বন্ধুত্ব মানেই স্বার্থের অনেক ঊর্ধ্বে নির্ভরশীলতা, বিশ্বস্ততা, পারস্পরিক সমঝোতা আর নিখাদ ভালোবাসার এক বিশেষ সম্পর্ক। আর বন্ধু সে-ই, যে আজীবন সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে এই বিশেষ সম্পর্কে জড়িয়ে থাকে। এসব কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। কিন্তু সেই বন্ধুত্বটা যদি মা-মেয়ের মধ্যে হয়, তবে তা পায় এক নতুন মাত্রা। এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে তাদের ছোট ছোট দুঃখকথা, সুখ্নৃতি, মান-অভিমান।
মানুষের জীবনে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেকোনো সময়ই ঘটতে পারে। সেই ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যেতে পারে জীবন। তখন তার পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় আশ্রয় মা। যদি তিনি বন্ধু হিসেবে পাশে দাঁড়ান, নিজের মেয়েটিকে বুকে টেনে নেন, তাহলে তার জীবনে অন্য কিছুর প্রয়োজন পড়ে না। তেমনি মায়েরও কোনো সমস্যা এসে ভিড়লে মেয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে তা সহজেই সমাধান হবে। তারাই তাদের অনুপ্রেরণা। পথচলার সঙ্গী। এবারের নারীমঞ্চে এমন কয়েকজন মা-মেয়ের গল্প জেনে আসি।
দুঃখ করো জয়
মা-বাবা-ভাই-এ নিয়ে ছোট্ট সুখী পরিবার শ্রাবণীর (ছদ্মনাম)। এ পরিবারে হঠাৎ এক ঝড় বয়ে যায়। শ্রাবণীর মায়ের অজান্তে ওর বাবা আরেকটা বিয়ে করেন। ওর মা তা মেনে নিতে পারেন না। ভেঙে যায় পরিবারটি। নেমে আসে অন্ধকার। শ্রাবণীরা মায়ের সঙ্গেই থাকতে শুরু করে। শুরু হয় নতুন সংগ্রাম। মা-মেয়ে সংসারের হাল ধরে। মায়ের সবচেয়ে ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে শ্রাবণী। নিজের কষ্ট আড়াল করে মাকে মানসিক শক্তি জোগায়। সাহস দেয়। কী করলে মায়ের ভালো লাগবে, তা সব সময় ভাবে। মা কখনো যেন একাকিত্বে না ভোগেন, সে জন্য সবটুকু সময় শ্রাবণী তাঁকেই দেয়। শ্রাবণীর মাও একই রকম ভাবেন। তিনি বলেন, ‘জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময়ে আমার মেয়েটি সাহস জুগিয়েছে। যেকোনো সমস্যায় তার সঙ্গে আলোচনা করেছি। সহজেই সমাধান বের করে ফেলেছি। মেয়েই আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। সব সময় চেয়েছি মেয়েকে যেন বন্ধুর মতো করে বড় করতে পারি। কতটুকু পেরেছি, তা আজ বুঝতে পারছি। আমাকে কোনো কষ্টই বুঝতে দেয় না। এমন বন্ধু কি সহজে মেলে? দুজন দুজনকে প্রতিটি কাজে অনুপ্রেরণা দিই। সবকিছুই ওর সঙ্গে শেয়ার করি। এমন বন্ধু পেলে যেকোনো দুঃখই সহজে জয় করা যায়।’
দূরে থেকেও কাছে
