দাম্পত্য নিয়ে খুব মজার একটা কথা প্রচলিত আছে – বিয়ের প্রথম বছরে স্ত্রী বলেন আর স্বামী শোনেন, দ্বিতীয় বছরে স্বামী বলেন আর স্ত্রী শোনেন আর তার পরবর্তী সময়ে দুজনে বলতে থাকেন আর প্রতিবেশীরা শোনেন৷ এটি একটি মজাদার কথা হলেও সম্পর্ক যদি এমন পরিস্থিতিতে আসে বা দাম্পত্য কোন মনের বন্ধন হিসাবে না থেকে শুধুমাত্র অভ্যাসে পরিনত হলে সত্যিই তা সমস্যার সৃষ্টি করে৷ বিবাহিত সম্পর্ক এমন এক সম্পর্ক যা প্রতিদিন নতুন করে গড়ে ওঠে৷ আর এমন সম্পর্কের মাধ্যমে আমরা জীবনের সব থেকে সুন্দর অভিজ্ঞতার সন্মুখীন হয়ে থাকি৷ আপনি যদি এমন পরিস্থিতিতে না পড়তে চান বা এমন সমস্যার সন্মুখীন না হতে চান বা আপনাদের বিবাহিত জীবনের অনেকগুলো বছরেরে পরেও সকলে কাছে আপনারা আদর্শ দম্পতি হিসাবে পরিচিত হতে চান তাহলে কিছু নিয়ম অবশ্যই মেনে চলুন৷ যেমন-
* একে অপরকে গ্রাণ্টেড হিসাবে নেবেন না
আপনি নিজে এমন কিছু করবেন না বা কাউকে এমন কিছু করতে দেবেন যাতে অপর ব্যাক্তি আপনাকে গ্রাণ্টেড হিসাবে নিতে না পারে৷ কারও ওপরে এতটা নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন না যাতে অন্য কাউকে ছাড়া নিজেকে অসুরক্ষিত মনে হয়৷ মনে রাখবেন স্বামী -স্ত্রী একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকেন আর তার সঙ্গে তারা পরস্পরের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে৷ এই সম্পর্কের মধ্যে কেউ বড় বা কেউ ছোট হয় না৷ সম্পর্কের দুটি মানুষই সমান হয়৷ তাদের দুজনের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সমান দৃষ্টিভঙ্গী এবং সন্মান তাদের দাম্পত্য সম্পর্ককে সুন্দর করে তোলে৷ শুধুমাত্র পরস্পরের প্রতি ভালবাসা থাকাই যথেষ্ঠ নয় তার বহিঃপ্রকাশ করা একান্ত জরুরী৷ দাম্পত্য জীবনে শুধুমাত্র একটু ছোঁয়াও অনেক কিছু ব্যক্ত করে যা আপনি আপনার সঙ্গীকে বলতে চান৷
*পরস্পরের জন্য সময় দেওয়া
দাম্পত্য সম্পর্কে পরস্পরকে সময় দেওয়া একান্ত জরুরী৷কিন্তু বর্তমান যুগে স্বামী-স্ত্রীর কাছে পরস্পরকে দেওয়ার মত সময়ই থাকে না৷ নিজেদের কাজ শেষ হওয়ার পরে যতটুকু সময় বেঁচে থাকে তা সংসারের বাকী কাজ বা বাচ্চাদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হয়৷ তাই স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের জন্য কোন সময় থাকে না৷ কিন্তু এভাবে আপনার দাম্পত্যকে সমস্যার মধ্যে নিয়ে যাবেন না৷ যেকোন বিষয়ে দুজনে আলোচনা করে তবে সিদ্ধান্ত নিন৷ দুজনে একে অপরের সুযোগ সুবিধার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখুন৷ শুধুমাত্র সাংসারিক বিষয়ে নয় আপনাদের সন্তানের ক্ষেত্রেও দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নিন৷ আপনার বাড়িতে কখনও অফিসের কাজ নিয়ে আসবেন না৷ য্খন আপনি বাড়িতে থাকবেন তখনকার সময়টা বাড়ির জন্যই দিন৷ আর সর্বদা মনে রাখবেন আপনার ব্যক্তিগত জীবনে কোন সমস্যা দেখা দিলে আপনি আপনার সঙ্গীর সঙ্গে সেই সমস্যা নিয়ে আলোচনা করুন এবং সব সমাধানের পথ একসঙ্গে খুঁজে বার করার চেষ্টা করুন৷ কখনোই কোন সমস্যা পরস্পরের কাছে লুকিয়ে রাখবেননা৷
