৩৯৯ টাকায় তিনটি সালোয়ার-কামিজের কাপড়। এটা কী করে সম্ভব? এমন প্রশ্ন মনে আসাটাই স্বাভাবিক। কেউ বলতে পারেন, কাপড়ের মান নিশ্চয়ই ভালো নয়।
আসলে ব্যাপারটা কী?
নরসিংদীর একটি কারখানা থেকে এবারের ঈদ উপলক্ষে কাপড়গুলো বাজারে নিয়ে আসা হয়েছে।
ঈদ সামনে রেখে মানুষের কেনাকাটা সহজলভ্য করে তুলতে রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠেছে বস্ত্রমেলা।
এ রকম তিনটি মেলা ঘুরে তৈরি করা হয়েছে প্রতিবেদনটি। একটি বাসাবো খেলার মাঠে, একটি মানিক মিয়া এভিনিউতে আর অন্যটি আগারগাঁও তালতলায়।
বাসাবো খেলার মাঠে ঢুকতেই দেখা গেল কাপড় কেনার ধুম।
জানা গেল, দেখতে সুন্দর এবং দামে কম হওয়ায় ধুমছে বিক্রি হচ্ছে এগুলো। মোট ৩৬টি স্টল নিয়ে এখানে মেলা জমে উঠেছে। কী নেই এ মেলায়?
শাড়ি, জামা, পাঞ্জাবি, তৈরি পোশাক, ছোটদের পোশাক, জুতা, কসমেটিকস, ব্যাগ, বিছানার চাদর, জানালার পর্দার কাপড়, কুশন, তৈজসপত্র-সবই পাওয়া যাচ্ছে এ মেলায়।
এখানে মিলবে বিভিন্ন দামে জাকাতের কাপড়। ফলে যানজটের শহরে দিনভর বসে থেকে ভিড়ের মধ্যে হুড়োহুড়ি করে মার্কেটে গিয়ে এ অঞ্চলের মানুষকে কেনাকাটা করতে হবে না।
বাসাবোর মেলায় পাওয়া যাবে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন কাপড়ের মিল থেকে তৈরি করা সুতি ও জামদানি শাড়ি। এখানে টাঙ্গাইলের শাড়ি-কাপড়ের জন্য রয়েছে চারটি দোকান। ২০০ থেকে শুরু করে দুই হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত দামের শাড়ি পাওয়া যাবে এসব দোকানে। লুঙ্গি রয়েছে ১৫০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে।
সুতি, লিনেন, সিল্ক, খদ্দর কাপড়ের পাঞ্জাবি আছে ২০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত।
সিল্কের শাড়ি রয়েছে নানা কারুকাজে। ৭০০ থেকে শুরু করে তিন হাজার টাকায় ক্রেতারা কেনাকাটা করছে এখানে।
বিভিন্ন জর্জেট কাপড়ের ওপর হাতে কাজ করা তৈরি জামা রয়েছে মেলায়। ৬০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে এ জামাগুলো।
জুতার দামও বেশ সস্তা। বিছানার চাদর থেকে শুরু করে ঘরের গৃহস্থালি অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও মিলবে।
মেলায় যারা কেনাকাটা করছে, তাদের জন্য রয়েছে নানা পুরস্কার।
র্যাফল ড্র অনুষ্ঠিত হবে ঈদের পর। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত মেলা চলবে বলে জানান মেলার কর্তৃপক্ষ।
সংসদ ভবন অর্থাৎ মানিক মিয়া এভিনিউতে গেলেই চোখের সামনে ভেসে উঠবে কিছু ব্যানার, যেগুলোয় লেখা রয়েছে ‘দেশি পণ্য কিনে হও ধন্য’।
বাংলাদেশ তাঁতবোর্ডের পৃষ্ঠপোষকতায় এখানে প্রথম রোজা থেকেই শুরু হয়েছে মেলা। প্রায় ৪০টি স্টল নিয়ে মেলা বেশ জমজমাটভাবেই চলছে।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে তাঁতিরা এসেছেন এবং তাঁরা দেশি কাপড় নিয়েই দোকান দিয়েছেন।
মেলায় পাওয়া যাবে টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, কুমিল্লা, গাইবান্ধা ও নরসিংদী অঞ্চলে তৈরি করা মিলের কাপড়। আছে পাটের তৈরি বিভিন্ন পণ্য।
টাঙ্গাইল সুতি, জামদানি, কুমিল্লার খাদি, সিরাজগঞ্জের জামদানি শাড়িতে দোকানগুলো ভরা।
এগুলোর দাম কেমন?