প্রায় তিন মাস। বিশেষ কাজে দেশের বাইরে ছিল এষার মা। প্রথমবারের মতো এষা (ছদ্মনাম) মায়ের শূন্যতা অনুভব করে। কেননা সারাক্ষণ মায়ের সঙ্গে খুনসুটি লেগেই থাকে। মা চাকরিজীবী হওয়ায় কখনোই তাঁর সঙ্গে নিছক গল্প করা হয়ে ওঠে না। তবু তারা দুজন ভালো বন্ধু। সবকিছুই তারা খোলাখুলি আলোচনা করে। এষার যেকোনো সিদ্ধান্ত কিংবা বড় কোনো সমস্যায় পড়লে মাকে লাগবেই। তিনি ওকে বড় সমস্যা থেকে সমাধানের পথ দেখিয়ে দেন। মাকেও সে অনেক ভালো বোঝে। মা কী চান, তা যেন মুখ দেখেই বলে দিতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া এষার মনে হয়, দিনে দিনে মায়ের সঙ্গে সখ্য যেন বাড়ছে। বরাবরই বন্ধুপ্রিয় এষার অনেক বন্ধুর ভিড়ে সবচেয়ে কাছের বন্ধুটিও অনেক সময় অচেনা হয়ে গেছে। বন্ধুর কাছ থেকে কষ্টও পেয়েছে।কিন্তু এই বন্ধু শুধুই ভালোবাসা দিয়ে যায়। সেবার বিদেশে গিয়ে কত আনন্দের মধ্যে এষার মা বিষণ্ন হয়ে যেতেন। মেয়েটাকে খুব মনে পড়ত। ওকে ছাড়া তিনিও একাকিত্বে ভোগেন। বুঝতে পারেন, মেয়েটি তাঁর সবচেয়ে কাছের মানুষ। না-বলা কত কথা জমে যায়! কথার ফুলঝুরি সাজিয়ে রাখেন। দূরে থেকেও মনে হয় মেয়েটি কত কাছে! আর এ অনুভূতির অপর নামই তো বন্ধুত্ব।
জীবনছবির ক্যানভাসে
মায়ের আগ্রহেই প্রথম রং-তুলি হাতে নেওয়া। তুলির প্রতিটি আঁচড়ে যেন ভালোবাসার রং ফুটে ওঠে। মা-মেয়ের অন্তরালের কথায় যেন ক্যানভাস ভরে যায়। সুপ্তি (ছদ্মনাম) আর ওর মায়ের সম্পর্কটা একেবারেই অন্য রকম। পড়াশোনার জন্য স্কুলজীবন থেকেই হোস্টেলে থাকতে হয়েছে। তবু মা-মেয়ের মধ্যে কোনো দূরত্ব তৈরি হয়নি।
বাবা অসুস্থ হওয়ার পর থেকে সুপ্তিই মায়ের কাছের মানুষ হয়ে গেছে। হাসি-কান্নায় মায়ের সঙ্গী যেন। মেয়েকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারেন না মা। মেয়ে হোস্টেলে ছিল, তিনি চাকরি করেছেন, যে কারণে কখনোই পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেননি। কিন্তু তাদের বন্ধুত্ব দেখে তা বোঝার উপায় নেই। দুজন দুজনের কাছে স্বচ্ছ, সহজেই পড়ে ফেলা যায়। সুপ্তি বলে, ‘মা একদমই অন্য রকম। সব কথাই মাকে বলা যায়। মেনে নিতে পারেন। মেনে না নিতে পারলে রাগ করেন। পরক্ষণেই বুঝিয়ে বলেন। মা পাশে আছে বলেই কোনো কাজে বাধা আসে না। কাজের প্রয়োজনে নানা জায়গায় যেতে হয়। কখনো সমস্যা হয় না। মা বিশ্বাস করেন, আমিও তা রাখার চেষ্টা করি। অন্য বন্ধুদের মায়েরা ওদের অনেক কাজেই বাধা দেন। ওরা ওদের মাকে মিথ্যা বলে। মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে। আমার তো এসব করতে হয় না। মা সব সময় বলেন, বড় হয়েছ, যা ভালো মনে কর, সেটাই কোরো। যুক্তিতর্ক যে একেবারেই বাধে না তা নয়। দুজনের মতামতকেই প্রাধান্য দিই। কখনো মা হেরে যান, কখনো আমি। এভাবেই সম্পর্কটা আরও গভীর হয়। আমার ক্যানভাসে এই জীবনের কথা, বন্ধুত্বের কথাই যেন আঁকা হয়ে যায়।’
ধন্য হলাম তোমার পরশে
