কয়েক দিন পরই ঈদ। ঈদের প্রস্তুতির শেষ নেই। চলছে এখন শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা। ছোটাছুটিতে ব্যস্ত থাকায় হয়তো একেবারে প্রয়োজনীয় জিনিসটি কেনার কথাই মনে পড়ে না। ঈদ চলে আসে, হঠাত্ মনে হয়, আরে! এটা তো কেনা হয়নি, কী করে ভুলে গেলাম! একটু সচেতন হলেই কিন্তু এই অবস্থাকে সামাল দেওয়া যায়।
কথা হয় গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ফিরোজা সুলতানার সঙ্গে। ‘রোজার শুরুতে করা তালিকাটি হাতের কাছেই রাখুন। যাকাত, আত্মীয়-স্বজন, অসচ্ছল প্রতিবেশী, কাজের লোক ও নিজেদের জন্য কেনাকাটায় কোনো ফাঁক থাকল কি না, তা যাচাই করে দেখুন। যেগুলো এরই মধ্যে কিনে ফেলেছেন, তার পাশে টিক চিহ্ন দিন। ঈদের ছুটিতে যদি কোথাও বেড়াতে যান, তাহলে আগেভাগেই তালিকা দেখে সব গুছিয়ে রাখুন। গৃহস্থালির আনুষঙ্গিক কাজের তালিকাও তৈরি করে নিন। যেমন, লন্ড্রিতে কাপড় দেওয়া, নির্দিষ্ট সময় তা ফেরত নিয়ে আসো। ছুটির সময়টিতে জরুরি টেলিফোন নম্বর (পুলিশ, চিকিত্সক, দমকল বাহিনী) নাগালের মধ্যে রাখুন। প্রাথমিক চিকিত্সা বাক্সে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র আছে কি না, তা দেখে নিন। সালামির জন্য টাকা আলাদা করে রাখুন। আগেই ব্যাংক থেকে খুচরা নতুন টাকার নোট আনিয়ে নিতে পারেন।’
পোশাক-পরিচ্ছদ
‘নতুন পোশাক ছাড়া ঈদের কথা কি ভাবা যায়? নতুন পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে ব্যাগ, জুতো, স্যান্ডেলও তো কেনা চাই। শেষ মুহূর্তে যে পোশাক কেনা হয়েছে, তার অনুষঙ্গগুলো এখনই কিনে ফেলুন। দর্জিবাড়ি দেওয়া অন্য পোশাকগুলো নির্দিষ্ট সময়ে নিয়ে আসুন। বাড়িতে এনে অবশ্যই পরে দেখুন, মাপমতো হয়েছে কি না। মাপমতো না হলে এখনই তা ঠিক করতে দিন। শাড়িতে নকল পাড় লাগাতে হলে তাও কিনে রাখুন। ঈদের অন্তত তিন দিন আগে তা লাগিয়ে ফেলুন।
ছোট্ট সোনামণিদের পাঞ্জাবির সঙ্গে কোলাপুরি স্যান্ডেল, কোমরের বেল্ট কিংবা গয়না বাদ পড়েছে কি না, আরেকবার খেয়াল করুন। এসব কেনাকাটা করে এখনই করে ফেলুন, পরের জন্য ফেলে রাখবেন না।’ বিবিয়ানার স্বত্বাধিকারী লিপি খন্দকার এমনটাই মনে করেন।
আরও খুঁটিনাটি জানালেন তিনি, স্যান্ডেল হতে হবে আরামদায়ক কিন্তু ফ্যাশনেবল। আজকাল ফ্ল্যাট স্যান্ডেলই বেশি চলছে। তবে বয়স্কদের জন্য হালকা উঁচু বা ব্লক হিলও কিনতে পারেন। কেনাকাটার আগে তাদের পছন্দটি জেনে নিন। সাদা কাগজে পা রেখে এঁকে নিন। পেয়ে যাবেন পায়ের মাপ। পায়ের জন্য আরামদায়ক না হলে সেই স্যান্ডেল কিনবেন না, দ্রুত তা পাল্টে নিন। এসব কাজ ফেলে রাখলে চলবে না। পরে করবেন ভেবে রেখে দিলে দেখা যাবে, অন্যান্য কাজের চাপে একসময় তা ভুলে গেছেন।
হেঁশেলের খোঁজখবর
