শ্বেতী নিয়ে ভাবনা এখন আর ততটা নেই। একটা সময় অবশ্য ছিল যখন মানুষ শ্বেতী বা ধবল সমস্যাটাকে অন্য ১০টা রোগের মতো মনে করত। একে অভিশাপ মনে করত। একবার শুরু হলে বুঝি আর শেষ নেই। তাই এর নাম শুনলেই আঁৎকে উঠত। এমনকি শ্বেতী রোগীর সাথে ওঠা-বসা, চলাফেরা, বৈবাহিক বন্ধন থেকে বিরত থাকত। বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের নিরলস সাধনায় অনেকটা নিরাময়যোগ্য ওষুধের আবিষ্কার হয়েছে।
কিভাবে বুঝবেন শ্বেতী হয়েছে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর চর্ম সাদা হয়ে যায়। এতে সর্বপ্রথম সাদা বিন্দুর দাগ পড়ে এবং ধীরে ধীরে অধিক স্থানজুড়ে সাদা হয়ে পড়ে। স্কিনের মেলানিন তথা পিগমেন্ট যখন কমে সাদা প্যাচ বা সাদা অংশ তৈরি হয় তখন তাকে শ্বেতী বলে। ঠোঁট, মুখমণ্ডল, গ্রিবাদেশ, হাত ও পায়ের স্কিনে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাদা দাগ প্রকাশ পায় এবং দাগগুলো চাকা চাকার মতো হয় বা এবড়ো থেবড়ো হয়ে বাড়তে থাকে। যদি শরীরের সর্বত্র এই রূপ স্কিনের বিকৃতি ঘটে তবে একে অ্যালর্বিনোম বলে।
কারণ: শ্বেতী-সাদা রোগের কারণ নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। কোন মায়াজমের প্রভাবে হয় তাও এক বাক্যে বলা যাচ্ছে না। তবে স্কিনের স্বাভাবিক রঙ সৃষ্টির মূলে রয়েছে (!) মোলানিন জাতীয় পিগমেন্ট এবং তা স্কিনের পিগমেন্ট ন্যায়ারে থাকে, তা নষ্ট হয়ে গেলে এ রোগ হতে পারে। অনেকাংশে বংশগত প্রভাব দেখা যায়। ক্রনিক, পেটের রোগ, লিভারের গোলাযোগ, ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের রোগীদের দেখা যায়, দেহের কোথাও কেটে গেলে, আঘাত পেলে, আঁচড় লাগলে সে অংশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ রোগ হয়ে থাকে। আজকাল বাজারে প্রসাধনী সামগ্রী হিসেবে কতগুলো ক্যামিক্যাল বা সিন্থেটিক বস্তুর স্পর্শ থেকে এলার্জিক প্রতিক্রিয়া ঘটে। চশমার আঁটসাঁট ফ্রেম থেকে নাকের দু’পাশে বা কানের কাছে সাদা হতে দেখা যায়। কপালে পড়ার সিন্থেটিক টিক থেকে শ্বেতীর শুরু চিহ্ন দেখা যায়। এ ছাড়া দীর্ঘ দিন ধরে প্লাস্টিক বা রাবারের জুতা, ঘড়ির বেল্ট প্রভৃতি ব্যবহার থেকে, কারও কারও কব্জিতে বা পায়ে শ্বেতীর চিহ্ন বা অন্যান্য ডিজিজ দেখা যায়।
লক্ষণঃ স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে হতে পারে। তেমন স্বাস্থ্যহানি হয় না, শুধু স্কিনের স্বাভাবিক বর্ণ নষ্ট হয়। জীবননাশের তেমন কোনো আশঙ্কা থাকে না, মানসিক কষ্টটা বর্তমান থাকে। রোদ ও আগুনের তাপ সহ্য করতে পারে না। প্রথমে ছোট ছোট সাদা দাগ দেখা যায়। কিছু দিনের মধ্যেই দাগগুলো মিলে বৃহদাকার ধারণ করে। যে স্থান আক্রান্ত হয় সে স্থানের লোম ঠিকই থাকে। কিন্তু সাদা হয়ে যায়। ঠোঁট, চোখের পাতা, নাকের ডগা, যৌনাঙ্গ এবং মিডিকাস যেমন, ব্রেনেও শ্বেতী দেখা যায়। মায়ের গর্ভ থেকেও গোটা শিশুটি ধবল হতে দেখা যায়।
