ঈদ মানেই আনন্দ। আর এই আনন্দ পূর্ণতা পায় নতুন কাপড়, সাজসজ্জা, দাওয়াত, আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি বা বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়ে। ঈদের দিন সবাই চায় তার নতুন কাপড় ও সাজসজ্জা ফুটিয়ে তুলতে। তাই সকালের কাজ শেষে দুপুরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে আপনার পোশাক ও সাজটি যেন হয় ঈদের আনন্দের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ঈদের দিনের সাজটি হওয়া চাই খুব হালকা ধরনের, যা আপনার আনন্দ ও স্মিগ্ধতা ফুটিয়ে তুলবে। ঈদের সময়টা শরৎকাল হলেও গরমের মাত্রাটা এ সময় বেশি। তাই দাওয়াতে সজীব থাকার জন্য সাজ-পোশাক দুটোই হালকা হওয়া বাঞ্ছনীয়। এজন্য রূপবিশেষজ্ঞ ফারজানা শাকিল দিয়েছেন নানা পরামর্শ। সর্বপ্রথম যেটা মনে রাখতে হবে সেটা হলো, আপনার ত্বক পরিষ্কার রাখা। এর জন্য ঈদের এক বা দুই দিন আগে ফেসিয়াল করে নিন। দুপুরে দাওয়াতের সাজের আগে আপনার মুখ ও গলায় ক্লিনজার মিল্ক বা জেল দিয়ে ভেজা তুলা দিয়ে মুছে নিন। সতেজ থাকতে চাইলে মুখে একটুকরো বরফ ঘষে নেওয়া ভালো। তারপর তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অ্যাস্ট্রিনজেন্ট এবং অন্যান্য ত্বকের জন্য টোনার বা গোলাপজল ব্যবহার করুন। ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে হালকা করে কোনো বেবি পাউডার লাগিয়ে অতিরিক্ত তেল ত্বক থেকে ঝেড়ে ফেলুন।
দিনের সাজে বেইসটা যেমন হবে
যেহেতু গরমের সময়, তাই দিনের সাজে বেইসটা হওয়া চাই খুব হালকা। ভেজা স্পঞ্জ দিয়ে কমপ্যাক্ট পাউডার লাগিয়ে তার ওপর আবার শুকনো পাফ দিয়ে কমপ্যাক্ট পাউডার লাগিয়ে নিতে পারেন।
ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে চাইলে লিকুইড ওয়াটার বেইসড ফাউন্ডেশন কপাল, নাক, গাল ও গলায় লাগিয়ে ভেজা স্পঞ্জ দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। তবে রূপ বিশেষজ্ঞ ফারজানা শাকিলের মতে, ঈদ যেহেতু গরমের মধ্যে পড়ছে, তাই দিনের দাওয়াতে ফাউন্ডেশন না দেওয়াই ভালো।
ত্বকে যদি দাগ থাকে, সে ক্ষেত্রে তিনি বলেন, প্রথমে কনসিলার বা ত্বকের রঙের চেয়ে এক শেড হালকা ফাউন্ডেশন দাগগুলোর ওপর দিয়ে তার ওপর কমপ্যাক্ট পাউডার বা ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, বেসইটা তৈরির সময় আপনার চোখের পাতার ওপরের অংশ, কান ও গলা কখনোই যেন আপনার সাজে উপেক্ষিত না থাকে।
চোখ যেভাবে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে
‘আপনার চোখ আকর্ষণীয় করে তুলতে ব্যবহার করতে পারেন রঙিন কন্ট্যাক্ট লেন্স। বাদামি পেন্সিল বা আইশ্যাডো দিয়ে ভুরুটা সুন্দর করে এঁকে নিন। যেহেতু দিনের সাজ একটু হালকা হবে, তাই আপনার পোশাকের সঙ্গে মানানসই যেকোনো হালকা রঙের আইশ্যাডো দিতে পারেন চোখে। যেমন ব্রোঞ্জ, গোলাপি, লালচে, সোনালি, কাজল দিয়ে পুরো চোখটা এঁকে নিন।
চোখ বড় ও আকর্ষণীয় দেখাতে এক কোট মাশকারা লাগান। চোখের সাজ সম্পন্ন করুন চোখকে হাইলাইট করার মাধ্যমে। কাজল আঙ্গুল দিয়ে হালকা করে ঘষে নিন। কাজল যাতে ছড়িয়ে না যায়, কাজলের ওপর দিতে পারেন হালকা পাউডার বা কালো আইশ্যাডো।’ বললেন ফারজানা শাকিল। চোখ বড় ও আকর্ষণীয় দেখাতে এক কোট মাশকারা লাগান। চোখের সাজ সম্পন্ন করুন চোখকে হাইলাইট করার মাধ্যমে।