ঝাপসা চোখে মৌরি (ছদ্মনাম) ফিরে যায় দুই বছর আগে। মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে এসেছে। পড়াশোনার প্রচণ্ড চাপ। এর মধ্যেও মিথুনের কথা মনে পড়ছে। ছোট ছোট কারণে কয়েক দিন ধরে ঝগড়া করছে। মৌরি কিছুই বুঝতে পারছে না। দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ওদের। পরীক্ষার মধ্যেই মৌরি জানতে পারল, মিথুন এখন আর ওকে ভালোবাসে না। অন্য একজনের সঙ্গে নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে। এসব শুনে মৌরির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। কী করবে বুঝে উঠতে পারে না। তখনই মনে পড়ে তাঁর কথা। একমাত্র তিনিই পারবেন তাকে সাহস দিতে, মনকে শক্ত করায় সাহায্য করতে। তিনি হলেন সবচেয়ে ভালো বন্ধু, তাঁর মা। মাকে শুধু এতটুকু বলল, ‘মা, আমি খুব কষ্টে আছি। তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসো। তা না হলে পরীক্ষা দিতে পারব না।’ মেয়ের ফোন পেয়েই মা চলে এলেন। এসে কিছুই জিজ্ঞেস করলেন না। স্মেহের পরশে মৌরিকে জড়িয়ে রাখলেন। পরীক্ষা শেষ হলো। সব কথা মাকে খুলে বলার পরও তাঁর কোনো ভ্রূক্ষেপ হলো না। যেন মেয়ের কথা সব আগেই জানতেন। সেই কষ্টের সময়ে মা সব সময় পাশে থাকতেন। মৌরিকে একা থাকতেই দিতেন না। মেয়ের পছন্দের সব কাজ করে খুশি রাখার চেষ্টা করতেন। সময় গড়িয়ে যায়। মৌরির কষ্টও ধীরে ধীরে কমে আসে। মৌরি ভাবে, মা না থাকলে কাকে বলত এসব কথা। কে বুঝত ওকে। ভালোবেসে প্রতারিত হওয়ার কষ্টে মরে যেতে ইচ্ছে করত। শুধু মায়ের জন্য পারেনি। এত মায়ার বাঁধন ছিঁড়ে কোথাও যাওয়া যায় না। মায়ের এই আদরমাখা পরশে ওর জীবন ধন্য। দুই চোখ গড়িয়ে পানি পড়ে। তখনই মাথায় মমতাময়ীর হাতের স্পর্শ বুঝতে পারে। যেন বলছেন, ‘তোর কোনো ভয় নেই, তুই পারবি। আমি তো আছি।’
তাঁদের বন্ধুতা
দীর্ঘদিন ধরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছেন দিলরুবা হায়দার। দুই মেয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও যেন বন্ধুর মতো। বললেন, ‘দুই মেয়ের সঙ্গে বোঝাপড়া ভালো।ওরা ভুল করলে বকা দিই। ওরা আমার সঙ্গে রাগ না করে অনুতপ্ত হয়। আমি যদি বেশিরাগ করি, পরক্ষণে গিয়ে এর কারণ ব্যাখ্যা করি। ওরা বোঝে। মেয়েদের বন্ধুর মতো করেই বড় করার চেষ্টা করেছি।’ তাঁর বড় মেয়ে রেহনুমা বলেন, ‘যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মাকে জিজ্ঞেস করি। যে ব্যাপারে কিছু বলি না, তাতেই ভুলহয়। সব সময় মা যা বলেন তা-ই ঠিক হয়। মা আমাদের দুই বোনের কাছেই যেন বন্ধু।