চিকিৎসাঃ প্রাথমিক পর্যায় হলে হোমিওপ্যাথিতে এর সফল চিকিৎসা আছে। রোগের বয়স দীর্ঘ বা ক্রনিক হলে দীর্ঘ দিন ওষুধ সেবন করতে হয়। হোমিও মতানুসারে শ্বেতী একদৈশিক/ওয়ান সাইডেড ডিজিজ। তাই অত্যন্ত কম লক্ষণ। সিমপটম নিয়ে ঋতু প্রকৃতি ভালোভাবে যেনে মায়াজমেটিক মেডিসিন দিয়ে তীক্ষ্নতার সাথে চিকিৎসা দিতে হয়। এতে ইনশাল্লাহ বহু রোগী সহজে আরোগ্য হয়ে থাকেন। আর মনে রাখবেন একজন ভালো চিকিৎসক আপনার জন্য একটি সঠিক মেডিসিন নির্বাচন করবেন। নিম্নলিখিত মেডিসিনগুলো শ্বেতী রোগে পরীক্ষিত আরোগ্য দান করে আসছে লক্ষাণানুসারে-
সোডিনাম, রেডিয়াম ব্রোমাইড, সিফিলিনাম, সালফার আইড, আর্সেনিক সালফ ফ্লেবাম, পাইপার মিথিটিকাম, নেট্রাম কার্ব, নাইট্রিক এসিড, চেলডোনিয়াম, ইত্যাদি মেডিসিন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেবন করা যায় এবং ওয়েল বুচি, বাবাচি বাহ্যিক প্রয়োগে হোমিওপ্যাথিতে সম্পূর্ণ আরগ্য হয়ে থাকে। চিকিৎসক ও রোগী দু’জনকে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হয়।
করণীয় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দোষ থাকলে দূর করতে হবে। দুধ, ছানা, মাখন, স্নেহজাতীয়, ফলের রস ও অন্যান্য পুষ্টির খাদ্য হিতকর। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা ভালো।
নিষেধঃ ধূমপান, এলকোহল সেবন, উগ্রমশলাযুক্ত খাবার বর্জনীয়। কেউ কেউ বলে থাকেন- সাদাজাতীয় খাবার খাবেন না। যেমন- দুধ, ডিম, ছানা ইত্যাদি, তা সম্পূর্ণ কুসংস্কার।
———————
ডা. হাসিনা বেগম
লেখকঃ প্রভাষক, ময়মনসিংহ হোমিওপ্যাথিক ডিগ্রি কলেজ ও হাসপাতাল, ময়মনসিংহ
দৈনিক নয়া দিগন্ত, ১ জুন ২০০৮
সোহাগ
আমি গত ২বছর ধরে এই রোগে ভুগছি । আমি একাধিক বার চিকিত্সা নিয়েছি । কিন্তু কোন উপকার হচ্ছে না । কোথাও কেটে গেলে ছিলে গেলে সাদা হয়ে যায় আমি কি ধরনের চিকিৎসা করতে পারি
যদি বাংলাদেশের সবচেয়ে ভাল চর্ম ডক্তারদের নাম দিতেন আর কিভাবে যোগাযোগ করতে পারি ?
উল্লেখ্য : আমার বংশে এই রোগ কারও নাই
আমার বয়স-25
হাতে চার পাচ ফোটা আছে, মাজায় একটা আছে, আর ঘারে একটাও 1/2 ইন্চির বেশিনা। আমি আর্সেনিক সালফ ফ্লেবাম, ওয়েল বুচি, ব্যাবহার করছি 1 বছর । তার পরও কোথাও কেটে গেলে হয়।
Bangla Health
আগের মন্তব্যে উত্তর দেয়া হয়েছে।
JIAUDDIN SK
Please help me