ক্লাচ ব্যাগ। এক বছর আগেও এর জনপ্রিয়তা এবং চাহিদা ছিল নির্দিষ্ট একটি সীমারেখার মধ্যে। তবে পরিবর্তিত ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমানে তৈরি হয়েছে এর বিপুল চাহিদা। চার কোনা, আকারে ছোট, পাঁচ আঙ্গুলের ভেতর ধরে রাখার এই ব্যাগটির আগমন হয়েছে পাশ্চাত্য দেশ থেকে। এ সম্বন্ধে আড়ংয়ের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ সাদিয়া হক জানান, পাশ্চাত্য দেশে এটি ব্যবহার করা হয় উৎসবমুখী ব্যাগ হিসেবে। গত এক বছরে এটি আমাদের দেশেও ফ্যাশন উপকরণ হিসেবে অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে।
ভিন্ন বৈশিষ্ট্য
ক্লাচ ব্যাগের কিছু বৈশিষ্ট্য একে দিয়েছে আভিজাত্য। উল্লেখ্য, এটি শুধু দাওয়াত কিংবা অনুষ্ঠানে ব্যবহার করার জন্যই। খুব ছোট এবং টুকিটাকি জিনিসই আপনি বহন করতে পারবেন এতে। অনেক সময় আপনার প্রিয় মোবাইল ফোনসেটটিও জায়গা পাবে না এতে, কারণ এর আকার ছোট।
সাদিয়া হক মনে করেন, ক্লাচ ব্যাগগুলো আভিজাত্যের প্রতীক। দাওয়াতে কিংবা বিভিন্ন উৎসবমুখী জায়গায় অন্যান্য ব্যাগের চেয়ে ক্লাচটাই বেশি গ্রহণযোগ্য এখন। এ কারণেই বোধহয় ক্লাচটাকে শুধু ব্যাগ নয়, ফ্যাশনের রুচিসম্পন্ন উপকরণ হিসেবেও নেওয়া হচ্ছে।
পছন্দের তালিকায় ক্লাচ ব্যাগ
কিছুদিন আগেও জমকালো উপলক্ষের ব্যাগ বলতে বোঝানো হতো অন্য নকশার ব্যাগকে। কিন্তু এখন দাওয়াতের জন্য পছন্দের ব্যাগটির তালিকায় ক্লাচই প্রাধান্য পাচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না বিয়ের কনের ব্যাগও।
ক্লাচ ব্যাগের চলতি জনপ্রিয়তার কথা এভাবেই বর্ণনা করলেন সাদিয়া হক। অন্যমেলার প্রধান অলংকারক গোবিন্দ চন্দ্র দাস ক্লাচের বাড়তি চাহিদার কথা স্বীকার করলেন। তিনি বলেন, প্রত্যেকেই চায় বর্তমান স্টাইলের সঙ্গে চলতে। পাশ্চাত্য দেশ থেকে এলেও এখন অনেকটাই আমাদের ফ্যাশনে মানিয়ে নিয়েছি। দেশীয় পোশাক ও সাজের সঙ্গেও বেশ জনপ্রিয় ক্লাচ ব্যাগ।
হাতে নিন অভিজাত ভঙ্গিমায়
ছোট হোক বড় হোক, অনুষ্ঠানমাত্রই নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা। সেখানে ক্লাচ ব্যাগটি বগলদাবা করে হন্ হন্ করে হেঁটে বেড়ালে অনেকটাই হাস্যকর লাগবে দেখতে। হাতলবিহীন ব্যাগ বলে অনেকেই দ্বন্দ্বে পড়ে, কীভাবে নেবে। বিশেষভাবে বানানো অনুষ্ঠানভিত্তিক এই ব্যাগগুলো হাতে নেওয়ার ভঙ্গিগুলোও হতে হবে অভিজাত। সে ক্ষেত্রে দরকার একটু সচেতনতা।