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের মেহতাব খানম ও তাঁর মেয়ে নাদিয়ার সম্পর্ক একেবারেই অন্য রকম। দুজনই অনেক ব্যস্ত। তা সত্ত্বেও তাঁরাই তাঁদের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। নাদিয়া বলেন, ‘মায়ের সঙ্গে বোঝাপড়া অনেক ভালো। সবকিছুই বলা যায়। সমস্যায় পড়লে মায়ের সঙ্গেই সবার আগে আলোচনা করি। আমার অনেক বন্ধু আছে, যারা বিপদে পড়লেও মাকে বলতে পারে না। মা ও সন্তান দুজনেরই এমন সম্পর্ক তৈরির প্রতি আগ্রহী হতে হয়। তবেই না আমাদের মতো বন্ধুত্ব হবে। ভুল করলে মা বকা দেন। আবার মায়ের রাগ কমে গেলে কী করতে হবে তাও বলেন। রাতের খাবারের পর সারা দিনের জমে থাকা গল্প করি। এমন মা আছে বলেই জীবনটা এত সুন্দর মনে হয়।’
বিশেষজ্ঞ ও মা-দুই হিসেবেই মেহতাব খানম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই সন্তানের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করা উচিত, যাতে তারা মাকে বিশ্বাস করতে পারে। সন্তানকেও তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত হতে হবে। নাদিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কটা এভাবেই গড়ে উঠেছে। আমরা দুজনই দুজনের কাছে খুব স্বচ্ছ। ভালো বন্ধু হতে হলে যে সন্তানের সব গোপন কথা জানতে হবে, এমনটি নয়। বেশি প্রত্যাশা করলে সম্পর্কটা আর বন্ধুত্বের থাকে না। এমনিতেই ওরা নানা চাপে থাকে। সে বিষয়টি বুঝতে হবে। নাদিয়াকেও এভাবে বড় করেছি। ভালো-মন্দ বুঝে চলতে শিখিয়েছি। ও যখন দেশের বাইরে থাকত, তখন আরও বেশি মনে হতো ও আমার জীবনে কত মূল্যবান। এ সম্পর্কটা নির্ভরশীলতার হলেও অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা ভালো না। দেখা যায়, মেয়ে নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে শেখে না। আবার অনেক মা বিয়ের পরও মেয়ের জীবনে প্রভাব রাখতে চান। তার ভালো করতে গিয়ে সংসারে অশান্তিই যেন ডেকে আনেন। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে এখন উপলব্ধি করি, অনেক আগে থেকে যদি এখনকার মতো এত কিছু জানতাম, তবে নাদিয়ার জন্য আরও ভালো হতো। অনেক ভালো মা হতে পারতাম; পারতাম ভালো বন্ধু হতে।’
তৌহিদা শিরোপা
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ১৯, ২০০৯
Onamika Hamid
৪০ বছর ধরে মাকে খুঁজছে কামরুন নাহার :
আজ থেকে ৪০ বছর আগে ৫/ ৬
বছরের ছোট্ট ফুটফুটে কামরুন নাহার মার সাথে যাচ্ছিল ভারতে
নানাবাড়িতে বেড়াতে ।
ভুল করে সে চুয়াডাঙা রেলস্টেশনে নেমে
পড়ে অথবা একাই চুয়াডাঙাগামী ট্রেনে উঠে পড়েছিল । তার গায়ের রং ফর্সা , পায়ে ছিল নুপূর , হাতে রুপার বালা ।
ওর মার নাম সাহেরা বিবি , বাবার নাম
লবাব আলি বিশ্বাস ।
দয়া করে এটি ফেসবুক, টুইটারে , ইমেলে সবার সাথে শেয়ার করুন । হয়তো কোন দু:খী মা- বাবা ফিরে পাবেন তাদের হারানো
সাত রাজার ধন এক মাণিক । আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন ।
> যোগাযোগ : ড: কাজী আবরার ( ০১৭৩৬৫৬৯৫৩৩ ,০১৬৭৬১২২৩৭৭) ।
> ইমেল : [email protected]
> > May Allah bless us in this life & the hereafter , Ameen
> >