চুল কেরাটিন নামের এক রকম প্রোটিন দিয়ে তৈরি হয়। চুলে ৯৭ ভাগ প্রোটিন ও ৩ ভাগ পানি রয়েছে। চুলের যেটুকু আমরা দেখি সেটি মৃত কোষ। কারণ এতে অনুভূতিশীল কোনো কোষ নেই। একজন সুস্থ মানুষের মাথায় গড়ে ১ লাখ থেকে দেড় লাখ চুল থাকে। প্রতিদিন ১০০টি পর্যন্ত চুল ঝরে পড়া স্বাভাবিক। এর থেকে বেশি চুল পড়লে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। গ্রীষ্মকালে চুল দ্রুত বড় হয় কিন্তু শীতকালে কম বড় হয়। একটি চুলের গড় আয়ু দুই-আট বছর। সুতরাং চুল কিছু না কিছু প্রতিদিন স্বাভাবিকভাবেই ঝরে যায়।
চুলের কিউটিকন নষ্ট হয়ে গিয়ে চুলের কটেক্সের আঁশগুলো খুলে গেলে চুলের আগ ফেটে যায়। এতে চুল শুষ্ক ও ভঙ্গুর হয়ে ওঠে। মাথার তালুর সঠিক মাত্রায় রক্ত সঞ্চালনের জন্য চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ দরকার। নানারকম শারীরিক অসুস্থতা ছাড়াও সঠিক পরিচর্যার অভাবে চুলের স্বাস্থ্যও খারাপ হতে পারে। আপনার সুস্থতা প্রকাশ পায় আপনার শারীরিক স্বাস্থ্য এবং চুলের স্বাস্থ্যের ভেতর দিয়ে। তাই সঠিক ডায়েট, প্রচুর ফলমূল, সঠিক পরিমাণে পানি পান করা, পর্যাপ্ত ব্যায়াম ও চিন্তামুক্ত ঘুম প্রয়োজন। এসব নিয়ম মেনে চললে চুলের সমস্যা সমাধান হওয়া উচিত। তবে খুশকি ও অন্যান্য সমস্যা যেমন চুল পড়া ও চুলের ডগা ফেটে যাওয়া রোধ করতে প্রয়োজন চুল ও তালু পরীক্ষা করা ও সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা।
চুলের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা প্রয়োজন। অনেক শারীরিক অসুস্থতার লক্ষণ চুল পড়া। তাই অবহেলা না করে এর সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। চুল খুব হালকা বা টাক হওয়ার আগেই চুল পড়া প্রতিরোধ করুন। সচেতন হোন।
চুল অতিরিক্ত পার্ম করা, অপর্যাপ্ত কন্ডিশনিং কিংবা অতিরিক্ত ব্রাশিংয়ের কারণে চুল ফেটে যেতে পারে। এ ছাড়া নিুমানের চিরুনি বা ব্রাশ ব্যবহার এবং সঠিকভাবে চুল না আঁচড়ানোর জন্যও এই সমস্যায় পড়তে পারেন। এ ছাড়া চুল শুকাতে গিয়েও হেয়ার ড্রায়ারের কারণে চুলের আগা ফাটতে পারে।
খুশকির কারণেও চুল শুষ্ক হয়ে ওঠে এবং চুলের আগা ফেটে যায়। চুলের আগা ফেটে গেলে খুবই অস্বাস্থ্যকর দেখায় এবং চুল বড় হয় না। এ ক্ষেত্রে খুশকির সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারেন। কিছু ব্যক্তিগত কারণ, যেমনহরমোনের তারতম্য, খারাপ স্বাস্থ্য, বিশ্রামের অভাব ইত্যাদির প্রভাবও চুলের ওপর পড়তে পারে। টেনশন, মানসিক যন্ত্রণা, ঘুম না হওয়া বা কম হওয়া ইত্যাদির কারণেও চুলের স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে। এ ছাড়া হেয়ার স্প্রে, জেল, মুজ ইত্যাদির অতি ব্যবহার এবং কৃত্রিম রঙ চুলের ক্ষতি করে।
মাথার তালুর দিকে বা ছেলেদের সামনের দিকে চুল পড়ে ফাঁকা হয়ে গেলে অবহেলা না করে চিকিৎসা করা প্রয়োজন। বর্তমানে টাক চিকিৎসায় নতুন নতুন ওষুধ সংযোজন হয়েছে। টাকের কারণ ও ধরন নির্ণয় করে সাধারণত এসব ওষুধ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। কিছুটা দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা হলেও তা ফলপ্রসূ। সুতরাং চুলপড়া নিয়ে অকারণ দুশ্চিন্তা না করে সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন। নানাবিধ চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট না হয়ে সঠিক বৈজ্ঞানিক চিকিৎসার মাধ্যমে চুল পড়ার চিকিৎসা করলে রোগী সুফল পাবেন।
————————
ডা. ওয়ানাইজা
চেম্বারঃ যুবক মেডিক্যাল সার্ভিসেস , বাড়িঃ ১৬, রোডঃ ২৮ (পুরাতন), ১৫ (নতুন), ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, ঢাকা (শনি, রবি ও বৃহস্পতিবার)।
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ১ জুন ২০০৮
MD SHIFAT HOSSAIN
Amar samner chul pore jasshe ami ki korbo?