সমস্যাঃ আমার বয়স ১৯ বছর। একটা মেয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল। মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে পরিচয় হয়। কিন্তু আমাদের সম্পর্কটা বেশি দিন টেকেনি। কারণ, ও আমাকে এবং আমার বন্ধুদের নিয়ে বিভিন্ন অপমানজনক কথা বলত। অথচ আমার বন্ধুরা অনেক ভালো ও নিরীহ। সে একটু অহঙ্কারী স্বভাবের মেয়ে এবং খুব জেদি। আমি সব সহ্য করতাম। কিন্তু একদিন রাগের মাথায় তাকে যাচ্ছেতাই বলে ফেলি। এর পর থেকে ও আমার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগই করেনি। সে কি এসব দুষ্টুমি করে বলত, নাকি সিরিয়াসলি বলত জানি না। তবে ওকে ছাড়া আমি বাঁচব না। প্লিজ, ওকে ভুলে যেতে বলবেন না। আমি অন্য সমাধান চাই।
আসিফ
কক্সবাজার।
পরামর্শঃ কেউ কাউকে ইচ্ছে করলেই ভুলে যেতে পারে না, আর আমি তোমাকে সেটি করতে বলব না। তুমি বয়ঃসন্ধিতে রয়েছ বলে এখন খুব বেশি আবেগ কাজ করছে আর যুক্তির জায়গাটি কম গুরুত্ব পাচ্ছে। মেয়েটির কত বয়স, তা চিঠিতে উল্লেখ করনি। যদি সে তোমার কাছাকাছি বয়সের হয়ে থাকে, তাহলে তারও আবেগপ্রবণ হয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক। যেকোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে এবং বিশেষ করে প্রেমের সম্পর্কে পরস্পরের মতামত, পছন্দ-অপছন্দ, ভালো লাগা-মন্দ লাগা বিষয়গুলো মাথায় রেখে সেগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো অত্যন্ত জরুরি। তোমার বন্ধুরা তোমার কাছে অবশ্যই অনেক প্রিয়। কাজেই মেয়েটি যদি তাদের সম্পর্কে অসম্মানজনক কিছু বলে, তাতে তোমার বিরক্ত হওয়া খুব স্বাভাবিক। তবে তোমার দিক থেকে যে ভুলটি হয়ে গেছে তা হচ্ছে, কটু কথাগুলো নীরবে সহ্য করা। একেবারে প্রথম দিকেই তুমি যদি মাথা ঠান্ডা রেখে ওকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিতে পারতে ওর কাছে তোমার বন্ধুরা গ্রহণযোগ্য না হলেও তুমি ওদের ভালোবাস তাহলে খুব ভালো হতো। বলতে পারতে, ও যেন কখনো তোমার বন্ধুদের সম্পর্কে কটূক্তি না করে। কারণ, এতে তুমি বিরক্ত হও। এভাবে বলতে পারলে দুজনের অধিকারকেই স্বীকৃতি দেওয়া সম্ভব হয়। তোমার অনুভূতিটি আগেই সুস্থভাবে প্রকাশ করতে পারলে পরবর্তী সময়ে এভাবে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটত না। এ ধরনের বহিঃপ্রকাশ প্রতিনিয়ত আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত কছে। এতে আমরা বিষণ্ন বোধ করি, অপরাধবোধে ভুগি এবং কখনো নিজের ওপর রাগও করি। এর কোনোটিই কিন্তু আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। বর্তমানের এই পরিস্থিতি থেকে তুমি যদি শিক্ষা নাও, তাহলে খুব ভালো হয়।
সমস্যাঃ আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি এবং সেও আমাকে খুব ভালোবাসে। আমাদের ভালোবাসা খুবই গভীর। মেয়েটার অর্থনৈতিক অবস্থা আমাদের চেয়ে খারাপ। তাই হয়তো আমার মা-বাবা আমাদের ভালোবাসাকে মেনে নেবেন না। একদিকে আমাদের ভালোবাসার কারণে লেখাপড়ার সমস্যা হচ্ছে, অন্যদিকে আমাদের ভালোবাসা খুবই গভীর। একজন অন্যজনকে খুব ভালোবাসি এবং হয়তো একজন অন্যজন ছাড়া বাঁচতে পারব না। আমি উচ্চমাধ্যমিক পড়ি এবং মেয়েটা অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। এখন আমার সমস্যা হলো, এই মুহূর্তে আমি কী করব? ভালোবাসা কি বাদ দিয়ে দেব? যদি বাদ দিতে হয় তাহলে কীভাবে?
মো· বিকুল হোসেন
পরামর্শঃ তোমরা দুজনই এখন অপরিণত বয়সে রয়েছ বলে জীবনের বাস্তবতাগুলো মেনে নিতে অসুবিধা হচ্ছে। শুধু ভালোবাসা দিয়ে এ ধরনের পরিস্থিতিগুলোকে সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। পৃথিবীর সব মা-বাবাই প্রত্যাশা করেন তাঁদের সন্তানদের জীবনসঙ্গী নিজের সন্তানের সত্যিকার উপযুক্ত হবে। তাঁরা সে প্রত্যাশা করতেই পারেন। তোমার যেহেতু প্রতিষ্ঠিত হতে এখনো অনেক দেরি, তাই তোমাকে কিন্তু প্রচুর ধৈর্য রেখে অপেক্ষা করতে হবে মেয়েটিকে সামাজিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য। তুমি নিজেকে অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম করে তোলার পর যদি তোমাদের পরস্পরের প্রতি একই অনুভূতি থাকে, তাহলে মা-বাবাকে রাজি করানোর সম্পূর্ণ দায়িত্ব তোমাকেই নিতে হবে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক উপার্জনক্ষম সন্তানের অনুরোধ মা-বাবার কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হয়। ভালোবাসার কারণে লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে কেন বুঝতে পারলাম না। এ বয়সে কাউকে ভালো লাগা এবং রোমান্টিকতায় ভোগা অত্যন্ত স্বাভাবিক।
তাই বলে লেখাপড়ায় অমনোযোগী হলে কিন্তু তোমাকে এর জন্য অনেক মূল্য দিতে হবে। ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন দুশ্চিন্তা হবে তখন ভাববে, ‘ভবিষ্যতে কী হবে, আমরা কেউ জানি না। তাই আমাকে বর্তমানের প্রতি যত্নবান হতে হবে এবং যতটুকু সম্ভব শ্রম দিয়ে নিজেকে আগে উপার্জনক্ষম করে তুলতে হবে।’ মেয়েটিকেও উৎসাহ দেবে লেখাপড়ায় মনোযোগী হতে, যাতে সেও একদিন তার সামাজিক অবস্থান ও পদমর্যাদা নিয়ে গর্ববোধ করতে পারে।
শুধু ভালো লাগা নয়, সেই সঙ্গে শ্রদ্ধা আর বিশ্বাস নিয়ে পরস্পরের মঙ্গল কামনা করে বর্তমান সময়কে আস্থার সঙ্গে মোকাবিলা করো। আমার শুভ কামনা রইল।
অধ্যাপক ড· মেহতাব খানম
মনোবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ১৫, ২০০৯
maruf
thanks 2 store