সময়টা বর্ষাকাল। তাই এখন প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে নদীপ্রধান এলাকা তো বটেই, বড় বড় শহরেও সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। রাস্তাঘাটে পানি উঠছে, অনেক সময় কোমরপানিও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ জন্য ব্যস্ত শহরে দৈনন্দিন কাজ তো আর থেমে থাকে না। শত জলাবদ্ধতার পরও রাস্তায় বের হতে হয় গাড়ি নিয়ে। আর এ ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েন গাড়িচালকেরা।
বর্ষাকালে রাস্তায় গাড়ির বিভিন্ন সমস্যার নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন ইন্ট্রাকো সিএনজি লিমিটেডের সহকারী প্রকৌশলী শফিকুর রহমান।
রাস্তায় পানির উচ্চতা বেশি হলে অনেক সময় গাড়ির ইঞ্জিনে পানি ঢুকে যায়, এতে এয়ার ক্লিনার দিয়ে ইঞ্জিনের ভেতর পানি ঢুকে পড়ে। যদি এর মাত্রা খুব বেশি হয়, তাহলে ইঞ্জিন আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যাবে। এ অবস্থায় ইঞ্জিন পুরোপুরি বিকল হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। বর্ষাকালে যেহেতু রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে থাকে, তাই চালকেরা কোথায় গর্ত আছে, তা বুঝতে পারেন না। ফলে গাড়ি গর্তে পড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ ছাড়া গাড়ি এ সময় প্রচণ্ড ঝাঁকুনিও খায়। এতে গাড়ির বল জয়েন্ট, ব্রেক, সিভি জয়েন্ট, চক অবজারভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। জলাবদ্ধ স্থানে গাড়ি চালালে গাড়ির ভেতরের বৈদ্যুতিক ডিভাইসগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া গাড়ির পিস্টন, কানেকশন রডও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। রাস্তায় পানি থাকলে গাড়ির ব্রেক ঠিকমতো কাজ করে না। ব্রেকপ্যাড ভিজে গিয়ে সময়মতো ব্রেক কষতে না পেরে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। জলাবদ্ধ এলাকায় গাড়ি দাঁড় করালে তা স্টার্ট দেওয়ার সময় পুরো ইঞ্জিন শর্ট সার্কিট হয়ে বিকল হতে পারে। আর কাদাপানিতে গাড়ি চালালে এর চাকা ব্লক হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এসব তো গেল বিভিন্ন সমস্যার কথা। এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে জলাবদ্ধ রাস্তা এড়িয়ে বিকল্প রাস্তায় চলাচল করা সবচেয়ে ভালো। এ ক্ষেত্রে আগেই খোঁজ নিয়ে সব রাস্তার অবস্থা জেনে নেওয়া উচিত। বৃষ্টিতে কোন রাস্তায় কেমন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, তা খেয়াল করে চলতে পারলে সুবিধা হবে। গাড়ির চাকা কিছুটা ভিজে গেলে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। তবে কাদাপানি পরিহার করাই উত্তম। রাস্তায় গাড়ি পানি মাড়িয়ে গন্তব্যে ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই ইঞ্জিন ভালোভাবে মুছে পরিষ্কার করতে হবে। গাড়ির ইঞ্জিন সম্পূর্ণ ভিজে গেলে কোনো অবস্থায়ই গাড়ি সার্ভিসিং ছাড়া চালু করা ঠিক হবে না। এতে ইঞ্জিনসহ বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। গাড়ি সম্পর্কে দক্ষ না হয়ে তা ঠিক করতে যাওয়া উচিত নয়। কোনো ধরনের ত্রুটি দেখা দিলে দেরি না করে অবশ্যই সার্ভিসিং কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে হবে। অল্প পানিতে গাড়ি চালালে কোনো সমস্যা হয় না। তবে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে, যেন কোনো অবস্থায়ই গাড়ির ইঞ্জিন পানিতে না ডোবে। তাহলেই বড় ধরনের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকবে আপনার প্রিয় গাড়িটি।
মোছাব্বের রিবন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, আগস্ট ১১, ২০০৯
Leave a Reply