বাঁচতে শেখা মানুষ যখন থেকে এই ধরিত্রীর বুকে ছক কাটতে শেখে ঠিক তখন থেকেই ঘর বাধা শুরু। পাতালের গুহা আর শূন্যে বিটপিতে ঘর বাধার কাহিনী শুরু হলেও এখন তা প্লাস্টিক পেইন্টে মোড়া, সবুজ ঘাসের লনে ঘেরা চার দেয়ালের অফুরান স্বপ্ন। এটাই ঘর। যেখানে মানুষ স্বপ্ন বুনে চলে তার অপরা ভবিষ্যতের। কিন্তু সেই প্রস্তর যুগের সাথে এই প্রযুক্তি যুগের ঘরের আছে একটা সাধারণ মিল। তা হচ্ছে দেয়াল।
পাথরের উপরে পাথর জমিয়ে দেয়ালের জন্ম হলেও এখন কিন্তু এই ৫ ইঞ্চি দেয়ালের ভেতর দিয়েই ছুটে চলে ক্যাবল নেটওয়ার্ক আর টেলিফোনের কপার লাইন। ইটের পরে ইট তাতে ফ্যাশনেবল বাহারি রঙ কিংবা টাইলস, এটাই এখন দেয়ালের চলতি স্টাইল। তবে অনেকেই আবার এই দেয়াল এখন প্লাষ্টার শূন্য রাখতেও পছন্দ করেন। বাড়ির বাইরের দিকে যে দেয়ালটি থাকে সেটি মুলত ঘরের মুল দেয়াল যা ঘরকে একটা বেসিক আকৃতি দেয়। আর ঘরের ভেতরে যে দেয়ালগুলো থাকে সেগুলো মুলত ঘরকে সুযোগ বুঝে বিভিন্ন ঘরে ভাগ করার জন্য। ওজনের দিক থেকে এই দেয়ালগুলো একটু ভিন্ন হয়ে থাকে। বাইরের দেয়ালটা প্রস্থে ১০ ইঞ্চি হয়ে থাকে আর ভেতরের দেয়াল ৫ ইঞ্চিই যথেষ্ট। ঘরের দেয়ালে শুধু কারু কাজই নয় এর আকৃতিগত পরিবর্তন এনেও ডিজাইনে ভিন্নতা আনা যায়। আর দেয়ালের কিঞ্চিত পরিবর্তন আপনার ঘরের আবহাওয়াতেও প্রভাব ফেলবে। ধরুন একটা বড় ঘরকে যখন দেয়াল দিয়ে ভিন্ন করা হয় সেখানে দেয়ালটি পুরো সিলিং পর্যন্ত না টেনে উপরদিকে একটু ফাঁকা রাখতে পারেন। এতে ঘরে আলো বাতাসের সঞ্চালনও ভাল থাকবে। ভেন্টিলেশনের জন্য যে জায়গা দেয়া থাকে সেটাতে চাইলেই একটু পরিবর্তন আনতে পারেন। একে বলে ঘুলঘুলি। একটু লম্বা একটা পাইপ আকৃতির অংশ ঘর থেকে বাইরের দিকে দিয়ে এই ঘুলঘুলি তৈরি হয়। ঘরের দুদিকে দুটা ঘুলঘুলি থাকলে এসি ছাড়াই ঘর ঠান্ডা থাকবে। ঘরে এমন কিছু দেয়াল থাকে যেগুলো মূলত ঘরের মুল অলংকরণের অংশ। যেমন ড্রইংরুমের যে কোন এক পাশের একটি দেয়াল। ডাইনিং এর মুখোমুখি একটি দেয়াল কিংবা বেডরুমে খাটের পেছন দিকের একটা দেয়াল। ভাড়া বাড়িতে এধরনের দেয়াল চিহ্নিত করা খুব কঠিন। তবে বাড়ি নিজের হলে তৈরির সময়ই এসব দেয়াল বাড়তি যত্নে তৈরি করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে খবু সহজেই যেটা করতে পারেন সেটা হচ্ছে দেয়ালে আস্তরণ বা প্লাষ্টার না দেয়া। এতে বাদবাকি দেয়াল থেকে ওই দেয়াল একটু ভিন্ন থাকবে। এছাড়া সামর্থ্য থাকলে একটা দেয়াল সিরামিক ইটেও তৈরি করতে পারেন। দেয়ালে দু’একটা এন্টিক মুখোশ বা কাঠের ফ্রেমে বাধাঁনো চমৎকার পেইন্টিংসও রাখতে পারেন। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে, দেয়াল সাজাতে গিয়ে এর কার্যকারিতা যেন না হারিয়ে যায়।
এমএইচ মিশু
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, আগস্ট ১১, ২০০৯
Leave a Reply