ ব্যবহার করে আপনি লিক্যুইড আইলাইনার সীমিত শেড একটার সাথে আরেকটা মিশিয়ে অনেক ধরনের শেড তৈরি করতে পারেন। এমন কি চোখের উপর ও প্রয়োগ করতে পারেন।
ফাউন্ডেশন ব্রাশ : মেকআপের শেষ পর্যায়ে যে জিনিসটা সাধারণত ব্যবহার করা হয় সেটা হলো ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশন ব্রাশের সাহায্যে খুব সহজে এই জিনিসটা প্রয়োগ করা যায়।
কাবুকি ব্রাশ : এই ব্রাশটিকে ডাকা হয় অলরাউন্ডার বলে। কারণ এটা দিয়ে পাউডার ব্রাশ বা ব্রোনজ যেকোনো কিছু প্রয়োগ করা যায় তাও আবার খুব কম সময়ে।বড় আইশ্যাডো ব্রাশ : বড় আইশ্যাডো ব্রাশের একটা বৈশিষ্ট্য হলো পাউডার যেন চোখের বদলে নাকের উপর না পড়ে সেটার নিশ্চয়তা দেয়া। এই ব্রাশ ব্যবহারের ফলে অন্তত একটা পরিচ্ছন্ন ও ন্যাচারাল লুক পাওয়া যায়।
ব্রাশের যত্ন
মেকআপ ব্রাশ আপনাকে প্রায়ই ব্যবহার করতে হয় তাই এই ব্রাশের যত্ন নেয়া না হলে মানের অবনমন ঘটতে পারে। ঠিকভাবে যত্ন নেয়া হলে একটা মেকআপ ব্রাশেই কাটিয়ে দেয়া যায় ১০ বছর। কাজেই বুঝতে পারছেন মেকআপ ব্রাশের যত্ন নেয়াটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আপনাকে অবশ্য বেশকিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। নিয়মগুলো হলো-
০ মেকআপ ব্রাশগুলো সবসময় আলাদা করে বিশেষ একটা ব্যাগে রাখবেন। অবশ্য মেকআপ ব্রাশ ব্যাগ নামে বিশেষ এক ধরনের ছোট ছোট ছিদ্র যুক্ত ব্যাগ আছে যা ব্রাশকে ধূলোবালি থেকে মুক্ত রাখে।
০ সপ্তাহে অন্তত একদিন পরিষ্কার করুন আপনার মেকআপ ব্রাশ।
০ পরিষ্কার করার পর ব্রাশকে বাতাসে শুকাতে দেবেন। কখনোই হেয়ার ড্রায়ারের মত কোনো যন্ত্র ব্যবহার করবেন না। কারণ ব্রাশের কুচিগুলো জমে শক্ত হলে পরে তা ব্যবহার করতে সমস্যা হবে।
০ ব্রাশের যত্ন নেয়ার একটা বিশেষ দিক হলো এটা নিয়মিত পরিষ্কার করা।
০ কুসুম গরম পানি আস্তে আস্তে ঢালতে থাকুন ব্রাশের চুলের উপরে। একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন ব্রাশের হাতল যেন খুব বেশি না ভেজে। বিশেষ করে সেটা যদি কাঠের তৈরি হয়।
০ ব্রাশের চুল চেপে ধরে অতিরিক্ত পানি বের করে আনুন।
০ ব্রাশের চুলগুলোকে পুনঃবিন্যস্ত করুন।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০০৯
Leave a Reply