শিশুরা বিনোদনপ্রিয়। আর তাদের এই বর্ণমালা শেখাটা যদি হয় বিনোদনের মাধ্যমে, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। বর্ণের খেলা খেলতে খেলতেই শিশু শিখে যাবে বর্ণমালা, অক্ষর গণনা। আমরা ধীরে ধীরে বিদেশি ভাষার দিকে বেশ ঝুঁকে পড়ছি। শিশুকে ছোট্টবেলা থেকেই তা শেখানো হচ্ছে। অথচ অনেকেই নিজের ভাষা বাংলা বর্ণমালাগুলো শুদ্ধভাবে ও সারিবদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে পারে না। এর ফলে শিশুদের মধ্যে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের এখনই কাজ করা দরকার। দরকার বিনোদনের মাধ্যমে শিশুদের বাংলা ভাষাটা সহজবোধ্যভাবে শিক্ষা দেওয়ার।
ঠিক এমনটিই ভেবেছেন শরীফ হাসান খন্দকার। দীর্ঘদিন প্রবাসে জীবনযাপন করে তিনি দেখেছেন শুদ্ধভাবে ভাষা না জানার ফলে দেশের বাইরে গেলে কেমন করুণ অবস্থা হয়। এ ভাবনা থেকেই তিনি খুঁজে পান কীভাবে শিশুদের ছোট্টবেলা থেকেই ভাষা, বর্ণমালাকে বিনোদনের মাধ্যমে শিশুদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়। প্রথমেই তিনি নমুনায়ন পদ্ধতিতে বাচ্চাদের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন কীভাবে তারা শিখতে চায়। তারপর ধীরে ধীরে তাদের মনের মতো করে তৈরি করেছেন কয়েকটি শিক্ষা উপকরণ। সব উপকরণই প্রায় ধাঁধার মতো। মজার এই সমাধানের খেলার মাধ্যমে শিশুরা একই সঙ্গে শিখতে পারবে ১০টি রঙের এবং আকারের বাংলা নাম। সেই সঙ্গে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গণনা এবং সহজভাবে মেলানোর সমাধান খুঁজে পাবে। এ ছাড়া আছে বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণ দ্রুত শেখার একটি খেলনা। এটিতে বর্ণগুলোকে এলোমেলো করে দেওয়া হয় আর শিশুরা তা সারিবদ্ধভাবে সাজায়। এতে করে কোনটির পর কোন বর্ণ, তা সহজেই শিশুরা বুঝতে পারে। এরপর ০ থেকে ২০ পর্যন্ত সংখ্যার ধারণা আছে আরেকটি উপকরণে। বোর্ডের ওপর প্রতিটি সংখ্যার নিচে রং দিয়ে আবার সেই সংখ্যাটি লেখা আছে। প্রথমে শিশুরা রং দেখে সংখ্যা চিনে নেয়। তারপর ধীরে ধীরে পুরো সংখ্যার ধারণাই তারা আয়ত্ত করতে পারে। এ ছাড়া ছোট্ট শিশুদের কণ্ঠ দিয়ে তৈরি করেছেন একটি সিডি। এই সিডিতে দেশপ্রেম, মানবতা ছাড়াও প্রয়োজনীয় কিছু বিষয় ছড়াগানের মাধ্যমে শিশুরা শিখতে পারবে।
‘ছোট্ট আমরা শিশু’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ হাসান খন্দকার বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের শেখানো হচ্ছে আমরা খুব গরিব। এর ফলে তাদের মনে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তাই আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে শিকড়ের কাজ। আর বাচ্চাদের বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষা দিলে সেই শিকড়ের কাজটি হয়ে যাবে। এত করে শিশুদের অনেক কম দিয়ে অনেক বেশি সুফল পাওয়া যাবে। অনেক স্কুলে এই শিক্ষা উপকরণ আমরা শিশুদের জন্য বিনামূল্যে দিচ্ছি। আমি চাই শিক্ষাটা সর্বজনীন হোক। সব শিশুই সমান অধিকার ভোগ করুক। সবাই শুদ্ধভাবে বাংলা ভাষাটাকে রপ্ত করুক। শিশুদের মেধার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটুক।’
শিশুরা স্বপ্ন দেখে একদিন তারা বড় হবে, অনেক বড়। আর তাদের সে স্বপ্নকেই বাস্তবে রূপ দিতে শরীফ হাসান খন্দকার স্বপ্ন দেখে চলেছেন। তিনি স্বপ্ন দেখছেন একদিন সব পুরোনো নিয়ম ভেঙে বর্ণমালা শেখার নতুন পদ্ধতিও শিকড় বসাবে ছোট্ট শিশুদের মনে।
সুজন সুপান্থ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ১১, ২০০৯
Leave a Reply