বর্ষা মৌসুম চলছে। মেঘের পর মেঘ জমেও বৃষ্টি হয় না। কখনো একপশলা হালকা বৃষ্টি, আবার কখনো অঝোর বর্ষণ। এর মধ্যে সাত দিন বৃষ্টি ছিল। এরপর আবার খরা। অর্থাৎ বৃষ্টির যন্ত্রণা আর হাহাকার চলছে পালাক্রমে।
বর্ষাকে স্বাগত জানাতে আমরা বসে থাকি, বসে থাকে প্রকৃতি। বর্ষায় গাছপালা তাদের যৌবন ফিরে পায়। চারদিকে পাগল করা সবুজ আর সবুজ। এমন সবুজ সৌন্দর্য ক্যামেরাবন্দী না করে কি উপায় থাকে! এমনি একদিন আমি আর আমার প্রকৃতিপ্রেমিক এক বন্ধু বের হলাম, গেলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান উদ্যানে। বর্ষার পরিবর্তন চোখে পড়ল। বর্ষা প্রকৃতির রং ভরা বর্ণে চোখ জুড়িয়ে দিল। এখানে রুটি ফল দেখে মুগ্ধ হলাম। টেককা ফুল চমৎকার ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে। ছোট গামলায় বড় মাখনার পাতা, নীল রঙের ঝুমকো লতা উঁকি দিচ্ছে, সঙ্গে চালতা ফুল ও উলট চণ্ডাল। উলট চণ্ডালের এত চমৎকার ফুল আর কোথাও ফোটে বলে মনে হয় না।
এভাবেই ঘুরতে ঘুরতে চোখ আটকে গেল ছোট্ট একটি গাছে। গাছ ও ফুল দেখে আমি চমকিত। এ যে দেখছি চামেলি ফুল! গাছের পাতা ভালো করে পরখ করে ও উদ্যানের প্রধান মালী সালাউদ্দিনের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হলাম, চামেলিই বটে!
ছোটবেলায় স্কুলের প্রথম পাঠ ছিল অনেক বিষয়ের মতোই পাঁচটি ফুলের নাম শেখা। পাঁচ ফুলের নাম শিখতে গিয়েই চামেলির সঙ্গে প্রথম পরিচয়। চামেলি আমাদের দেশের জনপ্রিয় একটি ফুল। খুব বেশি প্রচলিত এ ফুলের নামের সঙ্গে পরিচয় ঘটলেও এর দেখা সহজে পাইনি। মালতী, লতাবেলি, বেলি, শারদ মল্লিকা, জুঁই বারবার, বহুবার দেখলেও চামেলি অধরা ছিল বহু দিন। চামেলি ফুলের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানে। নিসর্গী বিপ্রদাশ বড়ুয়া চামেলি খুঁজে খুঁজে হতাশ হয়েছিলেন। দেখা পেয়ে তাই লিখলেন, ‘চামেলির কাছে পরাজয়ে লজ্জা নেই।’ চামেলি ফুল এমনই। একটি অদৃশ্য জনপ্রিয় ফুল। খুব কম লোকই এর দেখা পেয়েছে।
রাজধানী ঢাকায় কয়েকটি চামেলি গাছ রয়েছে। একটি রমনার কালী মন্দিরে। অন্যটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান উদ্যানে, যার কথা এতক্ষণ বলে চলেছি। বলধা বাগানে বহু আগে একটি চামেলি গাছ ছিল। সে গাছটি এখন আর নেই। তবে সেখানে নতুন একটি চামেলি গাছ লাগানো হয়েছে, সাইকিভাগে। কনকসুধার ঠিক পাশে। শুনেছি চামেলী হাউসেও (বর্তমানে সিরডাপ মিলনায়তন) একসময় চামেলি গাছ ছিল, এখন আর নেই।
নিসর্গপ্রেমিক ও উদ্ভিদবিদ্যার শিক্ষক দ্বিজেন শর্মা চামেলি ফুলকে হিমালয়কন্যা বলে অভিহিত করেছেন। চামেলি হিন্দি নাম। ফুলের সেই হিন্দি নামটিই আমাদের দেশে প্রচলিত ও জনপ্রিয়। তবে বাংলায় কেউ কেউ জাঁতি বলে ডাকে। ইংরেজি নাম জেসমিন। মারমা সম্প্রদায় বলেন বিলাই লোকচারী। চামেলি ফুলটি স্প্যানিশ জেসমিন নামেও পরিচিত। অনেকটা লতানো ধরনের এবং ক্ষুদ্র ও সরু আকৃতির পাতাসংবলিত গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। উচ্চতা দুই থেকে চার মিটার। গাঢ় সবুজ পাতার ছোট ও সুদৃশ্য চামেলির গাছ দেখলেও অভিভূত হতে হয়।
দুধ-সাদা রঙের চামেলি ফুল একেকটি আলাদা করে ফুটে সারা গাছ ছেয়ে যায়। এর স্নিগ্ধ গন্ধ ফুল শুকিয়ে গেলেও পাওয়া যায়। ফুলের চমৎকার সৌরভের জন্যই এর আদর বেশি। পুজোয় ব্যবহারের জন্য এর কদর রয়েছে। এ ছাড়া চামেলির পাতা আয়ুর্বেদিক হারবাল ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। প্রসাধন সামগ্রীতেও এ ফুলের ব্যবহার রয়েছে। সুগন্ধিশিল্পে চামেলি ফুলের চাহিদা পৃথিবীজুড়ে।
চামেলি Oleaceae পরিবারের সদস্য। চামেলির বৈজ্ঞানিক নাম Jasminum Grandiflorum. পাকিস্তানে যাকে বলা হয় ফ্লোরা অব পাকিস্তান। কমপক্ষে ৩০০ প্রজাতির এই চিরহরিৎ বৃক্ষের আদিবাড়ি এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশ।
ফারুখ আহমেদ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ২৮, ২০০৯
tahmina khan shaily
khub valo laglo lekhata pore…tnx farukh vai
shohel
answer ta pabo na