বাজেটের আগে বাজেটের পরে অর্থনীতিতে যে পরিবর্তন আছে, তার প্রভাব পড়ে আমাদের জীবনযাত্রায়। আর নিত্যপণ্যের দাম তো দিন দিন বাড়তেই থাকে। এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেই সব চাহিদা পূরণ করে কীভাবে অর্থ সাশ্রয় করা যায় তা জানিয়েছেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ফিরোজা সুলতানা। তিনি জানান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে সংসারের খরচ বাঁচানোর জন্য কৌশলী হতে হবে।
ছোট ছোট খরচ বাঁচিয়ে আপনি অর্থ সাশ্রয় করতে পারবেন। এ জন্য মিতব্যয়ী হতে হবে। সংসারের খরচ বাঁচাতে মাসের শুরুতেই করতে হবে পরিকল্পনা। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্থ সঠিক খাতে ব্যয় করা যায়। তখন চাহিদা পূরণের পাশাপাশি সঞ্চয়ও গড়ে ওঠে।
মাসের শুরুতেই সংসারের বাজেট
প্রথমেই সংসারের সম্ভাব্য আয়, পরিবারের সদস্যদের রুচি ও চাহিদা জেনে নিন। সে অনুযায়ী খরচের একটি খসড়া তৈরি করুন। খসড়াটি নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করুন। মাসের শুরুতেই প্রতিটি খাতের বরাদ্দ করা অর্থ আলাদা করুন। প্রতি মাসে খরচ এক রকম হয় না। যে খাতের অর্থ ব্যয় হলো না, তা জমা করে রাখুন। কোন জিনিসটি বেশি প্রয়োজন, তা নিজেই ঠিক করুন। এভাবে বাড়তি খরচ কমিয়ে ফেলা যায়।
পরিবারের সদস্যদের খাদ্যাভ্যাস বদলানোর চেষ্টা করুন। শুধু মাছ, মাংস না খেয়ে শাকসবজি খাওয়ার প্রতি আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করুন। এ ছাড়া রান্নার পদও কমিয়ে খাওয়ার প্রতি আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করুন। এতে আপনি বাজেটের মধ্যেই সবকিছু সম্পন্ন করতে পারবেন।
লেখাপড়ার ক্ষেত্রে কোনো হিসাব চলে না। কিন্তু এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক অন্যান্য জিনিস ক্রয়ের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হোন। যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকুই কিনুন।
চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ অর্থ আগেই আলাদা করুন। বিশেষ করে, ঘরে যদি অসুস্থ রোগী বা বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থাকেন, তবে তাঁদের জন্য আলাদা খাত করুন।
অনেক সময় দোকানে পোশাক পছন্দ হওয়ামাত্রই কিনে ফেলি। এটি না করে প্রয়োজনীয় পোশাকটি কেনা উচিত।
স্যান্ডেল, জুতা আর ব্যাগের ক্ষেত্রে এমন রং-নকশা বেছে নিন, যাতে তা অনেকগুলো পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায়।
এ ছাড়া টেলিফোন, মোবাইল ফোন, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি ব্যবহারে সচেতন হোন। এতে অপচয় হ্রাস পাবে, অর্থেরও সাশ্রয় হবে।
কেব্ল টিভি, ইন্টারনেট বিলসহ সব বিল সময়মতো পরিশোধ করুন, যাতে জরিমানা দিতে না হয়। তা না হলে এতে বাড়তি খরচ হয়।
মাসের বাজারে কম পরিমাণে জিনিস না কিনে একসঙ্গে বেশি পরিমাণে কিনুন। কেননা একসঙ্গে জিনিস কিনলে অর্থ সাশ্রয় হয়। বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে জিনিস কিনুন। এগুলোতে বিশেষ ছাড় থাকে। তবে পচনশীল দ্রব্য প্রয়োজন অনুসারেই কেনা উচিত।
আতিথেয়তার জন্য আলাদা অর্থ বরাদ্দ রাখুন। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের উপহারসামগ্রী কেনার ফলেও বাজেটের বাইরে অর্থ খরচ হয়ে যায়। তখন অন্যের থেকে ধার না করে নিজের সঞ্চয় থেকে খরচ করা উচিত।
সাধ ও সাধ্যের মধ্যে সংসার পরিচালনা করতে পরিবারের সবারই সঞ্চয়ী মনোভাব গড়ে তোলা উচিত। এতে সংসারে সচ্ছলতা থাকবে, অর্থও সাশ্রয় হবে।
তৌহিদা শিরোপা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ২৮, ২০০৯
Leave a Reply