শাড়ির সঙ্গে ব্যাগটি ধরবেন একটি হাতে। হাতটি কনুই থেকে ভাঁজ করে ওপরের দিকে তুলে ধরা উচিত এ ক্ষেত্রে। ব্যাগটির নিচের অংশ তালুর ওপর রাখবেন। এবার পাঁচটি আঙ্গুল দিয়ে ব্যাগটি আলতোভাবে ধরে রাখুন। দেখলে যেন মনে হয়, ব্যাগটি অভিজাত ভঙ্গিমায় নিজেকে তুলে ধরেছে আপনার হাতের মধ্যে।
সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে ব্যাগটির বহন ভঙ্গিমা হবে একটু ভিন্ন। একইভাবে হাতের মধ্যে ধরতে হবে। তবে হাতটি নিচের দিকে সোজা করেই রাখুন। দেখতে ভালো লাগবে। তবে বৈচিত্র্য আনতে মাঝেমধ্যে হাতটি কনুই থেকে ওপরের দিকে তুলে ধরা যেতে পারে।
পাশ্চাত্য পোশাকের সঙ্গে ক্লাচ ব্যাগটি ধরতে হবে দুই হাত দিয়ে। তবে আঁকড়ে ধরে আছে, এই ভঙ্গিমায় নয়। দুই পাশের শেষ প্রান্ত দুটি আলতোভাবে দুই হাত দিয়ে ধরলেই হবে। তবে এক হাতে ব্যাগটি নিয়ে অন্য হাতটি যদি কথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাড়াচাড়া করা হয়, মন্দ লাগবে না দেখতে, এমনটি মনে করছেন সাদিয়া হক।
মিলিয়ে পরুন পোশাকের সঙ্গে
পোশাকের সঙ্গে নেওয়া ক্লাচটির বৈপরীত্য না হলে অর্ধেক সাজটাই মাটি। রং ও নকশার দিকে শুধু নজর দিলে হবে না। খেয়াল রাখতে হবে মাপ ও টেক্সচারটির দিকেও। যেমন ধরা থাক জামদানি কাপড়ের কথা। জামদানি কাপড়ের খসখসে ভাব ও নকশার সঙ্গে ভালো মানাবে ডুপিয়ান অথবা সিল্কের কাপড় দিয়ে তৈরি ক্লাচটি। সে জন্য জামদানি শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজের সঙ্গী হোক এ ধরনের ক্লাচ।
অন্যদিকে মসলিনের শাড়ি অথবা শিফনের শাড়ির জন্য মানানসই লেসের নকশায় সজ্জিত ক্লাচ। শাড়ির স্বচ্ছতার সঙ্গে লেসের আঁকাবাঁকা নকশা ভালোই জমবে। তবে পাশ্চাত্য পোশাকের জন্য মানানসই চামড়ার তৈরি ক্লাচ। এতে দুটোর মধ্যেই কমনীয়তা কম খুঁজে পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে বিয়োগে বিয়োগে যোগফলই হবে।
খেয়াল রাখুন
— শাড়ি ও সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে আকারে একটু ছোট ক্লাচ নিন।
— পাশ্চাত্য পোশাকের সঙ্গে আকারে লম্বা ক্লাচ মানাবে।
— নকশায় শাড়ির কাজ ভারী হলে ব্যাগটির নকশা যেন হালকা হয়।
— রঙের ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব বৈপরীত্য আনুন।
সব বয়সের জন্য নয়
আভিজাত্য তো বটে, একটু ভারিক্কি ভাবও আছে বইকি এ ব্যাগগুলোতে। এ কারণেই কৈশোরের দুরন্তপনার সঙ্গে ঠিক মানানসই নয় ক্লাচ। বরং কৈশোর পার হোক, তারুণ্যের জয়গান শুরু হোক, তখনই বেশি মানানসই এটি অর্থাৎ ২০ কিংবা ২১ বছর। গোবিন্দ চন্দ্র দাস এ প্রসঙ্গে জানান, ষাটোর্ধ্ব নারীরাও অনায়াসে এ ব্যাগটি ব্যবহার করতে পারেন।
