মেয়েটির নাম সোনিয়া (ছদ্মনাম)। চার ভাইয়ের একমাত্র বোন। সবার ছোট। পরিবারের মধ্যমণি ছিল সে। অনেক আদর-যত্নে মানুষ। তাই কোনো ইচ্ছাই অপূর্ণ থাকত না তার। কিন্তু সেই মেয়েটিই এখন পরিবারের সবার দুঃখের কারণ। পাঠক হয়তো ভাবছেন, কেন? ঘটনার সূত্রপাত মোবাইল ফোন থেকে। দেশের স্বনামধন্য একটি মোবাইল ফোন প্রতিষ্ঠান তখন প্রথম তাদের রাত্রিকালীন কলরেট ফ্রি করে দিয়েছে। সোনিয়ার হাতে তখন সদ্য পাওয়া নতুন সেট। অথচ কথা বলার মতো কোনো বন্ধু নেই। একদিন হঠাৎ খেয়ালের বশে নিজের নম্বরের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ একটি নম্বরে মিস্ড কল দিয়ে বসে সোনিয়া। সঙ্গে সঙ্গেই কল আসে ওই নম্বর থেকে। তারপর কিছুক্ষণ চলে মিস্ড কল মিস্ড কল খেলা। তিন দিন পর অপরিচিত একটা নম্বর থেকে গভীর রাতে কল আসে। কথা বলে বোঝা যায়, সোনিয়া যাকে মিস্ড কল দিয়েছিল এটা তার নতুন নম্বর। কথা বলায় চটপটে, ্নার্ট ছেলেটি বলে, সোনিয়া চাইলে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারে। সে বন্ধুত্বে আগ্রহী। এভাবেই পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব, ভালো লাগা, ভালোবাসা। ভালোবাসার টানে একদিন সোনিয়া পালিয়ে গিয়ে ছেলেটিকে বিয়েও করে ফেলে। অভিভাবক তো হতবাক! সোনিয়ার চোখে ছিল রঙিন স্বপ্ন। কিন্তু মাত্র ছয় মাস কাটে। এর পরই সব আনন্দ ফিকে হয়ে আসতে থাকে। সোনিয়ার স্বামী সবকিছুতেই সন্দেহ করে, মেজাজ দেখানো ছাড়া এখন কথাই বলে না ভালোভাবে। শ্বশুর-শাশুড়ি, ননদ-দেবর কারও কাছেই তার কোনো মর্যাদা নেই। কথার খোঁচায় সোনিয়ার হৃদয়টাকে রক্তাক্ত করাই যেন তাদের কাজ। সোনিয়ার স্বামী বলে মানিয়ে চলতে। সোনিয়ার হাতে এখন ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নেই, স্বামীর সামনে তার মোবাইল ফোন থেকেই কথা বলতে হয়।
ইদানীং সোনিয়ার বুকে মা-বাবাকে কষ্ট দেওয়ার যন্ত্রণা খুব বেশি বাজে। কিছুতেই মেলাতে পারে না এত বড় একটা ভুল সে কীভাবে করেছিল! একাকী দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সোনিয়া, কিন্তু সেটা কাউকে স্পর্শ করে বলে তার মনে হয় না।
রোজিনা
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, আনন্দমোহন কলেজ, ময়মনসিংহ।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ১৯, ২০০৯
Leave a Reply