টাঙ্গাইলের সুতি শাড়ি ২৫০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। জামদানি শাড়ি আছে এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। সিল্কের শাড়ির দাম ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা।
এখানে আছে পাঞ্জাবি। ৩০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় পাওয়া যায় নানা রঙের নানা কারুকাজের পাঞ্জাবি।
মূল্য ছাড়ও দেওয়া হচ্ছে কোনো কোনো পণ্যের ওপর।
আছে নানা রকম ক্লিপ, চুড়ি, কানের দুলের ছোট ছোট দোকান। এ ছাড়া পাওয়া যাবে হাতের তৈরি খাদ্যদ্রব্যের প্যাকেট।
মিরপুর অঞ্চলের আগারগাঁও তালতলায় বিশাল পরিসরে বসেছে মেলা। এ মেলাও বাংলাদেশ তাঁতবোর্ডের পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজন করা হয়েছে। ৫২ জন তাঁতির পরিচালনায় এখানে বসেছে প্রায় ৪০টিরও বেশি দোকান।
এই মেলায় গেলে চোখ জুড়িয়ে যায় জামদানি শাড়ি দেখে। তাঁতিরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জামদানি সংগ্রহ করে দোকানে সাজিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, তারাবো অঞ্চলের জামদানি শাড়ি যেমন আছে, তেমনি আছে পাবনা, টাঙ্গাইলের জামদানিও। আছে কাতান। এগুলোর দাম ১০০ থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত।
এখানে রয়েছে মণিপুরি পোশাক। আছে মনপুরা জামা। একটু এগোলেই দেখা যাবে রাজশাহী সিল্ক। বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে সিল্ক। দাম ৭০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা।
ঘরের দরজা-জানালার পর্দা যেমন আছে, তেমনি আবার বিছানার রংবেরঙের চাদরও আছে এখানে। আছে হাতের কাজ করা নানা রকম পোশাক। ছোট-বড়-সবার জন্যই রয়েছে এসব পোশাক।
এই মেলায়ও বিক্রি হচ্ছে ৩৯৯ টাকায় তিনটি কাপড়।
মেলায় আসা বেশ কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা হলো। তাঁরা তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা বললেন।
‘একসঙ্গে অনেক দোকান থেকে দেশীয় তাঁতিদের তৈরি কাপড়চোপড় পাওয়া যাচ্ছে, আমরা এখান থেকে দেখে-শুনে কেনাকাটা করতে পারছি।’ বলছিলেন আমিনুল হক।
রাশেদা বেগম মনে করেন, জাকাতের শাড়ি ও লুঙ্গির জন্য এর চেয়ে ভালো উপায় আর কিছু হতে পারে না। তিনি বলেন, ‘কোনো ঝামেলা নেই। দেখে-শুনে ১২ হাতের জাকাতের শাড়িগুলো কিনছি মাত্র ২৫০ টাকা দরে। আবার ১৮০ টাকার মধ্যেও কিনতে পারছি। এ রকম মেলা হওয়ার সুফল এটাই।’
তাঁত বোর্ডের উদ্যোগে ঢাকা শহরে এ রকম আরও মেলা বসেছে। এরই মধ্যে উত্তরায় একটি মেলা বসেছে। আবার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার স্থলে একটি মেলার আয়োজন চলছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, ঈদ সামনে রেখে বিপণিবিতানগুলো ছাড়াও এবার তাঁত বোর্ডের এমন মেলা সবারই নজর কেড়েছে।
সাগর মৈত্রী
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০০৯
Leave a Reply