প্রতিদিন নিয়ম করে ঝেঁপে বৃষ্টি না হলেও বর্ষাকালে হঠাৎ বৃষ্টি তো হচ্ছেই। আচমকা ঝুপঝুপ বৃষ্টিতে ভিজে অনেকেই বিড়ম্বনায় পড়ে। আবার অনেকেই আছে, বর্ষাকালে শখ করে একটু বৃষ্টিতে ভিজবে না, এমনটি ভাবতেই পারে না। সবকিছুর সঙ্গে চুলও ভিজে তখন একদম চুপচুপে! কাপড় না-হয় শুকানো গেল, নিজেও ঠিকঠাক পরিষ্কার হওয়া গেল, কিন্তু ঠিকমতো পরিচর্যা না হলে চুল চটচটে হয়ে থেকে ভীষণই অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়ায়। উপরন্তু এবারকার বর্ষার আর্দ্রতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভাপসা গরম। একদিকে বৃষ্টির পানি, অন্যদিকে যখন বৃৃষ্টি নেই, তখনকার স্যাঁতসেঁতে গুমোট আবহাওয়া-সব মিলে এই বর্ষায় চুলের জন্য প্রয়োজন সঠিক যত্ন।
যতই হোক না ঋতুবৃষ্টিতে ভেজা, চুল হওয়া চাই ঝরঝরে। খুব সহজেই কী করে নেবেন চুলের যত্ন, তার উপায় বাতলে দিলেন এলিগেন্স হেয়ার অ্যান্ড বিউটির কর্ণধার নিপা মাহবুব।
নিপা জানান, বর্ষাকালে চুল খুব চিটচিটে হয়ে যায়। আর্দ্রতার কারণে চুলের একটি বড় সমস্যা হলো খুশকি। ভেজা আবহাওয়ায় মাথার স্ক্যাল্প বা তালুও আর্দ্র হয়ে পড়ে। চুলে ময়লা বেশি হয় ও আর্দ্রতার জন্য তা চুলের গোড়ায় জমে চুলকে আঠালো করে দেয়। বেড়ে যায় খুশকির প্রকোপ। তাই বর্ষাকালে চুল সুন্দর রাখার মূল শর্তটিই হলো নিয়মিত চুল পরিষ্কার করা এবং অবশ্যই চুল শুকনো রাখা।
চুল ধোয়া ও শুকানো
প্রতিবার বৃষ্টির পানিতে চুল ভিজে যাওয়ার পরই যত দ্রুত সম্ভব শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন।
নিয়মিত শ্যাম্পু করুন চুলে, তারপর কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
কন্ডিশনার কখনোই চুলের গোড়ায় বা স্ক্যাল্পে লাগাবেন না।
হেয়ার ড্রায়ারের চেয়ে ফ্যানের বাতাসেই চুল শুকিয়ে নেওয়া ভালো। চুল শুকানোর জন্য হেয়ার ড্রায়ার যদি ব্যবহার করতেই হয়, তবে চুলের দু-তিন ইঞ্চি দূরে ধরুন ড্রায়ার। অতিরিক্ত তাপ চুলের জন্য ক্ষতিকর। তাই ড্রায়ারের মাইল্ড হট বা হালকা গরম বাতাস দিয়ে চুল শুকান।
খুশকি দূর করতে
খুশকি কমাতে ব্যবহার করতে পারেন ভেষজ উপাদান। যেমন-মসুর ডাল বেটে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে শ্যাম্পু করে নিন।
মসুর ডাল ভিজিয়ে সেই পানি দিয়েও চুল ধুয়ে নিতে পারেন শ্যাম্পুর আগে।
খুশকি থাকলে অবশ্যই অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।
খুশকির জন্য চুলের স্পা করা বাসায় একটু কঠিন হবে। তবে প্রায় স্পার মতোই যা করতে পারেন তা হলো হট টাওয়েল ট্রিটমেন্ট। হালকা গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে কিছুক্ষণ চেপে রাখুন পুরো মাথায়। এ রকম কয়েকবার করুন। এতে খুশকি নরম হয়ে আসবে এবং পরিষ্কার করতে সুবিধে হবে।
ঝলমলে চুল পেতে
বাজারে কিনতে পাওয়া যায় চুলের টোনার। বাসায়ও তা বানাতে পারেন। পেঁয়াজের রস খুব ভালো টোনার। পেঁয়াজের রসে তুলা ভিজিয়ে পুরো স্ক্যাল্পে লাগান। তারপর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
— পেঁয়াজের রস, একটি ডিম ও লেবুর রসের মিশ্রণে তৈরি করতে পারেন চুলের প্যাক।
— চুলে উজ্জ্বলতা আনতে ব্যবহার করতে পারেন হেয়ার সেরাম। বাজারে পাবেন নানা ধরনের সেরাম, যা শ্যাম্পু ও কন্ডিশনারের পর লাগাতে হবে চুলে।
— আমলা, শিকাকাই, ডিম ও লেবুর রসের প্যাক চুলের জন্য বেশ উপকারী।
— শুধু ডিম ও লেবুর রস মিশিয়েও দিতে পারেন চুলে। তারপর শ্যাম্পু করে নিন। ডিমের সাদা অংশ ও কুসুম দুটোই চুলের জন্য ভালো।
— চিকচিকে ভাব আনতে চুল ধোয়ার পর এক মগ পানিতে একটা লেবুর রস মিশিয়ে চুলে দিন। লেবুর রসের বদলে সাদা ভিনিগারও ব্যবহার করা যেতে পারে।
— জবা ফুল বেটে লাগাতে পারেন চুলের গোড়ায়। এতে চুল মজবুত হয়, কালো হয়।
— শ্যাম্পুর কিছুক্ষণ আগে চুলে তেল ম্যাসাজ করে নিন। এতে রক্ত চলাচল ভালো হবে স্ক্যাল্পে। চুল হয়ে উঠবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। শুধু আঙ্গুলের ডগা দিয়ে ঘড়ির কাঁটার দিক অনুযায়ী ম্যাসাজ করতে হবে। মাথার নিচের দিকে ঘাড়ের ওপর থেকে শুরু করে কপাল পর্যন্ত, আবার কপালের দিক থেকে মাথার পেছন হয়ে নিচের দিকে ম্যাসাজ করুন।
যেকোনো প্যাক বা মিশ্রণ চুলে লাগিয়ে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট রাখতে পারেন। তারপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, চুল যাতে ঘেমে না যায়, অনেকক্ষণ ভেজা না থাকে। তাতে চুল তো চটচটে হবেই, স্ক্যাল্পে চুলকানি, খুশকিসহ আরও নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই চুল আবদ্ধ রাখা যাবে না বেশিক্ষণ।
ছোট চুল খোলা রাখুন, বড় চুলে হালকা খোঁপা করুন বা পাঞ্চ ক্লিপ দিয়ে আটকে নিন। আর ঝরঝরে চুলে ফুরফুরে থাকুন এই বর্ষায়।
ফারাহ শাম্মা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুলাই ২৮, ২০০৯
Leave a Reply