ব্লাশনটা যেন ভালোমতো ব্লেন্ড হয়
দিনের সাজে আপনার ব্লাশনটা হওয়া চাই খুব হালকা, শুধু গালে একটা রক্তাভ আভা পড়ানোর জন্য। আপনি যদি ফর্সা হয়ে থাকেন, তবে হালকা গোলাপি বা পিচ এবং আপনার বর্ণ যদি একটু গাঢ় হয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে ব্রোঞ্জ, বাদামি, কমলা বা একটু গাঢ় গোলাপি রং ব্যবহার করতে পারেন। ব্লাশনের বদলে গোলাপি, পিচ বা ব্রোঞ্জ শিমার পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। তবে যেটাই ব্যবহার করুন না কেন, ব্লাশন যেন আপনার সাজের সঙ্গে মিশে যায়। ব্লাশন দেওয়ার সময় খেয়াল রাখবেন, যেন তা বেশি গাড় হয়ে পুুরো মুখে ছড়িয়ে না যায়। আপনার গালের হাড়ের ওপর ব্রাশ দিয়ে ব্লাশ অন লাগাবেন।
লিপস্টিক যেন হয় হালকা
আপনার হালকা সাজের সঙ্গে লিপস্টিকও যেন হালকা হয়। গোলাপি, মভ, পিচ ও বাদামি রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করে ওপরে গ্লস লাগাতে পারেন। অথবা ঠোঁটে শুধু গোলাপি, লালচে বা চকলেট রঙের লিপ গ্লস লাগাতে পারেন।
চুল যেন থাকে পরিষ্কার ও ঝরঝরে
চুল আপনার সাজের একটি বড় অংশ। ঈদের আগের দিন অবশ্যই চুলে শ্যাম্পু কন্ডিশনিং করে রাখবেন। চুল ঝরঝরে সজীব রাখতে কোনো হেয়ার ট্রিটমেন্টও নিতে পারেন। দাওয়াতে যেতে চুল যদি বড় হয়, তবে হাতখোঁপা বা লোশন করে ফুল দিতে পারেন। মাঝারি ও ছোট চুল ব্লো ড্রাই বা আয়রন করে নিতে পারেন। আয়রন বা কার্লিং আয়রন দিয়ে কার্লি লুক দিতে পারেন। অথবা সামনের অংশের চুল হালকা পাফ করে ফুলিয়ে পেছনে ক্লিপ বেঁধে বাকি চুল খোলা রাখতে পারেন।
হাত-পায়ের দিকে নজর দিতে ভুলবেন না
আপনার ঈদের দিনের সাজসজ্জায় আপনার হাত-পা যেন বাদ না পড়ে। ঈদের আগেই ম্যানিকিউর ও প্যাডিকিউর করে সুন্দরভাবে নখ ফাইলিং করে রাখুন। মেহেদি ঈদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সুন্দর ডিজাইনে মেহেদি লাগিয়ে নিন ঈদের আগেই। নখে দিতে পারেন নেইল পলিশ অথবা আপনার সাজে ভিন্নতা আনতে করতে পারেন আকর্ষণীয় নেইল আর্ট।
দিনের পোশাকটা একটু হালকা ধরনের হওয়াই ভালো
গরমের ফ্যাশনে এখন লেবু, হলুদ, সবুজ, নীল, ফিরোজা, গোলাপি, মভ রংই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। যেহেতু দিনের দাওয়াত, তাই শাড়ির ক্ষেত্রে জামদানি বা তাঁত এবং কামিজের ক্ষেত্রে সুতির ওপর ব্লক এমব্রয়ডারি ভালো হবে। শিফনের কাপড়ও গরমে আরামদায়ক হবে।
গয়না নির্বাচন
দিনের হালকা সাজ-পোশাকের সঙ্গে গয়নাটাও হালকা মানানসই। চেইনের সঙ্গে হালকা ধরনের পাথরের পেন্ডেন্ট, সঙ্গে কানে ছোট দুল পরতে পারেন। কানে ছোট দুলের সঙ্গে হালকা ধরনের লম্বা মালা পরতে পারেন। কানের দুলটা যদি একটু ভারী পরেন, তবে গলায় কিছু না পরাই ভালো।
সাজটা পরিপূর্ণ করতে অবশ্যই হালকা ঘ্রাণের সুগন্ধি লাগান। বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যাগে কমপ্যাক্ট পাউডার, টিস্যু পেপার, কাজল, লিপ গ্লস ও ছোট একটি পারফিউম নিতে ভুলবেন না। ছোট একটি আয়নাও রাখতে পারেন। ঈদে সতেজ থাকতে রোজা শেষে অবশ্যই অনেক বেশি করে পানি খেতে ভুলবেন না, তাতে ত্বক আরও উজ্জ্বল থাকবে।
আইরিন খান
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ০১, ২০০৯
Leave a Reply