বসনের ঐশ্বর্য যেমনই হোক সাথে মানানসই অলংকার যেন নারীদের অহংকারের অংশ। রূপসজ্জ্বায় যুগে যুগে তাই গয়না ছিল নারীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে। শরীরের নানা অংশে নানা আকৃতির গয়নার প্রচলন আছে আমাদের এই দেশে। এসব গয়না প্রতিটি নিজের জায়গা থেকে স্বকীয়। কিন্তু সারা গায়ে ভর্তি গয়নার মাঝে একজোড়া গয়না থাকে যা কিনা বেজে চলে রিনঝিন সুরে। সেটি নূপুর। নিটোল পায়ে একজোড়া নূপুর রমণীর পায়ে রিনঝিন সুরে মাতিয়ে তুলতে পারে জগৎ সংসার। রমণীর পায়ের নূপুর কখনো সুর তোলে তার মনের আনন্দ কথার। আবার বিষাদের সময়ও নূপুর বেজে চলে বেদনার সুরে। রবীন্দ্রনাথের গল্প-উপন্যাস থেকে শুরু করে এযুগের কপ্রি পড়া আধুনিক মেয়ে সবারই পদযুগল সাজায় নূপুর। পায়ের জন্য এই নিখুঁত অলংকার নিয়েই কড়চা’র এবারের মূল ফিচার লিখেছেন এমএইচ মিশু
হাঁটতে গেলে আওয়াজ করে এমন গয়না হওয়াতে অনেক বাঙালি বাড়িতে একসময় নূপুর ছিল নিষিদ্ধ। একটা সময় ছিল যখন নূপুরের জায়গা ছিল শুধুমাত্র নৃত্যশালায়। ধীরে ধীরে নূপুর উঠে এসেছে বাঙালিদের ঘরে ঘরে। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে মধ্যবয়সী সবার পায়ে এখন নূপুর সাজে। হাল সময়ে নুপুরের জনপ্রিয়তা বুঝি একটু বেশিই বেড়ে গেছে। এর কারণ হলো পরিধানের পোশাকে কিছুটা পরিবর্তন। মেয়েদের সালোয়ার, প্যান্ট, জিনস সবকিছুই এখন দৈর্ঘ্যে কিছুটা সংকুচিত। ফ্যাশনের এই নতুন ধারায় গা ভাসিয়েছেন সবাই। জিনস্টাকে গুটিয়ে উপরে তুলে রাখা, সালোয়ার একটু খাটো করে তৈরি করা, আর থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট পরা এসবকিছুই এখন ফ্যাশনের অংশ। আর যেখানে পায়ের অনেকটা অংশই উন্মুক্ত সেখানে খালি পা সাজাতে একচিলতে নূপুর না হলেই নয়।
নূপুরের ধরন
একসময় নূপুর দু’পায়ে একই ডিজাইনে জোড়া বেঁধে পরার রেওয়াজ থাকলেও হাল ফ্যাশনে নূপুরের আচরণটা কিন্তু একটু ভিন্ন। এখন এক পায়ে পাঁচ ছয়টা নূপুর ঝোলানোও স্টাইলের পর্যায়ে পড়ে। নূপুরের এক পায়ে উঠে আসার স্টাইলটা ঢাকাতে পুরনো। চিকন, সুক্ষ্ম কাজের এসব নূপুর অনেকেই ২/৩টা পেঁচিয়ে পায়ে জড়িয়ে থাকেন। তৈরি উপকরণের হিসেবে নূপুর বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। স্বর্ণের দাম আকাশচুম্বি হওয়াতে সোনার নূপুর এখন অনেকটাই উপন্যাসের পাতায় ঠাঁই পেয়েছে। আর সেখানে জায়গা করে নিয়েছে রুপা, ইমেটেশন সহ আরো নানা উপকরণের নূপুর। ঢাকাতে স্বর্ণের নূপুরের তুলনায় ইমেটেশনের নূপুরই বেশি জনপ্রিয়। খুব জমকালো নূপুরের ডিজাইনের প্রচলন এখন আর নেই বললেই চলে। এখন নূপুরের স্টাইলটা খুব হালকা ধরনের। সাথে থাকতে পারে পুঁতি, স্টোন, কৃত্রিম মুক্তা আর ইমেটেশনের নানান ইলাস্ট্রেশন। এছাড়া স্বর্ণের নূপুরগুলোও ডিজাইনে অনেকটাই হালকা হয়ে এসেছে। কিছু পুঁতি আর মিনার কাজ করা নূপুর মানিয়ে যাবে যে কোন পোশাকের সাথে।
কোথায় পাবেন নূপুর
যদি স্বর্ণ কিংবা রুপার নূপুর কিনতে হয় তাহলে যেতে হবে সোনারুর দোকানে। ঢাকার চাঁদনী চক, মৌচাক, তাঁতিবাজার, বাইতুল মোকাররম আর বড় সবগুলো শপিং মলেই আছে কম বেশি স্বর্ণের দোকান। যেখানে স্বর্ণ বা রুপার নূপুর কিনতে পাওয়া যাবে। এছাড়া ক্যাটালগ দেখে কিংবা নিজের ডিজাইন অনুযায়ী অর্ডার করেও তৈরি করতে পারেন নূপুর। সেজন্য যেতে পারেন বাইতুল মোকাররম কিংবা তাঁতিবাজার এলাকায়। যদি ইমিটেশনের নূপুর কিনেত হয় যেতে পারেন ঢাকার যে কোন শপিং মলগুলোতে। সব শপিংমলই কম বেশি ইমেটেশনের গয়নার দোকান থাকে। তবে যারা নূপুরে বিশেষ ধরনের স্টোন বা ডিজাইন ব্যবহার করতে চান তারা যেতে পারেন বসুন্ধরা সিটির নিচতলায় ইরানি ইম্পোরিয়ামে। এছাড়া ঢাকার অন্যতম প্রসিদ্ধ ইমেটেশন গয়নার দোকান জেমস্ গ্যালারির প্রায় সবগুলো শাখাতেই পাওয়া যাবে নানান আকৃতি ও উপকরণের নূপুর। ইমেটেশন আর স্বর্ণ এর মাঝামাঝিও এক ধরনের নূপুর বাজারে এখন জনপ্রিয় এটি হচ্ছে রুপার নূপুরের উপরে স্বর্ণের ইলেক্ট্রোপ্লেটিং পদ্ধতিতে প্রলেপ দেয়া। এই ধরনের গয়না খুব সহজে রং নষ্ট হয় না পাশাপাশি দামেও তুলনামূলকভাবে স্বর্ণের গয়না থেকে অনেকাংশেই কম। নূপুর যেমনই কিনুন না কেন খেয়াল রাখবেন খুব বিরক্তি শব্দ তৈরি করে এমন নূপুর পায়ে না ঝোলানোই ভালো। পাশাপাশি কেনার সময় দেখে কিনুন আপনার পায়ে যেন নূপুরটি আটসাট হয়ে অস্বস্তিকর ভাব তৈরি না করে।
কড়চা’র জন্য নূপুরের সেশনে এই স্টাইলিশ আর নান্দনিক নূপুরগুলো সরবরাহ করেছে জনপ্রিয় জুয়েলারি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান জেমস গ্যালারি। মডেল ছিলেন সারিকা আর ছবি সাফাওয়াত খান সাফু
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, আগস্ট ০৩, ২০০৯
Leave a Reply