* বিয়ে সম্বন্ধীয় আইন সম্পর্কে জেনে নিন
বিবাহ আইন সম্বন্ধে জেনে রাখা প্রয়োজন–কথাটা শুনলে দাম্পত্য সম্পর্কের মধ্যে কোথাও ব্যবসায়িক মাত্রা যুক্ত হযে যায় ঠিকই কিন্তু এই সম্পর্কে জেনে নিলে অনেক সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়৷ সংবিধানে সম্পর্ক নিয়ে যা বলা আছে তা জেনে নেওয়া প্রয়োজন৷ এক রিসার্চ থেকে জানা যায় আজকের শিক্ষিত সমাজের প্রায় 70 শতাংশ দম্পতি তাদের বিবাহিত সম্পর্ক বিষয়ক আইন সম্পর্কে কিছু জানেন না৷ তারা বিয়ে বা ডাইভোর্স সমপর্কিত বিষয়ক কোন তথ্য তারা জানেন না৷ হতে পারে আজকে আপনার দাম্পত্য ঠিক আছে কিন্তু পরবর্তী কালেও যে তা সুরক্ষিত থাকবে বা আপনার জীবনের সঙ্গী যে আপনাকে সারা জীবন সঙ্গ দেবে এমন নিশ্চয়তা কিন্তু কেউ কখনও দিতে পারে না৷ তাই আগে থেকেই বিবাহ আইন সম্পর্কে আর দাম্পত্য সম্পর্কিত অধিকার সম্পর্কে জেনে রাখুন৷
* দায়িত্ব এবং দাম্পত্য
যেকোন দম্পতির জীবনে দাম্পত্য সম্পর্ক সবথেকে কঠিন সম্পর্ক৷ আর এই সম্পর্কের মধ্যে সবথেকে কঠিন সময় আসে যখন সন্তানের জন্ম হয়৷ এই সময়টা দাম্পত্য সম্পর্কের সব থেকে আনন্দদায়্ক এবং গুরুত্বপূর্ণ সময় ৷ শুধু তাই নয় এই সুন্দর অনুভুতির সঙ্গে সঙ্গে নতুন দায়িত্বও চলে আসে দম্পতির জীবনে৷ য্খন কোন দম্পতির জীবনে প্রথম সন্তান আসে তখন তাদের কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল সন্তানের আগমনের অপেক্ষা করা৷ তাদের কাছে তখন অন্য সব কিছুই গৌণ হয়ে যায়৷ কিন্তু এটি এমন সময় য্খন দম্পতির পরস্পরের জন্য সময় বের করা একান্ত জরূরী হয়৷ বাচ্চা জন্মানোর সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চার দেখাশোনার কাজ উভয়ে একসঙ্গে করুন৷ তাতে শুধু বাচ্চার দেখাশোনা নয় আপনাদের পরস্পরের সঙ্গে সময় কাটানোও হবে৷ কারণ সব দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সঙ্গে দাম্পত্য জীবনের মানুষটির জন্য সময় দেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ কাজ৷
* পরস্পরের প্রতি সপ্রশংস দৃষ্টি
অন্তরঙ্গ মুহুর্ত ছাড়াও পরস্পরের প্রশংসা করুন৷ শুধু একাকীত্বে নয় সকলের সামনে আপনার জীবন সঙ্গীর প্রশংসা করুন৷ মনে রাখবেন কেউ সর্বগুণ সম্পন্ন হয় না আবার কারও সবটাই খারাপ হয় না৷ প্রত্যেকের ব্যক্তিত্বতে ভালো দিক থাকে তা আরও বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করুন৷ পরস্পরকে কাজে উত্সাহিত করে তুলুন৷
* সামাজিকতা মনে রাখুন
সামাজিক সম্পর্ক ঠিক থাকলে ব্যাক্তিগত সম্পর্কও ঠিক থাকে৷ বিয়ের পরেও পুরানো বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজনের জন্য সময় দিন৷ সামাজিক কোন আনুষ্ঠানে একসঙ্গে যান৷ পরস্পরের আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মেলামেশা করুন৷ প্রত্যেকের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন৷
এই প্রকার কিছু টিপস আপনি আপনার দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে মেনে চলুন, দেখবেন আপনাদের সম্পর্ক পরিচিত সকলের কাছে আদর্শ উদাহরণ হয়ে উঠবে৷
বৃহস্পতিবার, 20 নভেম্বর 2008
সূত্রঃ ওয়েবদুনিয়া.কম
Leave a Reply