তবে ক্লাচ ব্যাগ তাদেরই ব্যবহার করা ভালো, যারা এটি বহন করতে পারবে। এখানে বয়সের তুলনায় আত্মবিশ্বাসটাই মূল। আপনার ব্যক্তিত্ব ফুটে ওঠার সঙ্গেই মিলিয়ে আছে ব্যাগটির সৌন্দর্য। স্টাইল ও ্নার্টের যৌথ মিলনমেলাই হবে ক্লাচের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
উপকরণ
বাংলাদেশে হাতেগোনা কিছু বুটিক-বাড়িতে তৈরি করা হচ্ছে এ ব্যাগগুলো। প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী দেওয়া হচ্ছে নকশা। সাদিয়া হক জানান, সিল্ক ও ডুপিয়ান কাপড় দিয়ে রুচিসম্পন্নভাবে বানানো হচ্ছে ব্যাগগুলো। পাশাপাশি ব্যবহার করা হচ্ছে লেস কর্ড এবং চামড়া, তামা, চুমকি, পাথর দিয়ে সাজানো হচ্ছে ব্যাগগুলোকে।
দাওয়াতের জন্যই বানানো বিশেষ নকশায় এ ব্যাগটি। এ কারণে রংগুলোও হয় জমকালো। কালো, কালচে লাল, সোনালি, রুপালি, গাঢ় নীল, তামাটে প্রভৃতি রঙেই রাঙানো হচ্ছে ব্যাগগুলোকে।
সাধারণত দুটো আকারে পাওয়া যাচ্ছে ব্যাগগুলো। চার কোনা আকারের লম্বায় ছোট এবং বড় মাপের। হাতে নিয়ে স্বচ্ছন্দ বোধ হয়, এমন মাপেরটাই কেনা উচিত।
যত্নে থাকুক আপনার ব্যাগটি
নমনীয় এ ব্যাগগুলোর জন্য দরকার বিশেষ সচেতনতা। গোবিন্দ চন্দ্র দাস বলেন, সব সময় হাতের মধ্যে ধরে রাখতে হয় বলে ময়লা লেগে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। শুধু ড্রাই ওয়াশ প্রযোজ্য এ ব্যাগগুলোর ক্ষেত্রে। কারণ ব্যাগগুলো তৈরি করা হয় সিল্ক কাপড় অথবা ভারী কাজ দিয়ে।
লক্ষ রাখা দরকার ব্যাগটি বন্ধ ও খোলার সময়ও। ছোট এবং বিশেষ নকশায় বানানো ব্যাগের ক্লাচ এবং খোলার জায়গাটি অনেকটাই নমনীয়। তাই প্রয়োজন ছাড়া বারবার খোলার কারণে ভেঙেও যেতে পারে।
দাওয়াত থেকে ফিরে ব্যাগটি শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে ফেলতে হবে। এরপর পাতলা কাগজ অথবা বিশেষ পলিথিনের ভেতর মুড়িয়ে রাখুন, যত্নে থাকবে আপনার ব্যাগটি। নেপথলিন রাখতে ভুলবেন না আলমারির ভেতর।
কোথায় পাবেন
আড়ং
বিভিন্ন আকার ও মাপে এখানে পাওয়া যাচ্ছে ব্যাগগুলো। দাম ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা।
মায়াসির
এক হাজার ২৫০ থেকে এক হাজার ৬৫০ টাকা এখানকার ব্যাগগুলোর দাম।
অন্যমেলা
৩৮৫ টাকায় আকর্ষণীয় রঙে পাওয়া যাচ্ছে এখানকার ক্লাচগুলো।
চাঁদনী চক
চাঁদনী চকের তৃতীয় তলায় দু-তিনটি দোকানই পাওয়া যাবে শুধু ক্লাচ ব্যাগের।
ভারী কারুকার্যে ভরা ব্যাগগুলো ৫০০ টাকায় পাওয়া যেতে পারে অথবা খরচ করতে হতে পারে এক হাজার টাকাও।
রয়া মুনতাসীর
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ২৮, ২০০৯
Leave a Reply