‘ঈদের দিন বিশেষ রান্না তো করতেই হবে। তাই এক সপ্তাহ আগেই রান্নার মেন্যু ও রন্ধনপ্রণালী ঠিক করুন। এবার তা কাগজে লিখে রাখুন। উপকরণের নামগুলোও বাদ দেবেন না। সম্ভব হলে মসলাগুলো আলাদা আলাদা প্যাকেটে রাখুন। মাছ, মাংস, সবজি, ফলমূল ভালোভাবে মুড়িয়ে ফ্রিজে রাখুন। ঈদের দুদিন আগে আবার চোখ বুলিয়ে নিন তালিকাটিতে। মিষ্টিজাতীয় খাবার, যেমন সেমাই, পায়েস, পুডিং ঈদের আগের দিনই তৈরি করে ফ্রিজে রেখে দিন। এতে সময়ও বাঁচবে, খেতেও মজা লাগবে।’ বললেন পুষ্টিবিদ সিদ্দিকা কবীর।
নিন ত্বকের যত্ন
এটা সবাই জানে, ঈদের দুদিন আগে থেকেই বিউটি পার্লারগুলোতে প্রচণ্ড ভিড় হয়। অনেক সময় এই ভিড়ের কারণেই ভ্রু প্লাক করা বা চুল কাটানোর কাজটি ঠিকমতো করা হয়ে ওঠে না। পারসোনার স্বত্বাধিকারী ও রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান মনে করেন, ঘুরে ঘুরে শপিং করার কারণে অনেকেরই ত্বকের ক্ষতি হয়ে যায়। রোদেপুড়ে, ধুলো-ময়লা জমে যায়। এ জন্য ঈদের অন্তত ১৫ দিন আগে থেকে বাসায় ত্বকের যত্ন নেওয়া উচিত। চুল কাটা, চুল স্ট্রেইট করা, রিবন্ডিং তখনই করতে হবে। ভ্রু প্লাক, ফেসিয়াল, মেনিকিউর-পেডিকিউর ও চুলে রং করতে চাইলে এক সপ্তাহ আগে করতে হবে। মেহেদি লাগানোর রেওয়াজ চাঁদরাতে হলেও ঈদের দুদিন আগে লাগালেও ক্ষতি নেই। কেনাকাটা করার আগে প্রসাধনসামগ্রী ঠিক আছে কি না, দেখে নিন; বিশেষ করে নেইল পলিশ, লিপস্টিক, রিমুভার, আইলাইনার, মাশকারা, ফেসওয়াশ। তালিকাটি তৈরি করার সময় এগুলো সব ঠিক আছে কি না, ভেবে নিন। ঈদের দিন কীভাবে সাজবেন, তা আগেভাগেই ঠিক করুন। এ ছাড়া চুল শুকানো, চুল সোজা করার যন্ত্রগুলোও ভালোভাবে পরীক্ষা করে নিন। সবকিছুই হাতের নাগালের মধ্যে রাখুন।
দুই সন্তানের জননী মনোয়ারা চৌধুরী স্কুলে শিক্ষকতা করেন। এ ছাড়া ভাইবোনদের মধ্যেও সবার বড় তিনি। ঈদের আগে তাই পরিবারের সবার জন্য নানা কেনাকাটা করতে হয় তাঁকে। তিনি জানালেন, প্রতি রোজার ঈদে নতুন বাসনকোসন কেনেন। রোজার শুরুতেই বাজেট করে তালিকা করেন তিনি। সব ধরনের কেনাকাটাই সেরে ফেলেন ঈদের দিনদশেক আগে। ‘সবার আগে কাজের লোকদের কেনাকাটা সেরে ফেলি। এরপর আত্মীয়স্বজন ও নিজেদের কেনাকাটা। এক সপ্তাহ রাখি ঘর গোছানোর জন্য। কুশন কভার, বিছানার চাদর, টেবিলের ঢাকনা, হাঁড়ি ধরার কাপড়সহ টুকিটাকি সব কিনে ফেলি। সারা বছরেরটা মোটামুটি তখনই কেনা হয়ে যায়। পোশাকের ক্ষেত্রে রাখি বিকল্প ব্যবস্থা। ব্লাউজ মেলানো আছে এমন শাড়ি কিনে রাখি। এমনও দেখা গেছে, ছেলের প্যান্ট কিনে এনেছি, কিন্তু মাপমতো হয়নি, ফেরত দেওয়ারও সুযোগ নেই। সে জন্য পাঞ্জাবি, শার্টের সঙ্গে বিকল্প প্যান্টও আলাদা করে রাখি। গৃহসজ্জার সামগ্রী সাত দিন আগে কিনে ফেলি। মেয়েকে নগদ টাকা দিয়ে দিই, যেন সে তার ও তার শ্বশুরবাড়ির সবার জন্য পছন্দমতো কিছু কিনে নেয়। ঈদের পরদিন আর মাংস, পোলাও খেতে ভালো লাগে না। এ জন্য আগেই সবজি, মাছ কিনে ফ্রিজে রেখে দেই। ’
সুতরাং, এখনই কাগজ-কলম নিয়ে বসে যান। করে ফেলুন প্রয়োজনীয় তালিকা। সব কেনা হলে পাশে টিক চিহ্ন দিন। এতে সময়ও বাঁচবে, ঈদও কাটবে অনাবিল আনন্দে।
তৌহিদা শিরোপা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০০৯
Leave a Reply